টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার-মির্জাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ডুবাইল ও গবড়ার সড়কের এক কিলোমিটার সড়কে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৪ বছরেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। 

জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের বার বার অবগত করে মেলেনি সুফল। ফলে দেলদুয়ার, মির্জাপুর ও বাসাইল উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেই দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয়রা পাঁচ বছর ধরে বাড়ি বাড়ি মুষ্টি ভিক্ষার চাল তুলে সড়কের সংস্কার কাজ করছেন। 

স্থানীয়রা জানান, ডুবাইল ও গবড়া গ্রাম দুইটি নিচু এলাকা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকে। তখন নৌকায় চলাচল করতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে গ্রামীণ এই কাঁচা সড়ক চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ছোট ছোট যানবাহনও চলাচল করতে পারে না। বৃষ্টি হলে কাদা-মাটির রাস্তায় চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। 

সড়কের দুর্গতির কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। কেউ অসুস্থ হলে রোগী নিয়ে যেতে কষ্ট করতে হয়। রাস্তা না থাকায় এলাকার ছেলে-মেয়েদের ভাল জায়গায় বিয়েও হয় না। 

বাধ্য হয়ে পাঁচ বছর ধরে দুই গ্রামের মানুষ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাপ্তাহিক মুষ্টির চাল তুলছেন। সেই সাথে কিছু কিছু টাকা জমিয়ে ও উত্তোলন করা মুষ্টির চাল বিক্রি করে প্রায় চার লাখ টাকা জমা হয়েছে। সেই টাকা দিয়েই চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়া সড়কটি সচল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন এলাকাবাসী।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ১০ জন যুবক ও বৃদ্ধ মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুষ্টির চাল তুলছেন। দুর্ভোগ লাঘবে নারী ও পুরুষরা আধা কেজি থেকে দুই কেজি করে চাল দিয়ে সহযোগিতা করছেন। আবার অনেকেই নগদ অর্থ দিয়েও সহযোগিতা করছেন।

শিক্ষার্থী রাশেদ মিয়া বলেন, “শুকনা মৌসুমে এই সড়কে চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

গৃহবধূ সুরাইয়া বেগম বলেন, “এই সড়ক নিয়ে দেলদুয়ার, মির্জাপুর ও বাসাইল উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়ক হচ্ছে স্বস্তিতে যাতায়াতের মাধ্যম। কিন্তু আমাদের এই সড়ক ভোগান্তির অন্যতম কারণ।”

হেলাল মিয়া বলেন, “গ্রামীণ সড়ক যে অবহেলিত থাকে এই সড়কটি তার জলন্ত উদাহারণ। এই সড়কটি সব সময়ই আমরা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। তারপরও অনেক কাজ থাকে, সেই কাজ করতে এই সড়কটি বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হয়।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য রাশেদ বেগম বলেন, “সড়কটিতে প্রতি বছরই ৪০ দিনের কর্মসূচির আওতায় উন্নয়ন করা হয়। এবছরও উন্নয়ন করা হবে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

দেলদুয়ারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির আহমেদ বলেন, “দুর্ভোগ লাঘবে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও পিআইও কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

মির্জাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম আরিফুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, “সাংবাদিকদের মাধ্যমে সড়কটির বিষয়ে অবগত হয়েছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/কাওছার/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক

অক্টোবরের প্রথম দিকে লম্বা এক ছুটিতে বেড়াতে গেলাম বগুড়া। দেশের উত্তরের জনপদ বরাবরই আমার পছন্দ। মানুষ কম, হালকা বসতি। পথে বা হাটবাজারে ততটা ভিড়ভাট্টা নেই। বাজারে কম দামে টাটকা শাকসবজি মেলে। এসব কেনার চেয়ে দেখেই তুমুল আনন্দ পাই। নিঝুম গ্রামের ভেতর ফসলের মাঠে ছড়িয়ে থাকা বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি বেশ উপভোগ করি। যত দূর চোখ যায়Ñ গ্রামের পর গ্রাম। মুঠো মুঠো সবুজের ভেতর এঁকেবেঁকে ছুটে চলা মেঠো পথ মাড়িয়ে আমরা প্রতিদিন দূরে কোথাও হারিয়ে যাই। দিনের মুহূর্তগুলো মানুষের জীবনাচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটা নিপুণভাবে ক্ষণে ক্ষণে বদলে যেতে পারে,Ñ এসব গ্রামে না এলে তা বোঝার উপায় নেই। কৃষিনির্ভর এই জনপদে প্রতিমুহূর্তের ব্যস্ততা যেন অনিবার্য নিয়তি।

বগুড়ার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে, দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে মনে হলো যথেষ্ট নয়! চোখের তৃষ্ণা মেটেনি। মনের ক্ষুধাও যায়নি! তখনই মনে পড়ল নওগাঁর ঘুঘুডাঙ্গার বিখ্যাত তালসড়কটির কথা। এত কাছে এসে তালসড়কটি দেখতে যাব না, তা কি হয়? স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ বললেন, ‘বগুড়া থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টারই তো জার্নি। ঘুরে আসুন।’ আমারও মনে হলো, এমন একটি অসাধারণ দৃশ্যের জন্য এই দূরত্ব কিছুই না।

সকালে তুমুল বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার থেমেও গেল। গাড়িতে ওঠার সময় স্থলপদ্মের গাছটি চোখে পড়ল। গাছভর্তি ফুলগুলো বৃষ্টির দাপটে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। অথচ বিকেলে ভেবে রেখেছিলাম, সকালে শরতের মধুর আলোয় স্থলপদ্মের ছবি তুলব। তা আর হলো না। দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। প্রথমে গেলাম নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানে। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন স্বপ্নমণ্ডিত সেই তালসড়কে পৌঁছাই, তখন ঠিক দুপুরবেলা।

কিন্তু দুপুর হলেও দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর তালসড়ক। শুধু বৃহত্তর রাজশাহী নয়, দূরদূরান্ত থেকেও পর্যটকেরা এখানে আসেন। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নে এই তালসড়কের অবস্থান। মূলত ঘুঘুডাঙ্গা-শিবপুর সড়কের দুপাশজুড়ে থাকা বীথিবদ্ধ তালগাছের জন্যই সড়কটি ‘তালসড়ক’ বা ‘তালতলী’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। হাজীনগর গ্রামের মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে এই তালসড়কের অবস্থান।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন রাস্তা ও খালপাড়ে ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে কয়েক লাখ তালগাছ। তখন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, পত্নীতলা ও ধামইরহাট, রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর উপজেলার রাস্তার দুপাশে রোপণ করা হয়েছে অনেক তালগাছ। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছই হারিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বেঁচে আছে কিছু। তবে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গার এই গাছগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। বর্তমানে গাছগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু হওয়ায় রাস্তার দুপাশে শোভাবর্ধন করছে।

একসময় নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়কটি ছিল একটি মেঠো পথ। ২০১২ সালের দিকে সড়কটি পাকা করা হয়। বর্তমানে তালসড়কের দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ থাকায় সড়কটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

ভাদ্র মাসে তাল পাকার মৌসুমে তালসড়ক ঘিরে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। নানা স্বাদের তালের পিঠা এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। তবে বেড়াতে আসা পর্যটকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য এখানে মানসম্পন্ন পর্যটনসেবা থাকা প্রয়োজন।

শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলই নয়, বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানেও প্রচুর পরিমাণে তালগাছ চোখে পড়ে। খেতের আলপথ, বাড়ির সীমানা, খালপাড়, পুকুরপাড় বা পথের ধারে এসব সুদৃশ্য তালগাছ প্রকৃতিতে ভিন্ন এক ব্যঞ্জনা তৈরি করেছে। দেশের বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে থাকা এসব তালগাছের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও আছে। দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দৃশ্যমান তালগাছের রস থেকে ভালো মানের সুস্বাদু গুড় ও মিছরি তৈরি করা হয়। বাজারে এসব গুড়-মিছরির চাহিদাও ব্যাপক। আমাদের দেশেও এসব গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে তালের গুড় তৈরি করা সম্ভব। প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার।

 মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে