মোট ৬২টি ম্যাচের বাকি আছে একটি। গোল হয়েছে ১৯২টি। খেলা দেখতে মাঠে এসেছেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। গত প্রায় এক মাসে ক্লাব বিশ্বকাপ অনেক প্রশ্নের জন্ম দিলেও উত্তর মিলেছে কমই।

তবে একটি প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিতভাবে পাওয়া গেছে—পিএসজি এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা ক্লাব। এমনকি যদি তারা চেলসির কাছে ফাইনালে হেরেও যায়, তবু বিশ্বসেরার অবস্থান থেকে পিএসজিকে সরানোর সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সই সবার ওপরে তুলেছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের।

ক্লাব ফুটবলে পিএসজির দাপুটে অবস্থানের সর্বশেষ প্রমাণ ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে তাদের ৪–০ গোলে জয়ের ম্যাচটি। লুইস এনরিকের দলের সামনে সেদিন ১৫ বারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা দাঁড়াতেই পারেনি। সেই সঙ্গে এই ম্যাচটি ক্লাব বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বাকি দলগুলোর সঙ্গে পিএসজির পার্থক্যও যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনরিয়ালকে চার গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে পিএসজি১০ জুলাই ২০২৫

 একটা সময় পর্যন্ত ইউরোপে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে ছিল পিএসজি। নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও লিওনেল মেসিকে একসঙ্গে খেলিয়েও সুবিধা করতে পারেনি তারা। কিন্তু এই তিনজন ক্লাব ছাড়তেই এনরিকের হাত ধরে আমূল বদলে যায় ফরাসি ক্লাবটি। এবার প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে এখন এনরিকের দল অপেক্ষায় ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরার।

পিএসজির এই বদলে যাওয়ার মূল নায়ক এনরিকে। বড় তারকারা ক্লাব ছাড়লেও হাল ছাড়েননি তিনি। উসমান দেম্বেলে, আশরাফ হাকিমি, নুনো মেন্দেস এবং খিচা কাভারাস্কেইয়ার মতো তারকাদের নিয়ে অবিশ্বাস্য এক দল গড়ে তুলেছেন। যারা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ইন্টার মিলানকে উড়িয়ে দিয়েছিল ৫–০ গোলে। এরপর ক্লাব বিশ্বকাপেও চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স দেখিয়ে উঠেছে ফাইনালে।

ক্লাব বিশ্বকাপে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪–০ গোলের জয় দিয়ে মিশন শুরু করেছিল পিএসজি। ব্রাজিলিয়ান ক্লাব বোতাফোগোর কাছে অপ্রত্যাশিত হারলেও সেটি যে একটা অঘটন ছিল, তা প্রমাণ করেছে নিজেরাই। পরে শেষ ষোলোয় লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামির বিপক্ষে পিএসজি জিতেছে ৪–০ গোলে। কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়েছে ২–০ গোলে এবং সেমিফাইনালে রিয়ালের বিপক্ষে পেয়েছে ৪–০ গোলের জয়।

ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের ঝলক নয়, পিএসজির এই বদলে যাওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে দলীয় ঐক্য। সাম্প্রতিক সময়ে দলগত নৈপুণ্যে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর এমন দৃষ্টান্ত আর কোনো দলই দেখাতে পারেনি। তবে এটা তো কেবল শুরু। কে জানে, হয়তো এর মধ্য দিয়ে ইউরোপে পিএসজি–যুগের শুরুও হয়ে গেল।
এদিকে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার আগেই অপ্টা পাওয়ার র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে পিএসজি। মেটলাইফ স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দাপুটে জয়ের পর লিভারপুলকে টপকে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে প্যারিসের ক্লাবটি।

আরও পড়ুন‘ওদের সিদ্ধান্ত, আমার নয়’—রিয়ালকে খোঁচা হাকিমির১০ জুলাই ২০২৫

নভেম্বরের শেষ দিকে অপ্টা পাওয়ার র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে উঠে আসে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল। গত বুধবার পর্যন্ত তারা সেই অবস্থান বেশ ভালোভাবেই ধরে রাখে। তবে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা পিএসজি শেষ পর্যন্ত দুইয়ে নামিয়ে দিয়েছে লিভারপুলকে। লিগ ‘আঁ’, ফ্রেঞ্চ কাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পাশাপাশি ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠাও পিএসজির শীর্ষে ওঠায় ভূমিকা রেখেছে।

পিএসজি ও লিভারপুলের পর এই তালিকায় তৃতীয় আর্সেনাল। গত মৌসুমটা ভুলে যাওয়ার মতো কাটালেও ৪ নম্বর স্থান ধরে রেখেছে ম্যানচেস্টার সিটি। এরপর ৫ নম্বরে আছে লা লিগা ও কোপা দেল রে জেতা বার্সেলোনা। সিটির মতো শূন্য হাতে মৌসুম শেষ করা রিয়াল মাদ্রিদ আছে তালিকার ছয়ে। রিয়ালের পরের স্থানটি জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখের এবং ৮ নম্বর স্থানটিতে ক্লাব বিশ্বকাপের অন্য ফাইনালিস্ট চেলসি অবস্থান করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ল ব ব শ বক প র অবস থ ন প এসজ র ফ ইন ল এনর ক ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ

বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানোর নামে মানব পাচারের ঝুঁকি রোধ এবং যোগ্য খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ৯ অক্টোবর এনএসসি এক চিঠিতে ফেডারেশনগুলোকে জানিয়েছে, এখন থেকে বিদেশে ক্রীড়া দল পাঠানোর আগে ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ফ্লাইটের কমপক্ষে ১০ দিন আগে জিওর (সরকারি আদেশ) জন্য প্রস্তাব পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও পারফরম্যান্স–সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রও এনএসসিকে দিতে হবে।

অভিযোগ আছে, কিছু ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অনেক বছর ধরেই দলের সঙ্গে ভুয়া খেলোয়াড়-কর্মকর্তা পাঠিয়ে আদম পাচার করে আসছে। দুই একটা ঘটনা সামনে এলেও এসবের বেশির ভাগই থেকে যায় আড়ালে। ছোট খেলাগুলো থেকেই এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসে। এনএসসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত এ ধরনের অপকর্ম ঠেকাতেই বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ফ্লাইটের অন্তত ১০ দিন আগে জিওর প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম করা হয়েছে। এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) আমিনুল এহসান সরাসরি তা না বললেও তাঁর কথায়ও সে আভাস আছে, ‘আমি বলব না শুধু আদম পাচার রোধ করতে এই নিয়ম করেছি। তবে কোথাও কোথাও এসব খেলার নামে মানব পাচারের প্রশ্ন চলে আসে।’

অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।ফারহাদ জেসমিন, সাবেক অ্যাথলেট ও বিএও অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান

এনএসসির কাছে ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন এত দিন জিওর জন্য খেলোয়াড়দের নামই শুধু পাঠাত। যাঁর নাম দেওয়া হতো, তিনি আসলেই খেলোয়াড় কি না বা খেলোয়াড় হলে তাঁর যোগ্যতা কী বা যোগ্য কাউকে বাদ দিয়ে অযোগ্য কাউকে নেওয়া হচ্ছে কি না, এসব যাচাই–বাছাই করা হতো না। এনএসসি তাই জানত না কিসের ভিত্তিতে একজন খেলোয়াড়কে দলে নির্বাচিত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে এনএসসিকে এসব দিতে হবে।

জিওর জন্য আবেদনকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগে বলে ১০ দিন আগে তালিকা চাওয়ার যুক্তি আছে। কিন্তু পারফরম্যান্স আর ফিটনেসের তথ্যপ্রমাণও পাঠানোর নিয়মটা একটু অভিনবই, যা নিয়ে অবশ্যই নানা রকম প্রশ্ন তোলা যায়। তবে জিওর জন্য ফ্লাইটের ১০ দিন আগে নাম চাওয়ার নিয়মটাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক অ্যাথলেট ফারহাদ জেসমিন লিটি বলেছেন, ‘অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।’

আরও পড়ুনবিশ্বকাপের আগে সৌদি লিগে খেলতে চেয়েছিলেন মেসি, সৌদি সরকারের ‘না’১১ ঘণ্টা আগেআদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।

ক্রীড়াঙ্গনে স্বজনপ্রীতি ঠেকাতেও এ নিয়ম ভূমিকা রাখবে বলে ফারহাদ জেসমিনের আশা, ‘অনেক ফেডারেশন অনেক সময় যোগ্যতার বিচার না করে নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড় নিয়ে যায়। দেখে মনে হয়, বিদেশভ্রমণই মুখ্য, পারফরম্যান্স মুখ্য নয়।’ বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। কারণ, এনএসসির জানার অধিকার আছে, বিদেশে টুর্নামেন্টে আমরা কাদের নিয়ে যাচ্ছি।’ সম্প্রতি হকি তারকা রাসেল মাহমুদকে বয়সের অজুহাতে বাদ দেয় হকি ফেডারেশন। এ নিয়ে সমালোচনা হলে এনএসসিকে বিষয়টি তদন্তও করতে হয়।

এনএসসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট-ফুটবলসহ সব খেলাতেই বিদেশে দল পাঠানোর জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। কিন্তু আদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।

আরও পড়ুনআগে চা পরে লাঞ্চ—বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের শতবর্ষ পুরোনো এক রীতি১৫ ঘণ্টা আগে

এনএসসির পরিচালক আমিনুল এহসান অবশ্য তা মনে করেন না, ‘প্রায় প্রতিদিনই এনএসসির কাছে অনেক খেলোয়াড় অভিযোগ করেন, কোনো না কোনো কর্মকর্তার অপছন্দের কারণে নাকি তিনি দল থেকে বাদ পড়েছেন। এ কারণেই খেলোয়াড় নির্বাচনের তথ্যগুলো এনএসসির জানা থাকলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে একটা উত্তর দেওয়া যায়। এটা ফেডারেশনের কাজে হস্তক্ষেপ নয়। স্বচ্ছতার স্বার্থে এনএসসি তা জানতে চাইতে পারে।’

আরও পড়ুনঅনুশীলনে বলের আঘাতে অস্ট্রেলিয়ার ১৭ বছর বয়সী ক্রিকেটারের মৃত্যু২১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অ্যালবামের গল্প বলবে ‘পেনোয়া’
  • খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ
  • বোলাররা ভাসান, ব্যাটসম্যানেরা ডোবান—আজ কী করবে বাংলাদেশ