বেশ ক’বছর ধরে গাছটিতে ফুল ফুটছে। এবারের সংখ্যাটি বেশি। গাছটি বেশ লম্বা ও উঁচু। গাছে ফোটা ফুলের যে সৌন্দর্য তা তেমন চোখে পড়ে না। তবে নিচে পড়ে ভরে থাকে গাছতলা। সেখানে অন্যরকম একটা সৌন্দর্য বিরাজ করে। তবুও নতুনত্বের খোঁজে গাছটির ওপর অংশে তাকাই মাঝেমধ্যে। বাদামি হলুদ রঙের ফুল। ফুলের কলি আঙুলাকৃতির, দীর্ঘ গোলাকার। দারুণ স্বতন্ত্র এক ঘ্রাণ ছড়ায়। প্রথম প্রথম এ ফুল দেখে মনে হয়েছিল এটি এক ধরনের শিমুল ফুল। নাম বা পরিচয় অচেনা থেকে গেলেও এ যে শিমুল ফুল নয়, পরবর্তী সময়ে এ বিভ্রান্তি কেটে যায়। আবার গাছ দেখে বুদ্ধ নারকেল গাছও ধারণা করা হয়েছিল। জানতে পারি, তাও নয়। তবে জানার কৌতূহল থেকে যায়।
ফুল ফুটলে পরিচয় মিলে যায়। নাম তার মুচকুন্দ ফুল। আমার বাবা গাছটি লাগিয়েছিলেন। আশপাশের সব গাছকে ছাড়িয়ে বেশ লম্বা হয়েছে। ফুলের খোঁজে গাছটির ওপর অংশে তাকাই মাঝেমধ্যে।
বিখ্যাত শিল্পী এসএম সুলতানের প্রিয় ফুল ছিল মুচকুন্দ চাঁপা। জানা যায়, গৌতম বুদ্ধ জ্ঞান লাভের ষষ্ঠ সপ্তাহে এ বৃক্ষের নিচে বসে ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে ভাবনা করেছিলেন। মুচকুন্দ দীর্ঘাকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ। বাকল ধূসর ও মসৃণ। পাতা বেশ বড়, আয়তনে অনেকটা সেগুন পাতার মতো গোলাকার। পাতার আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পাতার এক পিঠ উজ্জ্বল সবুজ ও মসৃণ, অন্য পিঠ রুক্ষ-রোমশ ও সাদাটে ধূসর। ফুল ফোটার মৌসুম বসন্ত থেকে পুরো বর্ষাজুড়ে। গাছ উঁচু লম্বা ও পাতা বড় এবং ঝোপের মতো হওয়ায় ফুল যেন আড়ালে থাকতেই পছন্দ করে। যখন ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে এবং বাসি ফুল ঝরে পড়ে, তখন সুঘ্রাণ ও ফুলভর্তি গাছতলা যেন বলে দেয় মুচকুন্দ ফুল ফুটেছে। ফুলের কলি আঙুলাকৃতির, দীর্ঘ গোলাকার ও বাদামি হলুদ রঙের। প্রস্ফুটিত মুচকুন্দের পাঁচটি মুক্ত বৃত্যাংশ মাংসল ও রোমশ। শুকনো ফুলের গন্ধও অনেকদিন পর্যন্ত অটুট থাকে। পাপড়ির রং দুধসাদা, বেশ কোমল ও ফিতা-আকৃতির। ঝরা ফুলের পাপড়ি অনেকটা সোনালি রং ধারণ করে। পরাগচক্র সোনালি সাদা, একগুচ্ছ রেশমি সুতার মতো নমনীয় ও উজ্জ্বল।
মুচকুন্দের কাঠের দীর্ঘ স্থায়িত্বের জন্য খ্যাতি আছে। এটি ফেলনা নয়। একসময় মুচকুন্দের পাতায় তামাক, লবণ ও গুড় বিক্রি হলেও আজ ওসবে ব্যবহার নেই। আজকাল শুকনো পাতা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। মুচকুন্দর ভেষজ গুণ রয়েছে বেশ। জানা যায়, এর বাকল ও পাতা হাত-পা জ্বালাপোড়া, পাণ্ডু, চুলকানি, কাশি, ব্রণ, বসন্ত প্রভৃতি রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। আবার ফুল ব্যবহার হয় জীবাণু ও কীটনাশক হিসেবে। আজকাল বাংলাদেশের কোনো কোনো জায়গায় দেখা গেলেও এ গাছের আদিনিবাস হিমালয়ের পাদদেশ, মিয়ানমার, আসাম, সিলেট ও চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চল।
মুচকুন্দ বংশবিস্তার বীজের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ফুল ঝরে গেলে সেখানে বীজ হয়। ফল ডিম্বাকৃতির, আকারে কিছুটা বড় ও শক্ত ধরনের। দেখতে অনেকটা মেহগনি বীজের মতো।
মুচকুন্দকে মুসকুন্দ চাঁপাসহ অঞ্চলভেদে বেশ কিছু নামে ডাকা হয়। যেমন– মুছকুন্দা, মুসাকান্ত, মুচিকানি, মুছিকানি, মুচিলিন্দ।
আবার কেউ কেউ মুচকুন্দকে কনকচাঁপা বা কাঠচম্পাও বলেন। বসন্তে ফোটে মুচকুন্দ ফুল, দেখতে যেন আধখানা খোসা ছড়ানো কলা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।