শনিবার (২৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কোপা দেল রে ফাইনালে ‘এল ক্লাসিকো’তে মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার। তবে এই ম্যাচের আগে উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বার্সার বিপক্ষে ম্যাচ বয়কট করতে পারে রিয়াল, এমন গুঞ্জনও বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল!

তবে লস ব্ল্যাঙ্কসরা এমন কিছুই বিবেচনা করছে না বলে জানিয়েছে। যদিও কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা শুক্রবারের ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলন এবং ট্রেনিং সেশন বর্জন করেছে। যা ছিল রেফারিং দলের মন্তব্যের বিপক্ষে করা রিয়ালের একটি প্রতিবাদ।

কোপা দেল রে ফাইনাল পরিচালনা করবেন রেফারি রিকার্দো দে বুরহোস এবং ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) পাবলো গঞ্জালেস ফুয়ের্তেস। এই দুজন শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা, রিয়াল মাদ্রিদের সম্মানে আঘাত করেছে। মাদ্রিদের অভিজাতদের সম্প্রতি সময়ে করা রেফারিদের প্রতি ঘন ঘন সমালোচনার বিপক্ষে কথা বলেছেন বুরহোস।

আরো পড়ুন:

এমবাপ্পের লাল কার্ড, এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ

চড়া মূল্যে শীর্ষে উঠল বার্সা

বিশেষ করে রিয়াল মাদ্রিদ টিভিতে সম্প্রচারিত ভিডিওগুলোতে বুরহোসের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলা হয়। কারণ এই ৩৯ বছর বয়সী রেফারি এখন পর্যন্ত কোন ফাইনালই পরিচালনা করেননি। স্বাভাবিকভাবেই সেই ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রিয়াল টিভি। সেখানে প্রকাশ করা হয়েছে একটা সমীকরণ। যাতে বলা হচ্ছে বুরহোস মাঠে থাকলে ৮১ শতাংশ ম্যাচ বার্সা জিতে আর রিয়ালের জয়ের পরিসংখ্যান ৬৪ শতাংস।
সেভিলের লা কার্তুজা স্টেডিয়ামে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা ছিল রিয়াল বস আনচেলত্তি এবং মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচের। তারপরে অনুশীলন করার কথা ছিল। কিন্তু ক্লাব জানায় যে তারা এই ইভেন্টগুলোতে অংশ নেবে না এবং অফিসিয়াল ফটো সেশনেও উপস্থিতও হবে না।

এতে গুঞ্জন ওঠে যে, রিয়াল মাদ্রিদ হয়তো ফাইনাল বয়কট করতে পারে। রিয়াল একটি বিবৃতিতে জানায়, “আমাদের দল কখনোই কালকের (শনিবারের) ফাইনাল ম্যাচ না খেলার কথা ভাবেনি। আমাদের ক্লাব মনে করে যে, এই ম্যাচের জন্য নিযুক্ত রেফারিরা ম্যাচের ঠিক ২৪ ঘন্টা আগে যেসব দুর্ভাগ্যজনক ও অনুপযুক্ত মন্তব্য করেছেন, তা বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ এই ক্রীড়া ইভেন্টকে কলঙ্কিত করতে পারে না, যা কোটি-কোটি মানুষ দেখবে। আমরা সেই সকল সমর্থকদের প্রতিও সম্মান জানাই যারা সেভিইয়া যাত্রার পরিকল্পনা করছেন কিংবা ইতিমধ্যেই সেখানে অবস্থান করছেন।”

“রিয়াল মাদ্রিদ বিশ্বাস করে যে, ফুটবলের মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যদিও আমাদের ক্লাবের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ আজ আবারো প্রদর্শিত হয়েছে এই রেফারিদের মাধ্যমে।”

রিয়াল মাদ্রিদ রেফারিং প্যানেলে পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়েছে। যদিও স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (আরএফইএফ) জল আর ঘোলা না করতে জানায় স্পষ্ট জানায় যে, তারা এমন কোনো অনুরোধ পায়নি।

রিয়াল মাদ্রিদ রেফারিদের মন্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দেয় এবং বলে মন্তব্যগুলো ‘পরিকল্পিতভাবে’ করা হয়েছে, “ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে, রিয়াল মাদ্রিদ আশা করে যে আরএফইএফ এবং রেফারিং প্রতিষ্ঠান যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যেসব প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষায় তারা দায়বদ্ধ।”

রিয়াল মাদ্রিদ টিভিতে রেফারি দে বুরহোসের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে সমালোচনাও করা হয়। তিনিই ২০১৭ এবং ২০২৩ সালের সুপারকোপা ফাইনালে রিয়াল-বার্সা ম্যাচ পরিচালনা করেছিলেন। যদিও সুপারকোপার উন্মাদনাকে কোপা দেল রে’র সঙ্গে মেলাতে রাজি নয় লস ব্ল্যাঙ্কসরা।

ফেব্রুয়ারিতে এস্পানিওলের বিপক্ষে ১-০ গোলের পরাজয়ের পর রেফারিং নিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় মাদ্রিদ। সেই ম্যাচে ডিফেন্ডার কার্লোস রোমেরো কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ফাউল করলেও লাল কার্ড পাননি। ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ স্পেনে রেফারিং ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এবং জানান, তিনি চান ইংলিশ রেফারিরাও স্পেনে ম্যাচ পরিচালনা করুক।

এখন প্রশ্ন, রেফারি কি করেছেন? রেফারি দে বুরহোস বলেন, “যখন আপনার সন্তান স্কুলে যায় এবং তাকে বলা হয় তার বাবা চোর, তখন সেটা খুব কষ্টদায়ক। আমি শুধু চাই আমার ছেলে গর্ববোধ করুক তার বাবার ব্যাপারে। আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে আমরা কোথায় যাচ্ছি।”

ভিএআর পাবলো গঞ্জালেস ফুয়ের্তেস বলেন, “আমরা প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় অপমান, হুমকি সহ্য করছি। কিছু ক্লাবের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপক শুধুমাত্র ভালো সাড়া পাওয়ার আশায় আমাদের পেশার বিরুদ্ধে কথা বলে। যখন কেউ বলে ‘চুরি হয়েছে’, তখন এর প্রভাব পড়ে সেই ছোট ছেলেমেয়ের উপর যারা মাঠে রেফারি হতে চায়। আমরা এই অবস্থা আর সহ্য করবো না। শিগগিরই আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি। ইতিহাস সৃষ্টি হবে।”

রিয়াল মাদ্রিদ বর্তমানে বার্সেলোনার চেয়ে চার পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে লা লিগার শীর্ষে। বাকি আছে পাঁচটি ম্যাচ। তাদের এখনো ঘরোয়া ডাবল জয়ের সুযোগে আছে। যদিও চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে তারা কোয়ার্টার ফাইনালে আর্সেনালের বিপক্ষ রীতিমত বিধ্বস্ত হয়ে বিদায় নিয়েছে। অন্যদিকে বার্সেলোনা এখনো ট্রেবল জয়ের দৌঁড়ে আছে।

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প য ন শ ফ টবল ফ ইন ল আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ফিরিয়ে দাও’ থেকে ‘ধূসর সময়’: সিডনিতে একই মঞ্চে মাইলস ও আর্টসেল

সিডনির বসন্তের সন্ধ্যা। লিভারপুলের হুইটল্যাম লেজার সেন্টারের বাইরে তখন লম্বা লাইন—হাতে পতাকা, কাঁধে ব্যাগ, চোখে প্রত্যাশা। সাউন্ডচেকের শব্দ ভেসে আসছে বাইরে। ভেতরে যেন উন্মুখ এক ‘সাগর’, যেখানে মিশে আছে দুই প্রজন্মের মুখ, কণ্ঠ আর স্মৃতি। শনিবার রাতটি হয়ে উঠেছিল প্রবাসী বাঙালিদের জন্য এক ব্যতিক্রমী উৎসব—বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের দুই যুগের দুই প্রতীক, মাইলস ও আর্টসেল; প্রথমবারের মতো একই মঞ্চে গান করল সিডনিতে।
‘গ্রিনফিল্ড এন্টারটেইনমেন্ট’ আয়োজিত এই ‘মিউজিক ফেস্ট’ ঘিরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা যেন উপচে পড়ল সেই রাতে। টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পরপরই সব শেষ। অনুষ্ঠান শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিম উপশহর লিভারপুলের রাস্তাগুলো ভরে গেল গানের ভক্তে।

আয়োজনের আগে ভিডিও বার্তায় মাইলস জানায় তাদের উচ্ছ্বাস। ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য হামিন আহমেদ বলেন, ‘সিডনি বরাবরই আমাদের কাছে বিশেষ কিছু। সম্ভবত ১৯৯৬ সালে আমরাই প্রথম বাংলাদেশি ব্যান্ড হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় পারফর্ম করি। এরপর এ নিয়ে অন্তত পঞ্চমবারের মতো সিডনিতে এলাম। এখানকার দর্শকদের ভালোবাসা সব সময়ই অবিশ্বাস্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতাম এটি স্মরণীয় একটি আয়োজন হতে যাচ্ছে। আমরা চেয়েছি সবাই একসঙ্গে গাইবে, চিৎকার করবে—ভক্তরা সেটাই করেছেন।’ গিটারিস্ট তুজো যোগ করেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটি শহরে ট্যুর করছি, কিন্তু সিডনির আবহ একেবারেই আলাদা। দর্শকেরা আমাদের রাতটিকে স্মরণীয় করে দিয়েছেন।’

মঞ্চে আর্টসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ