দেশের বাজারে আবার রেকর্ড ছুঁয়েছে সোনার দাম। এ দফায় ভরিপ্রতি দাম বেড়েছে ৩ হাজার ৩৩ টাকা। তাতে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০৯ টাকায়। দেশের বাজারে এটিই এখন পর্যন্ত সোনার সর্বোচ্চ দাম।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) আজ বুধবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন করে সোনার দাম বাড়ানোর কথা জানায়। বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আবার দাম সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন দাম আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে।

সর্বশেষ গত রোববার সোনার দাম ভরিপ্রতি ১ হাজার ৩৮ টাকা কমিয়েছিল জুয়েলার্স সমিতি। তাতে প্রতি ভরি সোনার দাম কমে হয় ১ লাখ ৬২ হাজার ১৭৬ টাকা। এ দামেই আজ পর্যন্ত সোনা বিক্রি হয়েছে। এর আগে ১২ এপ্রিল মূল্যবৃদ্ধির পরে সোনার ভরি সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬৩ হাজার ২১৪ টাকায় উঠেছিল। এত দিন দেশের বাজারে সেটিই ছিল সোনার সর্বোচ্চ দাম।

বাজুসের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে আগামীকাল থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০৯ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৭৪ টাকায় বিক্রি হবে। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৬০ টাকায়।

এদিকে আজ পর্যন্ত প্রতি ভরি হলমার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ৬২ হাজার ১৭৬ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮০৫ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৯০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনা ১ লাখ ৯ হাজার ৫৩৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সেই হিসাবে আগামীকাল থেকে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনায় ৩ হাজার ৩৩ টাকা, ২১ ক্যারেটে ২ হাজার ৮৯২ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ২ হাজার ৪৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনায় ২ হাজার ১২৩ টাকা দাম বাড়বে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে সোনার দামে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সোনার দামে বড় ধরনের উত্থান ও পতন দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ চলতি সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রথমবার প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৩০০ ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে।

সোনার দামবিষয়ক ওয়েবসাইট গোল্ড প্রাইসের তথ্য অনুসারে, আজ বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলারে। ৮ এপ্রিল এ দাম ছিল ২ হাজার ৯৮০ ডলার। আর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। দেশে মূল্যবৃদ্ধির জন্য তেজাবি সোনার মূল্যবৃদ্ধির কথা বললেও মূলত বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশেও দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানান বেশ কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। এদিকে দফায় দফায় সোনার দাম বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় উঠে যাওয়ায় সোনার বেচাকেনা কমে গেছে বলে জানান স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারাও বাধ্য না হলে সোনার দোকানে যাচ্ছেন না।

জানতে চাইলে জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ জন্য বিশ্ববাজারে সোনার দামও বেড়ে চলেছে। বৈশ্বিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের দেশের বাজারেও সোনার দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে। তা না হলে বাংলাদেশ থেকে সোনা পাচার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

এভাবে দাম বাড়তে থাকলে সোনার ভরি দুই লাখ ছোঁবে কি না, জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সোনার ভরি দুই লাখ টাকা হবে কি না, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। আমাদের প্রত্যাশা শিগগিরই বৈশ্বিক বাজারের অনিশ্চয়তা কেটে যাবে।’

সোনার মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা কেমন, জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় দুই মাস ধরে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২২ ক য র ট ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ