প্রথম আলোর সাংবাদিককে ফেসবুকে হুমকি, দুঃখ প্রকাশ করলেন বৈষম্যবিরোধী নেতা
Published: 2nd, May 2025 GMT
প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আজ শুক্রবার তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া তিনি আগের স্ট্যাটাসটিও সরিয়ে নিয়েছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে হুমকি দেন বৈষম্যবিরোধী মোত্তাসিন বিশ্বাস। এ ঘটনায় সেদিন রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন আনোয়ার হোসেন।
ফেসবুক পোস্টে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবি লাল দাগ দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেন মোত্তাসিন। ক্যাপশনে তিনি লিখেছিলেন, ‘.
শুরু থেকেই হুমকির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ’। তারা এ ব্যাপারে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতিও দিয়েছে। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ককে এ ব্যাপারে লিখিতভাবে জানান।
সাংবাদিক সমাজের পক্ষে চিঠিতে স্বাক্ষর করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল আলম, সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল শুকরানা, সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ।
চিঠিতে বলা হয়, ‘ফেসবুকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস তাঁর নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথম আলোর সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়া হয়। শুধু তা–ই নয়, আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবিতে লাল রঙের ক্রস চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জরুরি সভা করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ।’
সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্তের কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবর্তিত বাংলাদেশে একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে মোত্তাসিন বিশ্বাসের আপত্তিজনক ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই পোস্টের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়; আপত্তিজনক পোস্ট ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্যের কারণে আইনগত পদক্ষেপ হিসেবে থানায় জিডি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়; পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে মোত্তাসিন বিশ্বাসের পোস্টটি ডিলিট করে নিজ ফেসবুক ওয়ালে দুঃখ প্রকাশের দাবি তোলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পোস্টটি ডিলিট করে দুঃখ প্রকাশ না করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সংবাদ বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়; তিন দিনের মধ্যে দুঃখ প্রকাশ না করলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয় এবং এই সিদ্ধান্তগুলো লিখিতভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ‘যেসব অধিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক্স্বাধীনতার অধিকার। একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ, যা আমাদের উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করেছে।’
এ বিষয়ে মোত্তাসিন বিশ্বাসকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। অবহিতকরণ চিঠিটি ফেসবুকে সংযুক্ত করে স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, স্পষ্টীকরণ ও দায়িত্বশীল অবস্থান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সাংবাদিক সমাজের সব সাংবাদিকের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাঠানো অবহিতকরণ নোটিশটি তিনি সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনের প্রতিবাদে, প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রতিনিধি ও একজন সিনিয়র সাংবাদিকের ছবিতে অনভিপ্রেতভাবে লাল ক্রস চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে, যা অপ্রাসঙ্গিক ও অগ্রহণযোগ্য ছিল। এ বিষয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিবাদ যেন ব্যক্তি নয়, বিষয় ও যুক্তির ওপর ভিত্তি করে হয়। কারণ, ব্যক্তি আক্রমণ বাক্স্বাধীনতার মূল চেতনার পরিপন্থী।
স্ট্যাটাসে মোত্তাসিন বিশ্বাস উল্লেখ করেন, ‘আমরা সব সময় বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশে বিশ্বাস করি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিক সমাজ আমার অনভিপ্রেত কাজের বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে এবং ভবিষ্যতে আপনাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করছি। সর্বদা আপনাদের সার্বিক সহযোগিতাপ্রত্যাশী।’
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রফিকুল আলম বলেন, গতকাল তাঁরা এ ঘটনায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন। আজ ওই নেতা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা লিখিতভাবে বিষয়টি জানাবেন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুর রাহিমকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
আরও পড়ুনপ্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি৩০ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ জ ল র প রথম আল র কর ছ ন ফ সব ক ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
নাটোরে ছুরিকাঘাতে খোরশেদ আলম (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বুধবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় সদর উপজেলার তেগাছি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত খোরশেদ ওই এলাকার ইউনুস আলীর ছেলে ও পেশায় রিকশাচালক ছিলেন। অভিযুক্ত সালমান (১৭) একই এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সালমানের বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অভিযোগ আনেন খোরশেদ আলম। এ ঘটনায় সালমান ক্ষিপ্ত হয়ে খোরশেদকে কুপিয়ে জখম করে। স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীর মাদরাসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা
পুলিশ পরিদর্শক মাসুদুর রহমান আত্মগোপনে
নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুর রহমান বলেন, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযুক্ত সালমানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে মামলাসহ পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’
ঢাকা/আরিফুল/রাজীব