‘এল ক্লাসিকো’র আগে রিয়াল আর রেফারিরা মুখোমুখি
Published: 26th, April 2025 GMT
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কোপা দেল রে ফাইনালে ‘এল ক্লাসিকো’তে মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার। তবে এই ম্যাচের আগে উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বার্সার বিপক্ষে ম্যাচ বয়কট করতে পারে রিয়াল, এমন গুঞ্জনও বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল!
তবে লস ব্ল্যাঙ্কসরা এমন কিছুই বিবেচনা করছে না বলে জানিয়েছে। যদিও কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা শুক্রবারের ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলন এবং ট্রেনিং সেশন বর্জন করেছে। যা ছিল রেফারিং দলের মন্তব্যের বিপক্ষে করা রিয়ালের একটি প্রতিবাদ।
কোপা দেল রে ফাইনাল পরিচালনা করবেন রেফারি রিকার্দো দে বুরহোস এবং ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) পাবলো গঞ্জালেস ফুয়ের্তেস। এই দুজন শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা, রিয়াল মাদ্রিদের সম্মানে আঘাত করেছে। মাদ্রিদের অভিজাতদের সম্প্রতি সময়ে করা রেফারিদের প্রতি ঘন ঘন সমালোচনার বিপক্ষে কথা বলেছেন বুরহোস।
আরো পড়ুন:
এমবাপ্পের লাল কার্ড, এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ
চড়া মূল্যে শীর্ষে উঠল বার্সা
বিশেষ করে রিয়াল মাদ্রিদ টিভিতে সম্প্রচারিত ভিডিওগুলোতে বুরহোসের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলা হয়। কারণ এই ৩৯ বছর বয়সী রেফারি এখন পর্যন্ত কোন ফাইনালই পরিচালনা করেননি। স্বাভাবিকভাবেই সেই ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রিয়াল টিভি। সেখানে প্রকাশ করা হয়েছে একটা সমীকরণ। যাতে বলা হচ্ছে বুরহোস মাঠে থাকলে ৮১ শতাংশ ম্যাচ বার্সা জিতে আর রিয়ালের জয়ের পরিসংখ্যান ৬৪ শতাংস।
সেভিলের লা কার্তুজা স্টেডিয়ামে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা ছিল রিয়াল বস আনচেলত্তি এবং মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচের। তারপরে অনুশীলন করার কথা ছিল। কিন্তু ক্লাব জানায় যে তারা এই ইভেন্টগুলোতে অংশ নেবে না এবং অফিসিয়াল ফটো সেশনেও উপস্থিতও হবে না।
এতে গুঞ্জন ওঠে যে, রিয়াল মাদ্রিদ হয়তো ফাইনাল বয়কট করতে পারে। রিয়াল একটি বিবৃতিতে জানায়, “আমাদের দল কখনোই কালকের (শনিবারের) ফাইনাল ম্যাচ না খেলার কথা ভাবেনি। আমাদের ক্লাব মনে করে যে, এই ম্যাচের জন্য নিযুক্ত রেফারিরা ম্যাচের ঠিক ২৪ ঘন্টা আগে যেসব দুর্ভাগ্যজনক ও অনুপযুক্ত মন্তব্য করেছেন, তা বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ এই ক্রীড়া ইভেন্টকে কলঙ্কিত করতে পারে না, যা কোটি-কোটি মানুষ দেখবে। আমরা সেই সকল সমর্থকদের প্রতিও সম্মান জানাই যারা সেভিইয়া যাত্রার পরিকল্পনা করছেন কিংবা ইতিমধ্যেই সেখানে অবস্থান করছেন।”
“রিয়াল মাদ্রিদ বিশ্বাস করে যে, ফুটবলের মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যদিও আমাদের ক্লাবের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ আজ আবারো প্রদর্শিত হয়েছে এই রেফারিদের মাধ্যমে।”
রিয়াল মাদ্রিদ রেফারিং প্যানেলে পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়েছে। যদিও স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (আরএফইএফ) জল আর ঘোলা না করতে জানায় স্পষ্ট জানায় যে, তারা এমন কোনো অনুরোধ পায়নি।
রিয়াল মাদ্রিদ রেফারিদের মন্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দেয় এবং বলে মন্তব্যগুলো ‘পরিকল্পিতভাবে’ করা হয়েছে, “ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে, রিয়াল মাদ্রিদ আশা করে যে আরএফইএফ এবং রেফারিং প্রতিষ্ঠান যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যেসব প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষায় তারা দায়বদ্ধ।”
রিয়াল মাদ্রিদ টিভিতে রেফারি দে বুরহোসের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে সমালোচনাও করা হয়। তিনিই ২০১৭ এবং ২০২৩ সালের সুপারকোপা ফাইনালে রিয়াল-বার্সা ম্যাচ পরিচালনা করেছিলেন। যদিও সুপারকোপার উন্মাদনাকে কোপা দেল রে’র সঙ্গে মেলাতে রাজি নয় লস ব্ল্যাঙ্কসরা।
ফেব্রুয়ারিতে এস্পানিওলের বিপক্ষে ১-০ গোলের পরাজয়ের পর রেফারিং নিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় মাদ্রিদ। সেই ম্যাচে ডিফেন্ডার কার্লোস রোমেরো কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ফাউল করলেও লাল কার্ড পাননি। ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ স্পেনে রেফারিং ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এবং জানান, তিনি চান ইংলিশ রেফারিরাও স্পেনে ম্যাচ পরিচালনা করুক।
এখন প্রশ্ন, রেফারি কি করেছেন? রেফারি দে বুরহোস বলেন, “যখন আপনার সন্তান স্কুলে যায় এবং তাকে বলা হয় তার বাবা চোর, তখন সেটা খুব কষ্টদায়ক। আমি শুধু চাই আমার ছেলে গর্ববোধ করুক তার বাবার ব্যাপারে। আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে আমরা কোথায় যাচ্ছি।”
ভিএআর পাবলো গঞ্জালেস ফুয়ের্তেস বলেন, “আমরা প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় অপমান, হুমকি সহ্য করছি। কিছু ক্লাবের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপক শুধুমাত্র ভালো সাড়া পাওয়ার আশায় আমাদের পেশার বিরুদ্ধে কথা বলে। যখন কেউ বলে ‘চুরি হয়েছে’, তখন এর প্রভাব পড়ে সেই ছোট ছেলেমেয়ের উপর যারা মাঠে রেফারি হতে চায়। আমরা এই অবস্থা আর সহ্য করবো না। শিগগিরই আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি। ইতিহাস সৃষ্টি হবে।”
রিয়াল মাদ্রিদ বর্তমানে বার্সেলোনার চেয়ে চার পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে লা লিগার শীর্ষে। বাকি আছে পাঁচটি ম্যাচ। তাদের এখনো ঘরোয়া ডাবল জয়ের সুযোগে আছে। যদিও চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে তারা কোয়ার্টার ফাইনালে আর্সেনালের বিপক্ষ রীতিমত বিধ্বস্ত হয়ে বিদায় নিয়েছে। অন্যদিকে বার্সেলোনা এখনো ট্রেবল জয়ের দৌঁড়ে আছে।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প য ন শ ফ টবল ফ ইন ল আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের রোডম্যাপে কবে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে মাস দেড়েক আগে বলা হয়েছিল, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। এ দেশে গত ১৫ বছরে সতি্যকার অর্থে কোনো নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন না থাকার কারণেই স্বৈরাচারী শাসন চেপে বসতে পেরেছিল।
নাগরিক কোয়ালিশনও অনেক আগেই নির্বাচনের জন্য ‘ফেব্রুয়ারি রোডম্যাপ’ দিয়েছিল। কিন্তু সরকার থেকে এখনো কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। এদিকে জোর গুজব উঠেছে, আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু তারিখ বললেই কি নির্বাচন হয়?
২.
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা কি আদৌ কিছু শুরু করতে পেরেছি, নাকি আবারও সেই পুরোনো অভ্যাস, অর্থাৎ সময়ক্ষেপণ, সন্দেহ আর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য অব্যাহত রয়েছে? বাস্তবতা হচ্ছে, গত ১৩ জুন লন্ডনে তারেক রহমান ও সরকারপ্রধানের বৈঠক হলেও এরপর আর কোনো গঠনমূলক অগ্রগতি নেই।
অনেকেই ভাবছেন, নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট সময় হাতে আছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন মানে হাতে তেমন সময় নেই। বাস্তবতা হলো, সরকার যদি সত্যিই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে চায়, তাহলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বড় সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করতে হবে। আর তা করতে হলে এখন থেকেই খুব জোরেশোরে কাজ শুরু করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানেই নিয়ন্ত্রিত প্রহসন। এ জন্য আমাদের হাতে যেসব কাজ রয়েছে:
ক. ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের জন্য জুলাই চার্টার।
খ. নির্বাচন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য ন্যূনতম সংস্কারসহ নতুন আইন প্রণয়ন।
গ. ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণ।
ঘ. নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ে প্রস্তুতি। এর মধ্যে আছে অমোচনীয় কালিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বিশাল ক্রয়াদেশ এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা।
এই কাজগুলো সময়মতো না হলে তারিখ শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় লেখা থাকবে; নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে; গণতন্ত্র ফিরবে না। এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে তা দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।
৩.
এ স্থিতাবস্থার প্রথম কারণ ঐকমত্যের ঘাটতি। অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত—সব পক্ষই পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে সন্দেহের চোখে। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে গত বছরের জুলাইয়ে আন্দোলন করলেও এখন তাদের সবার পথ আলাদা। সংস্কার নিয়ে সবার আলাদা মত।
নাগরিক কোয়ালিশনের মূল যেসব প্রস্তাব ছিল, তার মধ্যে উচ্চকক্ষে আনুপাতিক বণ্টন নিয়ে বিএনপিসহ দু–একটি দল ছাড়া আর সবার মধ্যে স্পষ্ট মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একেকজন একেক রকম মত দিচ্ছে।
অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে যদিও সবাই একমত হয়েছে, এরপরও নারী আসনে সরাসরি ভোট নিয়ে এখনো কোনো পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নেই। নিরপেক্ষ নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে এখনো আলোচনা এগোচ্ছে না।
নাগরিক কোয়ালিশনের ৭ দফা সংস্কার প্রস্তাব ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্যই প্রয়োজনীয় ছিল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আবার তা বিবেচনা করার অনুরোধ রইল।
৪.
এদিকে কোনো রাজনৈতিক দলই নিজেদের দলীয় বা অভ্যন্তরীণ সংস্কারের কাজ শুরু করেনি। এত সব ডামাডোলে তা হারিয়েই যাচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনীতি করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে, নতুন রাজনীতির নিজ নিজ দলকে উপযোগী করে পুনর্বিন্যস্ত করতে হবে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ডিসেম্বরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বললেও প্রশাসন এখনো ‘ধীরে চলো’ নীতিতে আছে। নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি ও তালিকা হালনাগাদ খুব ধীরগতিতে চলছে।
এই অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেটে নির্বাচন কমিশন ২ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। এর মধ্যে শুধু নির্বাচন পরিচালনা করতেই ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে, যা ২০২৪ সালের নির্বাচনের খরচের প্রায় কাছাকাছি। বাজেট বরাদ্দ হলেও কাজে গতি নেই। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে আস্থা পাচ্ছে না।
২০২৪ সালের নির্বাচনে পুলিশ, র্যাব, আনসার, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাড়ে ছয় লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের পুলিশ কি প্রস্তুত? গোপালগঞ্জের অবস্থা দেখে এ প্রশ্নের উত্তর মনে হয় সবাই জেনে গেছেন।
পত্রিকায় এসেছে, গাড়ির অভাবে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের প্যাট্রোলিং ব্যাহত হচ্ছে। এই গাড়িগুলো কবে কেনা হবে? ২০২৪ সালে নির্বাচনের জন্য শুধু পুলিশের জন্যই বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। এবার কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে, সেটা এখনো জানা যায়নি।
এবার নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি, রাতে পাহারা এবং বিস্ফোরণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা থাকতে হবে। ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি বুথে এই সিসিটিভি ক্যামেরার আয়োজন বিশাল কর্মযজ্ঞের ব্যাপার।
এ ছাড়া নির্বাচনের জন্য অমোচনীয় কালি থেকে শুরু করে বিশালসংখ্যক স্টেশনারি পণ্য প্রয়োজন হয়, টেন্ডারের মাধ্যমে কিনতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগে। কিন্তু এসবের জন্য এখনো কোনো টেন্ডারের প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না। এগুলো ছোটখাটো ব্যাপার হলেও অত্যাবশ্যকীয় এবং সময়সাপেক্ষ।
৫.
এদিকে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। তাঁদের বিবেচনায় রাখলে দেশের বাইরে প্রায় দুই কোটি ভোটার আছেন। নির্বাচনে কোন পদ্ধতিতে তাঁদের করা যুক্ত হবে কিংবা এত কম সময়ে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না, সেটা একটা বড় প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশে থাকা আমাদের দূতাবাসগুলোর আরও গতিশীলতা দরকার।
এদিকে সীমানা নির্ধারণ এখনো ঝুলে আছে। কোন এলাকা কোন আসনে পড়বে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ব্যাপারটি ঠিক না হলে প্রার্থীরা প্রস্তুতি নেবেন কীভাবে? সীমানা ঠিক না করে নির্বাচনের ঘোড়া ছুটিয়ে লাভ নেই।
প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ায় নির্বাচন মানে প্রায় বছরব্যাপী প্রস্তুতির একটি প্রক্রিয়া। এদিকে ঘোষিত সময় থেকে মাত্র সাত মাস আগে বাংলাদেশে এখনো আইনকানুন আর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা চলছে।
তবে ব্যয়ের দিক থেকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ করতে যাচ্ছি। ভারতের তুলনায় জনপ্রতি প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। কিন্তু এই খরচ জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারছে না।
৬.
আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে শুধু দেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক মহলও। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত, চীন—সবাই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা চায়। কিন্তু স্থিতিশীলতা মানে শুধু একটি নিয়ম রক্ষার ভোট নয়। সংস্কার আর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে এ নির্বাচনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া কঠিন হবে। আমরা যদি নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান না করি, বাইরের চাপ আরও বাড়বে।
এদিকে মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সব শ্রেণি–পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। তারা ভেবেছিল, এবার কিছু বদলাবে। কিন্তু এখন দেখছে আবারও সময়ক্ষেপণ আর দোষারোপের রাজনীতি। তাদের যদি আবারও হতাশ করা হয়, তাহলে অনাস্থা আরও গভীর হবে। এটা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও ভয়ংকর।
এদিকে অর্থনীতিও ঝুলে আছে; নেই বড় কোনো বিনিয়োগ। যে কোটামুক্ত সরকারি চাকরির জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে দৃশ্যমান কোনো কাজ চোখে পড়ছে না। ফলে বেকারত্ব বাড়ছেই।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কাঠামোগত সংস্কারের কোনো বরাদ্দ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তবেই নতুন সরকার সংস্কারমুখী বাজেট নিতে পারবে। নতুন বিনিয়োগ আসা, আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) পরবর্তী কিস্তি পাওয়া—সবই এই সংস্কারের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু নির্বাচন দেরিতে হলে অর্থনীতিও সংকটে পড়বে।
৭.
সামনে কী হতে পারে? যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হয় এবং এ রকম অরাজকতা চলতেই থাকে, তাহলে সরকার যেকোনো সময় নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারে। এতে নতুন করে সংকট তৈরি হবে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় ভয়—ক্ষমতার নতুন পুনর্বিন্যাস হবে; গণতন্ত্র ফিরবে না। বিশ্বাসের সংকট আরও প্রকট হবে। সে রকম কিছু হলে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়দায়িত্ব নিতে হবে।
বিগত স্বৈরাচারী সরকার এ দেশের মানুষের মনমানসিকতা অনেকখানি বদলে ফেলেছে, যার অনেক কিছুই আমরা শুনতে পাচ্ছি। আমাদের দরকার মানুষের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যা হতে হবে সুষ্ঠু ও অবাধ। আর তার জন্য শুধু সরকার নয়, সব দলকেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
এ রকম অবস্থায় বড় দলগুলোর জন্য একটি সর্বসম্মত ‘রাজনৈতিক নৈতিকতা সনদ’ প্রণয়ন করতে পারে নির্বাচন কমিশন বা নাগরিক সমাজ। এর ভিত্তিতে দলগুলোই ‘কন্ডাক্ট সেল’ করে সরকারকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিতে পারে।
৮.
এখনো কিছু সময় হাতে আছে। আমরা যদি টাইমলাইন নির্ধারণ করে এবং সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করে কাজ শুরু করতে না পারি, তাহলে সরকার বদলাবে ঠিকই, কিন্তু পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পাল্টাবে না।
সেপ্টেম্বরের মধ্যেই যদি রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়, সংবিধান সংস্কারের খসড়া তৈরি হয়, ভোটার তালিকা আর সীমানা নির্ধারণ শেষ হয় এবং সব দল যথাসাধ্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে, তাহলেই শুধু এই নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হবে।
বিগত স্বৈরাচারী রেজিম এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তাই একটি নির্বাচনের জন্য আমাদের সবারই দায়দায়িত্ব নিতে হবে। আর যদি তা না পারি, ইতিহাস আমাদের কখনো ক্ষমা করবে না।
সুবাইল বিন আলম সদস্য, নাগরিক কোয়ালিশন
[email protected]
মতামত লেখকের নিজস্ব