আদালতে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ
Published: 17th, April 2025 GMT
লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সহায়ক কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ওই নিয়োগ বাতিল চেয়ে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।
জানা গেছে, কম্পিউটার অপারেটর কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে ১৪ জন, জারিকারক পদে ৪ জন ও অফিস সহায়ক পদে ৬ জনসহ ২৪ জন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন আদালত। কম্পিউটার অপারেটর কাম মুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহায়ক ও জারিকারক পদে লিখিত পরীক্ষা হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। অপারেটর পদে ৪ মার্চ ও বাকি দুই পদে ৫ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা হয়। ৫ মার্চ ফল প্রকাশ করে ওইদিনই নিয়োগপত্র ইস্যু করে কর্তৃপক্ষ। এসব নিয়োগে আত্মীয়করণ, লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থ বিনিময়ের মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসরদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে সচেতন নাগরিক সমাজ। এ নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন স্বপন বলেন, ২৪টি পদের সবক’টিই দুর্নীতি ও আত্মীয়করণের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত শর্তাবলি অনুযায়ী শারীরিক যোগ্যতা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন সনদপত্রসহ যোগদান করতে বলা হয়েছে। জেলার বাইরে নিয়োগপ্রাপ্তরা এত অল্প সময়ে কীভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করলেন– এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল পূর্বনির্ধারিত।
তিনি আরও বলেন, কর্মসূচি ও মাইকিং করা হলে ৮ মার্চ নিয়োগ স্থগিতসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত। নিয়োগ স্থগিত করায় দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। স্থগিত আদেশকে তোয়াক্কা না করে ফের আদেশ বহাল করা হয়, যা দুঃখজনক।
এই নিয়োগ বাতিল করে ফের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি করে সচেতন নাগরিক সমাজের অন্যতম সদস্য আবজাল হোসেন বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে তাদের শাস্তি দিতে হবে। নতুবা সচেতন নাগরিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
এ বিষয়ে জেলা জজকোর্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু ফাত্তাহ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর বলার কিছু নেই। কোর্ট কর্তৃপক্ষও কিছু বলবে না।
এর আগে একই দাবিতে ৬ থেকে ৮ মার্চ তিন দিন শহরে মাইকিং করা হয়। বলা হয়, জেলা আদালতে প্রতিটি পদের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বহিরাগত ও স্বৈরাচারের দোসরদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। এক দিন পর ৯ মার্চ শহরের মিশন মোড় চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাকও দেওয়া হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৮ মার্চ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। পরে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে ফুঁসে উঠেছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।