পুলিশ সপ্তাহ শুরু মঙ্গলবার, নির্বাচনী নির্দেশনা পাবে আইনশৃঙ্খলা ব
Published: 28th, April 2025 GMT
পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল)। পুলিশ সপ্তাহ শুরুর আগে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত ও একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্দেশনা চূড়ান্ত করেছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সপ্তাহের প্রস্তুতি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবারের পুলিশ সপ্তাহ হবে তিন দিনের। এবার দাবি-দাওয়ার পসরাও থাকছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট ৬টি দাবি পেশ করবে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করে জনসাধারণের জন্য কমপ্লেইন সেল ও পুলিশের জন্য অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি ও এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা প্রদান, স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠনসহ ৬টি দাবি তুলে ধরা হবে।
আরো পড়ুন:
মোবাইল গেমে আসক্ত এইচএসসি পরীক্ষার্থীর কাণ্ড
মাধবপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১
প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১২টি দাবি জানানো হয়েছিল।পরবর্তীতে কয়েক দফার বৈঠক শেষে ৬টি দাবি চূড়ান্ত করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা কী হবে, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে পুলিশকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহে। তবে এবার কোনো প্যারেড থাকছে না। এবার শিল্ড প্যারেডসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতা থাকছে পুলিশ সপ্তাহে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মিলন বসবে না। থাকছে না প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কোনো সেশন।
পুলিশের পক্ষ থেকে যেসব দাবি আসতে পারে
১.
২. এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা।
৩. স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠন।
৪. পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহসহ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা।
৫. একই পদে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অবসরকালে সুপারনিউমারারি পদোন্নতি প্রদান (কনস্টেবল হতে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত)।
৬. মৃতদেহ দাফন/সৎকারের সুবিধার্থে পুলিশের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দ প্রদান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, “জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন হতো। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে হচ্ছে। এবারই প্রথম বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে পুলিশের নীতি-নির্ধারকদের নিয়ে ‘কেমন পুলিশ দেখতে চান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন থাকছে। পুলিশ সপ্তাহ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা ও কাজ কী হবে, তার নির্দেশনা পাওয়া যাবে। তাছাড়া পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, মাঠপর্যায়ের পুলিশের সমস্যাগুলো বিশদভাবে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে। আর এখন থেকে সারা বছরই সাহসিকতা ও পেশাদারি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্যদের পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে এবং নগদ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হবে।”
পুলিশ সপ্তাহের তিন দিনে যা থাকছে
প্রথমদিন: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ উদ্বোধন করবেন।তিনি পুলিশের সব ইউনিটের সঙ্গে ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির স্টল উদ্বোধন করবেন। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনার ওপর ওয়ার্কশপ হবে। এসবির কার্যক্রমের বিষয়ে প্রেজেন্টেশন হবে।
দ্বিতীয় দিন: পুলিশের সাথে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও সচিবদের সম্মেলন হবে। সিআইডি, র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ, পিবিআই, এটিইউসহ পুলিশের সব ইউনিটের কার্যক্রম সম্পর্কে পৃথক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। প্রতিটি ইউনিট তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও উপস্থাপন করবে।
শেষ দিন: পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মতবিনিময় করবেন। পুনাক সমাবেশ ও আনন্দ মেলা হবে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে ‘কেমন পুলিশ দেখতে চান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা করবেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ৬২ পুলিশ সদস্যকে দেওয়া হবে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম)। পুলিশ সপ্তাহ ২৯ এপ্রিল শুরু হয়ে শেষ হবে ১ মে।
ঢাকা/এমআর/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত উপদ ষ ট র জন য করব ন ইউন ট
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।