যে যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের দুই লাখ মানুষের জীবন রক্ষা পায়
Published: 29th, April 2025 GMT
তেলের বাজারমূল্যসহ বেশ কিছু বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী অথচ ছোট দেশ কুয়েতের ওপর নাখোশ ছিলেন ইরাকের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। ১৯৯০ সালের ২ আগস্ট রাত ২টার সময়ে প্রায় ২ লাখ ইরাকি সৈন্য ৩০০টি ট্যাংক নিয়ে কুয়েত দখল করে। কুয়েতের ১৬ হাজার সেনার পক্ষে প্রায় কোনো প্রতিরোধই গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। খুব সহজেই একটি স্বাধীন দেশ দখল করে নেওয়ার এই ঘটনা রাতারাতি সারা বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। সে সময় কুয়েতের আমির শেখ জাবির আল-আহমাদ আল-জাবির আল-সাবা, তাঁর মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য এবং লাখখানেক কুয়েতি দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। অধিকাংশই গিয়েছিলেন সৌদি আরবে।
জাতিসংঘে এ নিয়ে প্রস্তাব পাসের পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি ইরাকে বিমান হামলা শুরু করে। অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম নামের অতি সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধ শেষ হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। ১ মাস ১১ দিনের ওই যুদ্ধে ইরাকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ সামরিক বাহিনী থাকা সত্ত্বেও এমন পরাজয়ের বিষয়টি কল্পনাও করেননি সাদ্দাম হোসেন। ইরাকের পরাজয় ও কুয়েত দখলমুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে অভিযানের ইতি টানে মার্কিন সামরিক বাহিনী। কিন্তু কে জানত, অপারেশন ডেজার্ট স্টর্মে অংশ নেওয়া মার্কিন মেরিনদেরই ভিন্ন এক অভিযানে নামতে হবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। অভিযান শেষে সবাই তখন দেশে ফেরার দিন গুনছিলেন।
প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ বিশ্ববাজারে তেলের বাজারকে অস্থির করে তুলেছিল। যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় বিপাকে পড়েছিল অনেক ছোট অর্থনীতির দেশ। তবে এই যুদ্ধ বাংলাদেশের লাখো মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কী? কেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর ইতিহাসের সঙ্গে এখনো বাংলাদেশের নাম জড়িয়ে আছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল।
মার্কিন উপগ্রহচিত্রে ১৯৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়। ‘এঞ্জেলস ফ্রম দা সি : রিলিফ অপারেশন ইন বাংলাদেশ’ বই থেকে নেওয়া।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবারের আটজনকে হারানোর স্মৃতি এখনো ভোলেননি মরিয়ম-কালাম দম্পতি
১৯৯১–এর ঘূর্ণিঝড়ে নিজেদের এক মেয়েসহ পরিবারের আটজন সদস্যকে হারান আবুল কালাম ও মরিয়ম বেগম দম্পতি। ৩৪ বছর পরও এখনো ভয়াল সেই স্মৃতি ভুলতে পারেননি তাঁরা। এখনো ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে পড়লে দুজন আঁতকে ওঠেন।
আবুল কালাম ও মরিয়ম বেগম চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার উপকূলীয় জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের হাজি চাঁদ মিয়া মাঝির বাড়ির বাসিন্দা। গতকাল সোমবার বাড়িতে গিয়ে দেখা হয় দুজনের সঙ্গে। আবুল কালাম ২০১৮ সালে অসুস্থ হয়ে বাক্শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। অবশ হয়ে যায় তাঁর দুটি হাতও। তিনি কথা বলতে না পারায় মরিয়ম বেগম ঘটনার বর্ণনা করেন।
মরিয়ম জানান, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন তাঁর স্বামী, এক কন্যা, শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে যে যাঁর মতো ছুটতে থাকেন। সকালে মরিয়ম দেখেন, চারপাশে শুধু লাশ আর লাশ। পরনের কাপড় নিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজন স্বজনদের খুঁজতে থাকেন। ঘরের ভেতরেই পান তাঁর মেয়ে, শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ-দেবরসহ পরিবারের ছয় সদস্যের লাশ। পরিবারের আরও দুই সদস্যের সন্ধান আর পাননি। মরিয়ম বলেন, ‘সব কটি লাশ মাটি খুঁড়ে এক কাপড়ে দাফন করা হয়। কাফনের কাপড় ছাড়া লাশগুলো মাটিচাপা দেওয়া হয়।’
নিজের এক মেয়েকে কীভাবে রক্ষা করেন, সেই বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমার মেয়ে তানজিনার বয়স তখন চার বছর। তার পরনের কাপড় দাঁতে চেপে ধরে তাকে নিয়ে গাছে উঠে যাই। তখন মনে হয়েছিল, মেয়ে বুঝি মারা গেছে। তবে মেয়ে শেষ পর্যন্ত প্রাণে রক্ষা পেয়েছিল’। মরিয়ম আরও বলেন, ‘এরপর ৩৪ বছর কেটে গেছে। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, আরেক ছেলের জন্য কনে খুঁজছি। তবু সেই দিনগুলোর কথা ভুলতে পারি না।’
আনোয়ারা উপকূলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের কারণে এখনো জলোচ্ছ্বাসে প্রাণহানির ঝুঁকি রয়ে গেছে