ব্রি ১০৪ জাতের ধানে প্রথমবারেই বাজিমাত
Published: 2nd, May 2025 GMT
প্রথমবার ব্রি ১০৪ জাতের ধান চাষ করে বাজিমাত করেছেন আখাউড়ার ধান চাষিরা। ফলন বেশি হওয়ায় হৈ চৈ পড়েছে কৃষকদের মাঝে। চলতি মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রি ১০৪ জাতের ধান আবাদ করে কৃষকরাও খুশি। জমির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই নাকে লাগছে ধানের সুগন্ধ। সেই সাথে সুগন্ধ চড়াচ্ছে মাঠজুড়ে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে এ জাতের ধান শুরু থেকে কাটা পর্যন্ত মোট ১৪৭ দিন সময় লাগছে কৃষকের গোলায় উঠতে। উচ্চফলনশীল ব্রি-১০৪ জাতের ধানে বিঘা প্রতি ২২ থেকে ২৫ মণ ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্ট্রিপ্রিনিউরশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) প্রোগ্রামের আওতায় এই প্রথম আখাউড়ায় বীজ উৎপাদনের প্রদর্শনী হিসেবে কৃষি অফিসের সহায়তায় ব্রি ধান ১০৪ জাতের ধান আবাদ করে কৃষকরা। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৫ হাজার ৭ শত হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
প্রাথমিকভাবে ব্রি ১০৪ জাতের ধান ৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। এর মধ্যে কৃষকদের প্রদর্শনী রয়েছে দুটি। মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া ও প্রকৃতি ধান চাষের অনুকূলে থাকায় মাঠে তেমন কোনো রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ দেখা যায়নি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ মৌসুমে ফলন ভাল হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মাঝে ১০৪ জাতের ধান বেশ সাড়া ফেলেছে। এ ধানের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। সুগন্ধযুক্ত এই ধান চিকন, ফলন ও বাজারদর ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছে কৃষক।
সরজমিনে উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ, ধরখার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় যে, এখনো কিছু জমিতে ব্রি ১০৪ ধান গাছ বাতাসে খেলে দোলে ঝুলছে। মাঠে মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সোনালী ধানের সমারোহ হয়ে আছে। কাঁচা-পাকা সোনা রঙের মন জুড়ানো ধানের শিষ হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। ইতোমধ্যে জমিতে ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পর করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। কথা হয়ে উপজেলার ধরখারের নাজমুল হকের সাথে।
তিনি বলেন, কৃষি অফিসের সহায়তায় এ মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে পরীক্ষা মূলক ১০৪ জাতের ধান আবাদ করি। সরকার থেকে নগদ টাকা, বিনামূল্যে বীজ ও সার পেয়েছি। ইতোমধ্যে ধান কাটা হয়েছে। বিঘায় ধান পেয়েছি ২৪ মণ। এই জমির ভালো ফলন দেখে বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষক আসছে এই ধানের বীজ নিতে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে এই ব্রি ধান-১০৪ রোপণ করা হবে বলে জানায়।
আরেক কৃষক মুছা মিয়া বলেন, শুরুতে এ ধানের ফলন নিয়ে চিন্তিত থাকলেও তা দূর হয়েছে। জমির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই সুগন্ধ পাওয়া যায়। এটি সুগন্ধি জাত ও বাসমতী বৈশিষ্ট্য। জমির ধান পেকে গেছে দুয়েক দিনের মধ্যে কাটা হবে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ১০৪ জ ত র ধ ন ক ষকদ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।