ভোলায় আবার পাঁচ রুটে বাস ধর্মঘট, অটোরিকশা ভাঙচুর-আগুন
Published: 4th, May 2025 GMT
ভোলার পাঁচ রুটে আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছে বাস–মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় যানজটে আটকে পড়াকে কেন্দ্র করে বাসশ্রমিক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি, হাতাহাতি ও সংঘর্ষ হয়। এরপর সাড়ে পাঁচটার দিকে ধর্মঘটের ডাক দেয় বাস শ্রমিক ইউনিয়ন।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির দাবি, বাংলাবাজারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাস–মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মীরা কয়েকটি অটোরিকশা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। তবে বাস শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি, অটোরিকশাচালকেরা পাঁচ স্থানে বাসশ্রমিকদের মারধর ও দুটি বাস ভাঙচুর করেছেন।
ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাহাদাৎ মো.
এর আগে গত ২৭ এপ্রিল বাস–মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন ভোলার পাঁচ রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। ২৮ এপ্রিল ভোলার প্রশাসন দুই পক্ষকে ডেকে সমঝোতা করিয়ে দিলে শ্রমিক ইউনিয়ন ধর্মঘট তুলে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক, অটোরিকশাচালক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোলার বাংলাবাজার সেতুর আগে দৌলতখানের জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়কের ওপর ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাখায় প্রায়ই যানজট লাগে। আজ বিকেলে বিশাল যানজট লেগে গেলে বেশ কিছু বাস আটকে পড়ে। এ ঘটনায় বাসচালকেরা সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের দোষারোপ করলে বাসের শ্রমিক ও অটোরিকশাচালকদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর ভোলায় এসে বাস–মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাস মালিক সমিতির নেতারা বৈঠক করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকেন। পরে বাসশ্রমিকেরা ভোলার মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়কের ওপর টায়ার জ্বালান। বাস বন্ধ হলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। এ সময় অটোরিকশায় যাত্রী পরিবহন শুরু হলে বাসের শ্রমিকেরা কয়েকটি অটোরিকশায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
বাস–মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, পরিকল্পিতভাবে পাঁচটি স্থানে সিএনজিচালকেরা বাসশ্রমিকদের গায়ে হাত দিয়েছেন এবং দুটি বাস ভাঙচুর করেছেন। এ কারণে তাঁরা ধর্মঘট ডেকেছেন।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, বাসশ্রমিকেরা ধর্মঘট ডাকার পর যাত্রী পরিবহন করায় বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে চারটি সিএনজি নিয়ে তিনটি ভাঙচুর ও একটিতে অগ্নিসংযোগ করেন। পরে ক্ষুব্ধ চালকেরা লালমোহনে দুটি বাস আটকে রাখেন। তবে ভাঙচুর করেননি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ লক র
এছাড়াও পড়ুন:
৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।
এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।
আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’
দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’
ব্যবসার শুরুরহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।
রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।
হকার থেকে এজেন্টকয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’