লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সহায়ক কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ওই নিয়োগ বাতিল চেয়ে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।

জানা গেছে, কম্পিউটার অপারেটর কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে ১৪ জন, জারিকারক পদে ৪ জন ও অফিস সহায়ক পদে ৬ জনসহ ২৪ জন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন আদালত। কম্পিউটার অপারেটর কাম মুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহায়ক ও জারিকারক পদে লিখিত পরীক্ষা হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। অপারেটর পদে ৪ মার্চ ও বাকি দুই পদে ৫ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা হয়। ৫ মার্চ ফল প্রকাশ করে ওইদিনই নিয়োগপত্র ইস্যু করে কর্তৃপক্ষ। এসব নিয়োগে আত্মীয়করণ, লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থ বিনিময়ের মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসরদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে সচেতন নাগরিক সমাজ। এ নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন স্বপন বলেন, ২৪টি পদের সবক’টিই দুর্নীতি ও আত্মীয়করণের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত শর্তাবলি অনুযায়ী শারীরিক যোগ্যতা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন সনদপত্রসহ যোগদান করতে বলা হয়েছে। জেলার বাইরে নিয়োগপ্রাপ্তরা এত অল্প সময়ে কীভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করলেন– এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল পূর্বনির্ধারিত।

তিনি আরও বলেন, কর্মসূচি ও মাইকিং করা হলে ৮ মার্চ নিয়োগ স্থগিতসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত। নিয়োগ স্থগিত করায় দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। স্থগিত আদেশকে তোয়াক্কা না করে ফের আদেশ বহাল করা হয়, যা দুঃখজনক।

এই নিয়োগ বাতিল করে ফের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি করে সচেতন নাগরিক সমাজের অন্যতম সদস্য আবজাল হোসেন বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে তাদের শাস্তি দিতে হবে। নতুবা সচেতন নাগরিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

এ বিষয়ে জেলা জজকোর্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু ফাত্তাহ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর বলার কিছু নেই। কোর্ট কর্তৃপক্ষও কিছু বলবে না। 

এর আগে একই দাবিতে ৬ থেকে ৮ মার্চ তিন দিন শহরে মাইকিং করা হয়। বলা হয়, জেলা আদালতে প্রতিটি পদের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বহিরাগত ও স্বৈরাচারের দোসরদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। এক দিন পর ৯ মার্চ শহরের মিশন মোড় চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাকও দেওয়া হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৮ মার্চ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। পরে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে ফুঁসে উঠেছে সচেতন নাগরিক সমাজ।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বাদ পড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবি

জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়া দেশের সব সচল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন থেকে এই জানিয়েছেন সমিতিটি।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৩ সালে তৎকালীন সরকার সারা দেশে সব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়। তবে ২০১৩ সালের গেজেট মূলে ২০১২ সালের মে মাসে সারা দেশে ৩০ হাজার ৩৫২টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও সেই সময়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ৪ হাজার ১৫৯টি বিদ্যালয় বাদ রেখে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়।

আরো পড়ুন:

পরীক্ষার দিন বাদ দিয়ে নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতায় সরকার যথেষ্ট উদ্বিগ্ন: উপদেষ্টা

তৃতীয় ধাপের বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণের ক্ষেত্রে ২০১২ সালের মে মাসের আগে স্থাপিত ও পাঠদানের অনুমতির জন্য আবেদন করে রাখা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করতে হবে বলে জোর দাবি তোলেন বক্তারা।

মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, একই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন কিছু কর্মকর্তা কর্মস্থলে না থাকায়, সব শর্ত পূরণ করার পরেও ৪ হাজার ১৫৯টি বিদ্যালয় জাতীয়করণের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এই বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে থেকে ২০১২ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাসহ ১ হাজার ৩০০ বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য উপজেলা ও জেলায় যাচাই-বাচাই করা হয়েছে, যা মন্ত্রণালয় সংরক্ষণ করা আছে।

জাতীয়করণকালীন সময়ে পাঠদানের অনুমতি ও রেজিট্রেশনের কার্যক্রম স্থগিত রাখায় এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতার সুবিধা ও ছাত্র-ছাত্রীরা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সতিমির নেতারা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন।

মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি মামুনুর রশিদ খোকন বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান পরিচালনা করলেও বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ না হওয়ায় আমরা শিক্ষকরা মানবেতর যীবন যাপন করছি। আমরা অন্যের শিশুকে জ্ঞানের আলো দিলেও আমাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। এই অবস্থা দূর করতে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মো. ফিরোজ উদ্দিন বলেন, “২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি সব বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়া হলেও ফ্যাসিস্ট সরকার বিগত দিনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ৪ হাজার ১৫৯টি বিদ্যালয় সুকৌশলে বাদ দেয়। এই বিষয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী লিটন বলেন, “বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। শত প্রতিকূলতার মাঝেও বিশ্বদরবারে তারা আজ বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের চিঠি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে সারা দেশের প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি ও টিফিনসহ প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হবে; সেই সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে।”

মানববন্ধনে সারা দেশ থেকে আসা বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সদস্যদের দেখা যায়।

ঢাকা/রায়হান/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাদ পড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবি