গোপন নথিতে স্ত্রীকে লেখা লাদেনের চিঠি, মুসলিম রীতিতে দাফনের ঘটনা
Published: 2nd, May 2025 GMT
২০১১ সালের মে মাসের ২ তারিখ। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সদর্পে ঘোষণা দেন, আল–কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এ মানুষটির খোঁজে হন্যে হয়ে ছুটছিলেন মার্কিন গোয়েন্দারা। অভিযোগ—২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ হামলার মূলহোতা ছিলেন ওসামা বিন লাদেন।
‘নাইন–ইলেভেন’ নামে পরিচিত ওই হামলার পর সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের চোখে বিশ্বের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ হয়ে উঠেছিলেন ওসামা বিন লাদেন। এরপর সন্ত্রাসবাদ দমনের কথা বলে আটঘাট বেঁধে যুদ্ধে নামে দেশটি। হামলা চালায় ইরাক ও আফগানিস্তানে। এই আফগানিস্তানেই দীর্ঘ সময় ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। মার্কিনিদের চোখে ধুলো দিয়ে সেখানে বহুদিন বসবাস করেছিলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে খোঁজ পাওয়া যায় আল–কায়েদাপ্রধানের। এলাকাটির নাম অ্যাবোটাবাদ—রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ১০০ কিলোমিটারের মতো দূরে। সব হিসাব মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর ২০১১ সালের ২ মে রাতে ওসামা বিন লাদেনের বসবাস করা বাড়িটিতে অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর একটি দল। গুলি করে হত্যা করা হয় তাঁকে।
ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার সময় অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়িটি থেকে বহু ব্যক্তিগত নথিপত্র সংগ্রহ করেছিলেন মার্কিন সেনারা। অতি গোপনীয় সেসব তথ্যের অনেকগুলোই পরে একে একে প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এমনকি আল–কায়েদাপ্রধানের মরদেহ নাকি ইসলামের রীতি অনুযায়ী গোসল দিয়ে কাফন পরানো হয়েছিল—সে তথ্যও উঠে এসেছে এসব নথিতে।
অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়িতে ওসামা বিন লাদেনের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের মধ্যে একটি কাগজে আল-কায়েদায় যোগ দেওয়াসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য লেখা ছিল।যুক্তরাষ্ট্রের বয়ানে ইতিহাসের অন্যতম ‘কুখ্যাত এই সন্ত্রাসী’ নেতার মৃত্যু দিনে চলুন জেনে নেওয়া যাক তাঁর মরদেহ নিয়ে কী করেছিল মার্কিন বাহিনী, অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়িটি থেকে পাওয়া ব্যক্তিগত নথিপত্রে কী ছিল, আর সব শেষে থাকবে মৃত্যুর ১৪ বছর পরে এসেও ওসামা বিন লাদেনকে নিয়ে কীভাবে নেটফ্লিক্স ঝামেলায় পড়েছে—এমন কিছু তথ্য।
অ্যাবোটাবাদের এই বাড়িতে হত্যা করা হয় ওসামা বিন লাদেনকে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ক য় দ
এছাড়াও পড়ুন:
১০ বছরে বিকাশের আয় বেড়ে ৯ গুণ, মুনাফা ১৭ গুণ
মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা বা এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের জন্য ২০২৪ সালটি ছিল রেকর্ডের বছর। এ বছর প্রতিষ্ঠানটির আয় প্রথমবারের মতো পাঁচ হাজার কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো মুনাফা ছাড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকার ঘর। সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদন থেকে বিকাশের রেকর্ড আয় ও মুনাফার এই তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শেষে বিকাশের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৮ কোটি টাকায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিকাশের আয় ৮৬৭ কোটি টাকা বা ২১ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি গত বছর শেষে প্রতিষ্ঠানটির প্রথমবারের মতো ৩১৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিকাশের মুনাফা বেড়েছে ২১৭ কোটি টাকা বা ২১৯ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিকাশ এত মুনাফা ও আয় করেনি। ২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর বিকাশের সর্বোচ্চ মুনাফা ছিল ২০২৩ সালে, ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। গত বছর একলাফে তা ৩০০ কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়ে যায়। বিকাশের এই মুনাফার ওপর ভর করে ব্র্যাক ব্যাংকও সমন্বিতভাবে ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করেছে। কারণ, বিকাশের সিংহভাগ মালিকানা ব্র্যাক ব্যাংকের হাতে রয়েছে।
এদিকে বিকাশের গত ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১০ বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির আয় বা ব্যবসা বেড়ে হয়েছে ৯ গুণ। আর একই সময়ের ব্যবধানে মুনাফা বেড়ে ১৭ গুণ হয়েছে। ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে বিকাশের আয় ছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। আর ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করেছিল ১৯ কোটি টাকা। দুটোই এখন বেড়ে বিকাশকে বড় অঙ্কের লাভজনক এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
তিন বছর ধরে বিকাশের মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১১৭ কোটি টাকা লোকসান করেছিল। এরপর ২০২২ সালে ১৮ কোটি এবং ২০২৩ সালে ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করে বিকাশ। তবে ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছরই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা বা আয় বেড়েছে। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে মুনাফায় ছেদ পড়ে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিকাশের মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছিল। ২০১৮ সালে এসে তা কমে যায়। এরপর ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছর বিকাশ লোকসানে ছিল। গত বছর শেষে মুনাফায় বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে।
জানতে চাইলে বিকাশের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা বা সিএফও মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশ সব সময় ব্যবসা টেকসই করতে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যকে সামনে রেখেছে। ক্যাশলেস দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে বিকাশ এক দশক ধরে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিষেবা অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও গ্রাহকসহ অংশীজনদের ডিজিটাল শিক্ষা বাড়াতে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করেছে। এই কৌশলগত উদ্যোগ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে স্থিতিশীলতা এনেছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথকে সুগম করেছে।
২০১১ সালে এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করা বিকাশের এখন গ্রাহক প্রায় ৮ কোটি। দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার এজেন্ট ও সাড়ে ৫ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট। আর্থিক লেনদেন ছাড়াও বিকাশে রয়েছে বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ, ন্যানো ঋণ ও ডিপোজিট সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার সঙ্গে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন বা আইএফসি, গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল ও সফটব্যাংক।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ১৮৯ কোটি টাকা সরকারকে কর দিয়েছে। আর ওই বছর ব্যাংক থেকে সুদ বাবদ প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছে ১৯০ কোটি টাকা।