ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গ করলে প্রার্থিতা বাতিল ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার কিংবা প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে পাস হওয়া ‘ডাকসু ও হল সংসদ বিধিমালা ২০২৫’—এ এসব বিধান বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিষয়ক কমিটির দেওয়া সুপারিশ সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বেশ কিছু বিধি চূড়ান্ত করেছে সিন্ডিকেট।

বিধি অনুযায়ী, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং দাখিলের সময় কোনো ধরনের মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে যেতে পারবেন না। মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় অন্য কোনো প্রার্থী বা ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা কোনো ছাত্রসংগঠনের কেউ কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবেন না। যানবাহন ব্যবহার করে শোডাউন বা মিছিল করা এবং কোনো ভোটারকে আনা-নেওয়া করা যাবে না। তবে রিকশা অথবা সাইকেল ব্যবহার করা যাবে।

প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে নির্বাচনের দিনের ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত প্রচার চালানো যাবে। তবে এ সময়ের মধ্যে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রচার চালাতে হবে। রাত ১০টার পর প্রচারে মাইক ব্যবহার করা যাবে না। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটার ও প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ কোনোভাবে কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রচার চালাতে পারবে না।

আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচন জুন মাসের মধ্যে হলে গ্রহণযোগ্য হবে, মত বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর২০ ঘণ্টা আগে

বিধিতে আরও বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো যাবে। তবে সেটা হতে হবে আইনসিদ্ধ আর ইতিবাচক পদ্ধতিতে। এ ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ কোনো কাজ করা যাবে না। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্রহনন, গুজব ও অসত্য তথ্য ছড়ানো থেকেও বিরত থাকতে হবে।

আরও বলা হয়েছে, সভা-সমাবেশ করার অনুমতি অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে নিতে হবে। একজন প্রার্থী বা তাঁর গ্রুপের পক্ষে প্রতিটি হলে একটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি প্রজেকশন মিটিং করতে পারবেন। হলের ভেতরে কিংবা ক্যাম্পাসে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা/রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অনুমোদিত স্থান ছাড়া কোনো সভা, সমাবেশ বা শোভাযাত্রা করা যাবে না।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে—এমন সড়কে সমাবেশ না করা, এমনকি কোনো মঞ্চ তৈরি না করার বিধি রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচনের পথনকশা প্রকাশ, মে মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন গঠন১৫ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)। ফলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে কোনো প্যানেল থাকছে না।

প্যানেল না দেওয়া ও সংগঠন হিসেবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বাগছাস বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব আল মাসনূন। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বাগছাসের পক্ষ থেকে কোনো প্যানেল দেওয়া হচ্ছে না। সংগঠন হিসেবেও নির্বাচনে আসবে না বাগছাস। তবে ব্যক্তিগত উদ্যাগে স্বতন্ত্রভাবে যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মাসনূন বলেন, আজ সন্ধ্যার মধ্যে বিবৃতি দিয়ে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণ জানানো হবে।

তবে আজ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার শেষ দিনে বাগছাসের অন্তত পাঁচজন নেতা স্বতন্ত্রভাবে বিভিন্ন পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের একজন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব আশরাফ চৌধুরী। তিনি কেন্দ্রীয় সংসদের ক্যারিয়ার উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে লড়বেন।

জানতে চাইলে আশরাফ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করব। অনেক আগে থেকেই ক্যারিয়ার-সংশ্লিষ্ট নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত আছি। এ কারণেই পদটি বেছে নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমিসহ পাঁচজন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তবে সংগঠন নির্বাচনে আসছে না। প্যানেলও দিচ্ছে না।’

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদকে অনেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির ছাত্রসংগঠন মনে করে থাকেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করেছিল বাগছাস। নাম ছিল শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম।

আরও পড়ুনমনোনয়ন নেওয়ার শেষ দিনে একটি হলে ছাত্রী সংস্থার প্যানেল১ ঘণ্টা আগে

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাগছাস-সমর্থিত প্যানেলের নাম ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’। এ প্যানেলকে সমর্থন দিয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ দুই নির্বাচনেই প্যানেলগুলো ভালো ফল আনতে পারেনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগছাসের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় ভালো ফল করতে না পারার প্রভাব চাকসু নির্বাচনেও পড়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

সম্প্রতি স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে প্রক্টরিয়াল বডি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রক্টরের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁর পদত্যাগসহ সাত দাবিতে অনশন করেন ৯ শিক্ষার্থী। পরে উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীদের।

বাগছাসের এক নেতা বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাগছাস নির্বাচনে প্যানেল না দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামী ১২ অক্টোবর চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার মোট ভোটার ২৭ হাজার ৬৩৭ জন। গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়নপত্র বিতরণ। আজ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার শেষ দিন।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মনোনয়নপত্র আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত জমা দেওয়া যাবে। যাচাই-বাছাই হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ সেপ্টেম্বর। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।

আরও পড়ুনমনোনয়নপত্র নিতে এসে স্লোগান, আচরণবিধি ভাঙলেন এক শিক্ষার্থী১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকসু নির্বাচন আয়োজনে বাজেট কত, খরচ যেসব খাতে
  • জকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর
  • ছাত্রশিবিরের ভরসা ওএমআর মেশিনে, ছাত্রদল চায় হাতে ভোট গণনা
  • গকসু নির্বাচন: জিএস প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
  • হল সংসদে মনোনয়নপত্র নিলেন ডাকসু ভিপি সাদেক কায়েমের ছোট ভাই
  • চাকসু ও হল সংসদে ২৩২ পদে মনোনয়নপত্র নিলেন ১ হাজার ৮৮ জন প্রার্থী
  • চাকসু: ফয়জুন্নেছা হলে ১৪ পদে ১৪ মনোনয়নপত্র বিক্রি
  • চাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ
  • মনোনয়নপত্র নিতে এসে স্লোগান, আচরণবিধি ভাঙলেন এক শিক্ষার্থী
  • রাকসুর নির্বাচনি প্রচার শুরু, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা