এক মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো মানবিক সহায়তা বা ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। শস্য থেকে শুরু করে নানা জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রবেশেও আছে ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞা। এতে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে গাজার ১০ লাখের বেশি শিশু। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

৫ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গাজার শিশুদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ইউনিসেফের কোনো মানবিক সহায়তাসামগ্রী সেখানে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না ইসরায়েলি সেনারা। এক মাসের বেশি সময় ধরে আটকে আছে এসব সহায়তাসামগ্রী। এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন, যা গাজার শিশুদের জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর।

ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক এডুয়ার্ড বেইগবিডার বলেন, ‘ইউনিসেফের অনেক মানবিক সহায়তাসামগ্রী গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই জীবন রক্ষাকারী। কিন্তু মানুষের জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে এগুলো সংগ্রহশালায় পড়ে আছে। এগুলো কারও ব্যক্তিগত ইচ্ছা নয়, এসব আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে একটি বাধ্যবাধকতা।’

এদিকে অবরুদ্ধ গাজায় সব রকম শস্য প্রবেশ ঠেকানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। গত সোমবার দেশটির একটি দৈনিক সংবাদপত্রকে তিনি বলেন, ‘গমের একটি দানাও গাজায় প্রবেশ করবে না।’

খাবারের কষ্টে শিশুরা

এ বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তারও আগে ২ মার্চ থেকেই ফিলিস্তিনিদের জন্য বরাদ্দ করা মানবিক সহায়তা উপত্যকাটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েল। যুদ্ধ চলার সময়ে গাজায় আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রবেশের ক্ষেত্রে এটা ইসরায়েলের দেওয়া সবচেয়ে দীর্ঘ অবরোধ।

নিষেধাজ্ঞার ফলে গাজায় খাদ্য, নিরাপদ পানি, আশ্রয় ও চিকিৎসার ঘাটতি দেখা দেবে বলে সতর্ক করেছে ইউনিসেফ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় এসব জিনিস ছাড়া নানান অসুখ, অপুষ্টি এবং অন্যান্য প্রতিরোধযোগ্য পরিস্থিতি আরও বাড়বে। বাড়তে পারে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা।

নিষেধাজ্ঞার ফলে গাজায় খাদ্য, নিরাপদ পানি, আশ্রয় ও চিকিৎসার ঘাটতি দেখা দেবে বলে সতর্ক করেছে ইউনিসেফ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় এসব জিনিস ছাড়া নানান অসুখ, অপুষ্টি এবং অন্যান্য প্রতিরোধযোগ্য পরিস্থিতি আরও বাড়বে। বাড়তে পারে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা।

গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলের দেওয়া বাস্তুচ্যুতির আদেশ এবং নির্বিচার বোমা হামলার কারণে বন্ধ হয়ে যায় গাজার ২১টি চিকিৎসাকেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে অপুষ্টিজনিত কারণে চিকিৎসাধীন ছিল ৩৫০ ফিলিস্তিনি শিশু। চিকিৎসাকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় এসব শিশুর স্বাস্থ্যগত ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত ও প্রাণঘাতী হয়ে পড়েছে বলেও জানিয়েছে ইউনিসেফ।

আরও পড়ুনগাজায় এ পর্যন্ত ৩৫টি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল৪ ঘণ্টা আগে

আন্তর্জাতিক সংস্থাটি ধারণা করছে যে মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় পরিপূরক শিশুখাদ্যের সংগ্রহ কমে গেছে। এখন এসব এলাকায় মাত্র ৪০০ নবজাতক শিশুকে খাওয়ানোর মতো ‘রেডি টু ইউজ’ ইনফ্যান্ট ফর্মুলা বা প্রস্তুতকৃত শিশুখাদ্য মজুত রয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, দ্রুততম সময়ে গাজায় ছয় মাসের কম বয়সী প্রায় ১০ হাজার শিশুর জন্য শিশুখাদ্য পাঠাতে না পারলে, খাদ্যের অভাবে পরিবারগুলো অনিরাপদ পানি দিয়ে শিশুদের জন্য বিকল্প খাবার তৈরি করতে বাধ্য হবে।

আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের আওতায় নিজেদের দায়বদ্ধতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যেন অন্তত গাজাবাসীর মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ নিশ্চিত করা হয়।—এডুয়ার্ড বেইগবিডার, ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক।

শুধু তা–ই নয়, চলমান সংঘাত ও বাস্তুচ্যুতির কারণে গাজায় বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য ও মনঃসামাজিক সহায়তা, শিশুদের সুরক্ষাবিষয়ক নানান কার্যক্রম সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে ইউনিসেফ। সংস্থাটি বলছে, অবরোধের কারণে এক হাজার বিশেষভাবে সক্ষম শিশুর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক খেলাধুলার সামগ্রী সরবরাহ করাও সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুনগাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা৮ ঘণ্টা আগেইসরায়েলের বোমার আঘাতে গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন স্বজনেরা। সেই শোকে হতবাক এক ফিলিস্তিনি শিশুর চোখে জল। তাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছেন এক নারী.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ইউন স ফ র দ র জন য প রব শ

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনে শিকারিদের হামলায় বন কর্মকর্তা আহত

সুন্দরবনে হরিণ শিকারীদের হামলায় পূর্ব বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব আহত হয়েছেন। সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ডিমেরচর এলাকায় হামলা করা হয়। পরবর্তীতে তিন শিকারিকে আটক করেছে বনরক্ষীরা। 

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল্লাহ জানান, হরিণ শিকারিদের আক্রমণে একজন বন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। হামলাকারীদের তিনজনকে আটক করা হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

হরিণ শিকারের ফাঁদে আটকা পড়ল বানর

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে ৮ ফুট লম্বা অজগর অবমুক্ত

তিনি আরো জানান, বন বিভাগের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তারা অভিযোগ দিলে এবং আসামিদের হস্তান্তর করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আটকরা হলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার সুগন্ধি গ্রামের রাফি হাসান (২৬), রামপাল উপজেলার সোনাতুনিয়া গ্রামের শহিদ মল্লিক (২৮) ও একই উপজেলার ঝালবাড়ি গ্রামের আল আমিন আকুঞ্জি (২৭)।

আহত সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেব বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণি রক্ষা ও হরিণ শিকাররোধে বনরক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে ডিমেরচর এলাকায় বনের ভেতরে হেঁটে টহল দিচ্ছিলাম। বনের মধ্যে হরিণ ধরার জন্য পেতে রাখা একাধিক ফাঁদ দেখতে পাই। সেখানে চার থেকে পাঁচজন শিকারিকেও দেখতে পাই। আমি দৌড়ে গিয়ে একজনকে ধরে ফেললে বাকি শিকারিরা ফিরে এসে আমাকে মারধর করে ধৃত শিকারিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’’

পরে বনরক্ষীরা ঘটনাস্থল থেকে ১৮টি হাঁটা ফাঁদ উদ্ধার করেন বলে জানান তিনি। 

আহত রানা দেবকে তাৎক্ষণিকভাবে দুবলারচরের অস্থায়ী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। হামলার পরপরই বনরক্ষীরা অভিযান চালিয়ে তিন শিকারিকে আটক করে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী ও শরণখোলা রেঞ্জের অন্যান্য কর্মকর্তারা রাস পূজার দায়িত্ব পালনের জন্য দুবলার চরে অবস্থান করায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

ঢাকা/শহিদুল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনে শিকারিদের হামলায় বন কর্মকর্তা আহত