Samakal:
2025-05-01@00:37:13 GMT

মুচকুন্দ ফুল দেখতে যেমন

Published: 25th, April 2025 GMT

মুচকুন্দ ফুল দেখতে যেমন

বেশ ক’বছর ধরে গাছটিতে ফুল ফুটছে। এবারের সংখ্যাটি বেশি। গাছটি বেশ লম্বা ও উঁচু। গাছে ফোটা ফুলের যে সৌন্দর্য তা তেমন চোখে পড়ে না। তবে নিচে পড়ে ভরে থাকে গাছতলা। সেখানে অন্যরকম একটা সৌন্দর্য বিরাজ করে। তবুও নতুনত্বের খোঁজে গাছটির ওপর অংশে তাকাই মাঝেমধ্যে। বাদামি হলুদ রঙের ফুল। ফুলের কলি আঙুলাকৃতির, দীর্ঘ গোলাকার। দারুণ স্বতন্ত্র এক ঘ্রাণ ছড়ায়। প্রথম প্রথম এ ফুল দেখে মনে হয়েছিল এটি এক ধরনের শিমুল ফুল। নাম বা পরিচয় অচেনা থেকে গেলেও এ যে শিমুল ফুল নয়, পরবর্তী সময়ে এ বিভ্রান্তি কেটে যায়। আবার গাছ দেখে বুদ্ধ নারকেল গাছও ধারণা করা হয়েছিল। জানতে পারি, তাও নয়। তবে জানার কৌতূহল থেকে যায়।
ফুল ফুটলে পরিচয় মিলে যায়। নাম তার মুচকুন্দ ফুল। আমার বাবা গাছটি লাগিয়েছিলেন। আশপাশের সব গাছকে ছাড়িয়ে বেশ লম্বা হয়েছে। ফুলের খোঁজে গাছটির ওপর অংশে তাকাই মাঝেমধ্যে।
বিখ্যাত শিল্পী এসএম সুলতানের প্রিয় ফুল ছিল মুচকুন্দ চাঁপা। জানা যায়, গৌতম বুদ্ধ জ্ঞান লাভের ষষ্ঠ সপ্তাহে এ বৃক্ষের নিচে বসে ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে ভাবনা করেছিলেন। মুচকুন্দ দীর্ঘাকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ। বাকল ধূসর ও মসৃণ। পাতা বেশ বড়, আয়তনে অনেকটা সেগুন পাতার মতো গোলাকার। পাতার আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পাতার এক পিঠ উজ্জ্বল সবুজ ও মসৃণ, অন্য পিঠ রুক্ষ-রোমশ ও সাদাটে ধূসর। ফুল ফোটার মৌসুম বসন্ত থেকে পুরো বর্ষাজুড়ে। গাছ উঁচু লম্বা ও পাতা বড় এবং ঝোপের মতো হওয়ায় ফুল যেন আড়ালে থাকতেই পছন্দ করে। যখন ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে এবং বাসি ফুল ঝরে পড়ে, তখন সুঘ্রাণ ও ফুলভর্তি গাছতলা যেন বলে দেয় মুচকুন্দ ফুল ফুটেছে। ফুলের কলি আঙুলাকৃতির, দীর্ঘ গোলাকার ও বাদামি হলুদ রঙের। প্রস্ফুটিত মুচকুন্দের পাঁচটি মুক্ত বৃত্যাংশ মাংসল ও রোমশ। শুকনো ফুলের গন্ধও অনেকদিন পর্যন্ত অটুট থাকে। পাপড়ির রং দুধসাদা, বেশ কোমল ও ফিতা-আকৃতির। ঝরা ফুলের পাপড়ি অনেকটা সোনালি রং ধারণ করে। পরাগচক্র সোনালি সাদা, একগুচ্ছ রেশমি সুতার মতো নমনীয় ও উজ্জ্বল। 
মুচকুন্দের কাঠের দীর্ঘ স্থায়িত্বের জন্য খ্যাতি আছে। এটি ফেলনা নয়। একসময় মুচকুন্দের পাতায় তামাক, লবণ ও গুড় বিক্রি হলেও আজ ওসবে ব্যবহার নেই। আজকাল শুকনো পাতা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। মুচকুন্দর ভেষজ গুণ রয়েছে বেশ। জানা যায়, এর বাকল ও পাতা হাত-পা জ্বালাপোড়া, পাণ্ডু, চুলকানি, কাশি, ব্রণ, বসন্ত প্রভৃতি রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। আবার ফুল ব্যবহার হয় জীবাণু ও কীটনাশক হিসেবে। আজকাল বাংলাদেশের কোনো কোনো জায়গায় দেখা গেলেও এ গাছের আদিনিবাস হিমালয়ের পাদদেশ, মিয়ানমার, আসাম, সিলেট ও চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চল।
মুচকুন্দ বংশবিস্তার বীজের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ফুল ঝরে গেলে সেখানে বীজ হয়। ফল ডিম্বাকৃতির, আকারে কিছুটা বড় ও শক্ত ধরনের। দেখতে অনেকটা মেহগনি বীজের মতো।
মুচকুন্দকে মুসকুন্দ চাঁপাসহ অঞ্চলভেদে বেশ কিছু নামে ডাকা হয়। যেমন– মুছকুন্দা, মুসাকান্ত, মুচিকানি, মুছিকানি, মুচিলিন্দ।
আবার কেউ কেউ মুচকুন্দকে কনকচাঁপা বা কাঠচম্পাও বলেন। বসন্তে ফোটে মুচকুন্দ ফুল, দেখতে যেন আধখানা খোসা ছড়ানো কলা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ