খুলনার নাম উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে উঠত সারি সারি শিল্পকারখানা, শ্রমিকের কর্মব্যস্ত মুখ আর অর্থনীতির গতিময় চাকা। পাটকলের সাইরেন, নিউজপ্রিন্ট মিলের অবিরাম ঘূর্ণি আর ছোট-বড় কারখানার অবিরাম কোলাহলের মধ্যেই ছিল খুলনার পরিচয়। এ শহর শুধু ইট-পাথরের সমষ্টি ছিল না; ছিল উন্নত জীবনের সন্ধানে আসা স্বপ্নবাজ মানুষের ঠিকানা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আশায় বুক বেঁধে এখানে আসত। খুলনা হয়ে উঠেছিল তাদের আশ্রয়, তাদের জীবিকার উৎস।

আবুল কালাম সামসুদ্দিন তাঁর শহর খুলনার আদি-পর্ব বইয়ে খুলনাকে স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, ১৮৭৫–৭৬ সালের দিকে বিভিন্ন দিক দিয়ে সুন্দরবনের গুরুত্ব ও ভূমিকা সরকারের কাছে অনুভূত হতে থাকে। বাংলার গভর্নর রিচার্ড টেম্পল সুন্দরবনের অবস্থা সরেজমিনে তদন্ত করে অনুভব করেন, সুদূর যশোর বা ২৪ পরগনা থেকে সুন্দরবন অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনা খুব দুরূহ। এর আগেও এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের রাজস্ব ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে সুন্দরবন বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র জেলা গঠনের চিন্তাভাবনা চলছিল। অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতের দ্রুততার জন্য রেলপথ সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব কারণে সুন্দরবন এলাকার শাসনকার্যের সুবিধার্থে ১৮৮২ সালের ২৫ এপ্রিল যশোর জেলার খুলনা ও বাগেরহাট মহকুমা এবং ২৪ পরগনা জেলা থেকে সাতক্ষীরা মহকুমাকে পৃথক করে খুলনাকে স্বতন্ত্র জেলায় পরিণত করা হয়।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই খুলনাকে সারা দেশ চিনেছে তার শিল্পের ঐশ্বর্যে। আশির দশকেও এই শহরের কারখানা ঘিরে ছিল হাজারো মানুষের ব্যস্ততা। ১১৩ একরের খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিল আকার ও শ্রমিকসংখ্যার দিক দিয়ে ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাটকল। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠার পর ৭০ বছর এই পাটকল বহু শ্রমিকের জীবিকা জুগিয়েছে। ২০২০ সালের জুলাইয়ে বন্ধের সময় এখানে প্রায় ৯ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। ক্রিসেন্ট মিলের প্রধান ফটকের পাশে টাইলসের বেদি—যেন এক নীরব স্মৃতিস্তম্ভ। ধুলার পুরু আস্তরণ জানান দিচ্ছে, কতকাল এখানে কোনো পদচিহ্ন পড়েনি, বসেনি কোনো ক্লান্ত শ্রমিক। একসময়ের কর্মচাঞ্চল্যমুখর আঙিনা এখন খাঁ খাঁ করে, স্তব্ধতার অচেনা সুর যেন বিষণ্ন গান গায়।

শুধু ক্রিসেন্ট নয়, খুলনার অনেক পাটকলই এখন বন্ধ। শুধু পাটকল কেন, আরও অনেক কারখানায় উৎপাদন নেই। সব মিলিয়ে শিল্পের শহর খুলনার কারখানায় কারখানায় এখন নীরবতা, নিস্তব্ধতা। বন্ধ দরজার ওপারে স্তব্ধ হয়ে আছে একসময়ের কর্মমুখর প্রাঙ্গণ।

১৯৮৬ সালে বদলি শ্রমিক হিসেবে ক্রিসেন্টের আঙিনায় পা রেখেছিলেন রতন কুমার মণ্ডল। গত বসন্তে একদিন মিলের ভেতর দাঁড়িয়ে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে রতন বলেন, ‘ক্রিসেন্টের বিশাল প্রান্তরে মাইকের সুরে ফুটবলের উন্মাদনা ছিল যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি। কারখানার ভেতরেই সবকিছু—যেন এক স্বয়ংসম্পূর্ণ জগৎ। আজ সেই চেনা ছবি উধাও, খাঁ খাঁ করছে চারপাশ, কথা বলারও যেন কেউ নেই।’

খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিল আকার ও শ্রমিকসংখ্যার দিক দিয়ে ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাটকল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন প টকল

এছাড়াও পড়ুন:

চোরা শিকারিদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগের আহ্বান উপদেষ্টার 

বাঘ পাচারকারী ও চোরা শিকারিদের বিরুদ্ধে আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে দাঁড়াতে হবে। বাঘ সংরক্ষণের সুফল জনগণের সামনে দৃশ্যমান করতে হবে। 

বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার রাজধানীর বন ভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সচিবালয় থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, ‘‘বাঘ শুধু একটি বন্যপ্রাণী নয়, এটি বাংলাদেশের গর্ব ও জাতিসত্তার প্রতীক। যেমন আমরা সুন্দরবন নিয়ে গর্ব করি, তেমনি গর্ব করি রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়েও। সাহস, ভালোবাসা ও বীরত্বের প্রতীক হিসেবে আমরা বাঘকে দেখি। ক্রিকেটারদের ‘টাইগার’ নামে ডাকাও সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ।’’

সাম্প্রতিক বাঘ শুমারির ফল তুলে ধরে উপদেষ্টা জানান, কিছু ইতিবাচক উদ্যোগের কারণে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে, যা আশাব্যঞ্জক। তবে হরিণ শিকারে নিয়ন্ত্রণ, বারবার অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ এবং চোরা শিকার রোধে আরও কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘‘বাঘের মৃত্যু ও পাচারের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। মানুষ-বাঘ দ্বন্দ্বও বেড়েছে। এজন্য সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় সামাজিক সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’

পাশাপাশি সুন্দরবনে অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘কারা চোরাকারবারি, আর কারা বিকল্প জীবিকার সুযোগ পেলে সেই পথ পরিহার করবে তাদের তালিকা তৈরি করে জানাতে হবে, যেন আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারি।’’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘‘আমাদের ঐতিহ্য রক্ষায়, পরিবেশ সংরক্ষণে এবং বাঘকে টিকিয়ে রাখতে সম্মিলিতভাবে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।’’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা। 

অনুষ্ঠানে ‘সুন্দরবনে সংঘাতপ্রবণ বাঘ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা’ এবং ‘টাইগারস্ অব দ্য সুন্দরবনস’ শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পাশাপাশি, সুন্দরবনভিত্তিক পটের গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।

ঢাকা/এএএম//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাঘ রক্ষায় সুন্দরবনের চারপাশে হবে সুরক্ষাবলয়: পরিবেশ উপদেষ্টা
  • চোরা শিকারিদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগের আহ্বান উপদেষ্টার