বাংলাদেশের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ নৃত্যকলা। লোকনৃত্যের ছন্দে বহু বছর ধরে বাংলার মানুষ তাদের আনন্দ, দুঃখ, আশা ও প্রার্থনার প্রকাশ ঘটিয়েছে। বাংলার মাটির সঙ্গে মিশে থাকা বাউল, জারি, মণিপুরি, ধামাইল, ঝুমুর, লাঠি কিংবা গম্ভীরা নাচের ঐতিহ্য আজও সাক্ষ্য দেয়– এই শিল্প কেবল বিনোদনের জন্য নয়। বরং সমাজ গঠন, ধর্মীয় প্রার্থনা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে! কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলার কারণে আমাদের এই সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আজ নিঃশব্দে হারিয়ে যেতে বসেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পীরা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন। পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, সামাজিক স্বীকৃতির সংকট ও আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকেই এই শিল্পচর্চা থেকে দূরে সরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পী তাদের স্বপ্ন পূরণের আগেই এক প্রকার পথ বদলাতে বাধ্য হন। কারণ আমাদের সমাজ এখনও নাচকে একটি শিল্প হিসেবে যথেষ্ট মর্যাদা দিতে শেখেনি। বরং একে বিনোদনের একটি মাধ্যম হিসেবেই মনে করছে এবং এই শিল্পচর্চাকারীদের শ্রম বা নিষ্ঠার কোনো অর্থনৈতিক ও সামাজিক মূল্য দেওয়া হচ্ছে না।
নাচ কেবল আনন্দ বা বিনোদনের মাধ্যম নয়। বরং একে শিক্ষার অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। নিয়মিত নাচের চর্চা করা হলে তা শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করে, শৃঙ্খলা ও সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ায়। সব মিলিয়ে এটি তাদের লেখাপড়ার ফলাফলের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যারা নিয়মিত নাচের চর্চা করে তাদের অনেক ধৈর্য, মনোযোগ, শরীর ও মনের মধ্যে সংযোগ ধরে রাখার দক্ষতা প্রয়োজন, যা যে কোনো শিক্ষার্থীর সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
শিশুরা নাচের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ করতে শেখে; আত্মবিশ্বাস অর্জন করে ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পায়। দলগত নৃত্যচর্চা তাদের মধ্যে সহযোগিতা, সম্মানবোধ ও সামাজিক সংবেদনশীলতা তৈরি করে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত নাচ চর্চা শিশুর সামগ্রিক বিকাশে সহায়ক হয় এবং একটি পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ের পেশাদার নৃত্যশিল্পীদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব তৈরি করে, তা একদিকে যেমন ছাত্রছাত্রীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি সুযোগ তৈরি করবে, অন্যদিকে শিল্পীদের সম্মান ও পরিচিতি প্রদানেরও একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। স্কুলভিত্তিক সাংস্কৃতিক উৎসব, প্রতিযোগিতা ও ট্যালেন্ট শোর আয়োজন করলে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিভা সবার সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাবে। সমাজ উপলব্ধি করতে পারবে– ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে যে কেউ নাচের চর্চা করতে পারে। এর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।
এ কথাটি মনে রেখে প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। এই দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য শিল্প হিসেবে নাচকে সম্মানের স্থানে নিয়ে যাওয়া; মানুষকে নৃত্যচর্চার গুরুত্ব বোঝানো এবং নৃত্যশিল্পীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা। দিনটি আমাদের এই বিষয়ে চিন্তা করার সুযোগ করে দেয়, নাচকে একটি শিল্প হিসেবে আমরা কেমন মর্যাদা দিচ্ছি এবং কীভাবে আবার নাচকে কেন্দ্র করে সমাজে প্রাণ ফিরিয়ে আনা যায়। বাংলাদেশে নৃত্যশিল্পের পুনর্জাগরণের জন্য আমাদের সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার ও মিডিয়া সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। শিল্পীদের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান এবং সামাজিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে না পারলে আমাদের এই ঐতিহ্য কেবল পাঠ্যবই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থেকে যাবে!
পার্থ প্রতিম দাস: হেড অব ডিপার্টমেন্ট, ড্যান্সগ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।