যুদ্ধশিবিরে আজ আমার ২৯তম দিন। ইউক্রেনের রুশনিয়ন্ত্রিত শহর দোনেৎস্কে আছি। প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুভয়। এই তো সেদিন আমাদের গাড়িবহরে গোলা আঘাত হানল। দিগ্বিদিক ছুটে কোনোরকম বেঁচে ফিরলাম। এখানে রুশ সৈনিক আছেন ৩০-৪০ জন। আমি সবার ছোট বলে সবাই স্নেহ করেন। অভিযানে না নিয়ে বেশির ভাগ দিন শিবিরেই কাজ করি। কমান্ডারের নির্দেশে কখনো অস্ত্রশস্ত্র, কখনো গোলাবারুদ টানি, আবার কখনো সৈনিকদের খাবার সরবরাহ করি।

বিভিন্ন যুদ্ধশিবিরে আমার মতো আরও কয়েকজন বাংলাদেশি আছেন। তাঁদের অনেকের সঙ্গেই গোপনে যোগাযোগ আছে। সেদিন একজনের মৃত্যুর খবরও পেলাম। দুর্বিষহ জীবন, তবু বাড়িতে কথা বলার সময় হাসিমুখে থাকি। মা-বাবাকে বলতেও পারি না কোথায় আছি, কত কষ্টে সবার অগোচরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলছি।

অথচ এক সুন্দর জীবনের স্বপ্ন নিয়ে রাশিয়ায় এসেছিলাম।

উন্নত জীবনের খোঁজে

এসএসসির পর থেকেই ইউরোপের কোনো একটি দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কাজসহ উত্তর মেসিডনিয়ার ভিসা করিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে আমার পাসপোর্টও নিয়ে যান এক দালাল।

পরে গত বছর দালাল জানান, মেসিডনিয়ায় ভিসা হবে না। রাশিয়ায় ভালো একটি কোম্পানিতে উচ্চ বেতনে কাজের একটি ভিসা আছে। মাসিক বেতন ৪০-৪৫ হাজার রুবল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০–৭০ হাজার টাকা)। খরচ লাগবে আট লাখ টাকা। আমার পরিবার তাতেও রাজি।

আমার তখন এইচএসসি পরীক্ষা চলছিল। এর মধ্যেই গত বছর রাশিয়ায় আসি। মাস দেড়েক পর চীন সীমান্তবর্তী ব্লাগোভেশচেনস্ক শহরের এক প্রতিষ্ঠানে আমাকে কাজে পাঠানো হয়। রাশিয়ায় ওয়েল্ডিংয়ের কাজে পাঠানো হলেও সিনোপ্যাক নামে চীনা কোম্পানিতে আমি ছিলাম ইলেকট্রিশিয়ান। তারপরও মেনে নিই। কাজ শেখায় মনোযোগী হই।

মাস দুয়েক ভালোই চলছিল। এরপর বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ভেবেছিলাম, হয়তো সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে, ঠিক হয়ে যাবে; কিন্তু না, ফেব্রুয়ারির শুরুতে কোম্পানি পাসপোর্ট হাতে ধরিয়ে বের করে দেয়। শুধু আমি না, আরও প্রায় ২০ জনের সঙ্গেও একই কাজ করে। তাঁদের দুজন নেপালি, দুজন ভারতীয়, বাকিরা বাংলাদেশি।

ইউক্রেনের মারিওপোলে রুশ ট্যাংক বহর.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

লবণশ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে

দেশে প্রায় ৪০ হাজার কৃষক পরিবার এবং ৫৫ হাজার দক্ষ শ্রমিক সরাসরি লবণ উৎপাদনে যুক্ত। আরও ৫ লাখের বেশি শ্রমিক এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে লবণ খাত দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই খাতের কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

‘দেশে লবণ খাতে কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় পরামর্শ সভা’ শিরোনামে সভাটির আয়োজন করে আইজেক প্রকল্প। আইজেক প্রকল্পের পূর্ণ নাম হচ্ছে ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর উইমেন অ্যান্ড ইয়ুথ ইন কক্সবাজার। কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বে ইনোভিশন কনসালটিং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ১৮৫ জন শ্রমিক ও কৃষককে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ৪৪৪ জনকে চিকিৎসাসহায়তা দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে ২টি হাসপাতাল ও ৬টি লবণ কারখানার সঙ্গে আইজেক প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান লবণকে ‘সাদা সোনা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য, অন্তর্ভুক্তিকরণ, ক্ষুদ্রঋণ ও আধুনিক প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে লবণ খাতকে শক্তিশালী করব।’ তিনি লবণশ্রমিকদের শ্রম অধিকার আইনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুনির হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সহায়তা দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে আরও সচেতনতা এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।

সভায় লবণচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা পানিশূন্যতা, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও অনিশ্চিত আয়ে ভুগি। আমাদের নিয়মিত চিকিৎসা ও নিরাপত্তা প্রয়োজন।’

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইনোভিশন কনসালটিংয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী শহীদ হাসান ফেরদৌস। আইএলও কক্সবাজার সাব অফিসের প্রধান রুচিকা বেহল লবণ চাষ ও আইজেক প্রকল্প নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ, বিসিকের লবণ বিভাগের প্রধান সরওয়ার হোসেন, ইনোভিশনের পোর্টফোলিও পরিচালক তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব‍্যবসায় কৌশল ও ইএসজি প্রধান ফিরোজ আলম তালুকদার, এসিআই লিমিটেডের ব‍্যবসায় ব‍্যবস্থাপক জিসান রহমান, প্রিটি কম্পোজিট টেক্সটাইলসের নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মাহবুব কামরান, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আবেদ আহসান সাগর, আইএলওর কারিগরি বিশেষজ্ঞ জনসন, আইএলওর ইআইএস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সাদ গিলানি।  

বক্তারা বলেন, লবণের বিশুদ্ধতা বাড়ানো এবং লবণভিত্তিক শিল্পের আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি। কাঁচা লবণের বিশুদ্ধতা ও আর্দ্রতা সমস্যা দূর করতে কাঠামোগত অদক্ষতার সমাধান প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ