১৯ ফেব্রুয়ারি, রাত সাড়ে ৮টা। রাজধানীর ধানমন্ডির ১৩ নম্বর রোডে হঠাৎ একটি প্রাইভেটকার রিকশাকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। গাড়িচালককে ধরতে দুই যুবক আলাদা মোটরসাইকেলে গাড়িটির পিছু নেন। ১৫ মিনিট ধাওয়া করার পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে গাড়িটির সামনে গিয়ে পথরোধ করার চেষ্টা করলে তাদের সজোরে ধাক্কা দেন এর চালক। সড়কে পড়ে গেলে চালক তাদের একজন জাকির হোসেনের ওপর গাড়ি তুলে দেন। এতে তাঁর দুই পা-ই পা ভেঙে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে কাটাছেঁড়া ও কোমরে আঘাত পান তিনি। 
এ ঘটনায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি মডেল থানায় ওই গাড়িচালকের নাম উল্লেখ না করে গাড়ির নাম ও নম্বর দিয়ে মামলা করেন জাকির। তবে ঘটনা এখানেই থেমে নেই। সেই গাড়িচালককে তো আটক করা হয়নি, উল্টো মামলা করার কয়েক দিন পর জাকিরকে ১ নম্বর আসামি করে চারজনের নামে আদালতে মামলা করেন গাড়িচালক ধানমন্ডির বাসিন্দা উমার ফারুক সাবিত। আদালত সেই আবেদন আমলে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানাকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। গত ২৬ এপ্রিল জাকিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় যাওয়ার জন্য নোটিশ দেয় পুলিশ। 

সমকালের হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাবিতকে গাড়ির দরজা খোলার জন্য দুই যুবক বারবার বলছেন, টোকা দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি দরজা না খুলে সঙ্গীসহ দ্রুত গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যান। 
অন্যের মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন ভুক্তভোগী জাকির হোসেন। তিনি সমকালকে বলেন, প্রাইভেটকারটি মোরসাইকেলে ধাক্কা দিয়ে আমার পায়ের ওপর উঠিয়ে দেওয়ায় আমার দুই পা ভেঙে যায়। বাঁ পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। অথচ আমার নামেই ছিনতাইয়ের মামলা করেছেন সেই গাড়িচালক।

এদিকে, ঘটনার আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও সাবিতকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। বরং তিনি এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চাপা দেওয়া গাড়ি ব্যবহার না করে অন্য একটি গাড়ি ব্যবহার করছেন। 
এ বিষয়ে ঘটনার তদন্তে থাকা ধানমন্ডি মডেল থানার এসআই মো.

মিথুন বলেন, আমি প্রশিক্ষণে আসার কারণে মামলা থানায় হস্তান্তর করে এসেছি। এখন থানা থেকে অন্য কাউকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হবে। 
অভিযোগের বিষয়ে উমার ফারুক সাবিত বলেন, ঘটনার দিন আমি আমার বন্ধুসহ রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করে বের হওয়ার সময় ১০-১২ জন কোনো কারণ ছাড়াই আমার গাড়িতে হামলা করে। আমার গাড়ির কাচ ভাঙচুর করে। জীবন রক্ষার্থে গাড়ি টান দিই, আমাকে তারা ধাওয়া করে। পরে সরাসরি থানায় গিয়ে জিডি করি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ ড় চ লক ধ নমন ড

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়ির দুর্গম হাজাপাড়ার প্রধান সমস্যাই ‘পানি’

খাগড়াছড়ির জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার দুর্গম একটি গ্রামের নাম হাজাপাড়া। যে গ্রামে নেই কোন ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা, নেই স্বাস্থ্য সেবা, নেই কোন সুপেয় পানির ব্যবস্থা। সে গ্রামে অনেকগুলোর সমস্যার মধ্যে প্রধান সমস্যাই পানি, জানালেন গ্রামবাসীরা। তাদের দাবি, অন্তত সরকার যেন তাদের জন্য যে কোন উপায়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দেন। 

মাটিরাঙ্গার অতি পুরনো এই গ্রামের বাসিন্দাদের গোসল আর পানির জন্য যেতে হয় অনেক দূরে খাড়া পাহাড়ের নিচে। আর বাজারে বা স্বাস্থ্য সেবার জন্য দেড়-দুই ঘণ্টা পায়ে হেঁটে যেতে হয়। গ্রামে নেই কোন টিউবওয়েল। সারা বছর তাদের কুয়া, ছড়া-গিরি-ঝিরি ও নালার পানি খেতে হয়। শুকনা মৌসুমে তো ছড়া-নালা-গিরি-ঝিরি শুকিয়ে গিয়ে আরও পানি সংকটে পড়তে হয়। বর্ষায় সব পানিতে নোংরা আবর্জনা জমে যায়। ফলে এই গ্রামবাসীদের সারা বছরই পানি সমস্যায় ভুগতে হয়। 

এলাকার ইউপি মেম্বার উমেন্দ্র বিকাশ ত্রিপুরা উষাতন জানান, এ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আর পানির সমস্যা প্রকট। সারা বছরই পানির সমস্যায় ভূগতে হয়। এই সময়ে ছড়া নালা সব শুকিয়ে পানির সমস্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। 

এমন পানি দিয়েই জীবন চলছে হাজাপাড়া গ্রামবাসীর

এই গ্রামের কৃতি সন্তান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদকপ্রাপ্ত ভাষা গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, “এই পাড়াটা অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল। গাড়ির কোন সংযোগ নেই। ব্রিজ কালভার্ট নেই। উন্নত দুনিয়া থেকে একটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল। এখানে পানির কোন ব্যবস্থা নেই, সুপেয় পানির জন্য অনেক দূরে যেতে হয়। এখানে রিং ওয়েল, টিউবওয়েল কোন কিছুই নেই। কাছাকাছি নেই কোন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রও। তাদের অনেক দূরে গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিতে হয়। তারা এক-দেড় ঘণ্টা পায়ে হেঁটে যাওয়ার পর কোন একটা বাহনে চড়ে তারা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছাতে পারে। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা দরকার। এর মধ্য দিয়ে অন্যান্য সমস্যাগুলোর সমাধান করা যেতে পারে।” 

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাশ এর কাছে বারবার গিয়েও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। মুঠো ফোনেও (০১৯১৪১৬২৮৪৭)  সংযোগ পাওয়া যায়নি। 

এ নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, পার্বত্য অঞ্চলে সুপেয় পানির কমন সমস্যা, এটি নিয়ে তিনি কাজ করছেন। বর্ষাকালে কিছু পানি থাকলেও গ্রীষ্মকালে বা শুষ্ক মৌসুমে ছড়া নালার পানি কমে যায়। মাটিরাঙ্গা গোমতি হাজাপাড়ার বিষয়টি বিশেষভাবে দেখবেন। এছাড়া সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা করেছেন বলেও জানান তিনি।

ঢাকা/রূপায়ন/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ