লঞ্চঘাটে তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধর, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মী আটক
Published: 10th, May 2025 GMT
মাদক-অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে নোঙর করা এম ভি ক্যাপ্টেন নামের একটি পিকনিকের লঞ্চে হানা দিয়ে নারীদের প্রকাশ্যে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই যাত্রীদের কাছ থেকে টাকাপয়সা ও মোবাইল ফোন লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে ছুটে যান থানা পুলিশ, নৌপুলিশ ও বিআইডব্রিউটিএর লোকজন। পরে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং পিকনিকের লঞ্চটিকে ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যেতে তারা সহযোগিতা করেন।
অন্যদিকে লঞ্চে নারীদের মারধর করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটি ভাইরাল হয়। এই পরিস্থিতিতে শনিবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী নেহাল আহমেদ জিহাদকে (২৭) আটক করেছে পুলিশ।
আটক নেহাল আহমেদ জিহাদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে পিকনিক পার্টির লোকজনের সঙ্গে স্থানীয়দের মারামারিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় নারীসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়। এই সময় পিকনিকের তিনতলা লঞ্চ এভি ক্যাপ্টেন ভাঙচুর করা হয়।
পুলিশ জানায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে উঠতি বয়সী ৩০০-৪০০ ছেলে-মেয়ে পিকনিক ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে এমভি ক্যাপ্টেন লঞ্চ ভাড়া করে। কিছু ছেলে-মেয়েরা লঞ্চের ছাদে গান-বাজনা ও নাচ করে। সদরঘাট থেকে রওনা হয়ে চাঁদপুর ঘুরে লঞ্চটি আবার ঢাকায় ফেরার পথে রাত সাড়ে ৮টায় মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থামায়।
এই সময় লঞ্চে থাকা ৮-১০ জন ছেলে মেয়ে চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য নিচে নামলে অশ্লীলতার অভিযোগ তুলে লঞ্চঘাটে থাকা ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ হয়। ঘাটে থাকা ৫০-৬০ জন ছাত্র-জনতা লঞ্চটিতে উঠলে পিকনিকের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে লঞ্চে থাকা ছেলে-মেয়েদের হেনস্তা ও মারপিট করে। এই সময় গাড়ি নিয়ে লঞ্চে ভাঙচুর চালায় তারা। পরে দুই তরুণীকে লঞ্চের সামনে এনে প্রকাশ্যে প্রহার করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ছাত্র-জনতা দাবি করেছে- অশ্লীলতার কারণে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়। পিকনিকের লঞ্চটিতে মাদকের আড্ডা বসেছিল।
এদিকে, দুই তরুণীকে মারধর করা নেহাল আহমেদ জিহাদ বলেন, শত শত মানুষ ছিল। আমি যদি কয়েকটি বাড়ি দিয়ে সবাইকে শান্ত না করতাম হয়ত মেয়েগুলোর সঙ্গে আরও খারাপ আচরণ হতো। তাদের কয়েকটি মোবাইলও নিয়ে গিয়েছিল, সেগুলো আমি উদ্ধার করেছি। তাদের দুজনকে মারা আমার ঠিক হয়নি, তবে পরিস্থিতি শান্ত করতেই ভাই হিসেবে কাজ করছি। এর জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফিরোজ কবির জানান, পিকনিকের লোকজন দাবি করেছেন তাদের মারপিট ছাড়াও মোবাইলসহ নানা কিছু নিয়ে গেছে। তবে তারা পিকনিকের লোকজনকে গন্তব্য পৌঁছে দিয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল আলম জানান, হট্টগোলের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে জিডি করে তদন্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেহাল আহমেদ জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম রধর আটক ন হ ল আহম দ জ হ দ পর স থ ত ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’ চালু
প্রমোদতরী হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে শনিবার (১৫ নভেম্বর) চালু হয়েছে শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রাজধানীর সদরঘাটে শতবর্ষী এ প্যাডেল স্টিমার যাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
আরো পড়ুন:
‘নৌপথ ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে নৌপরিবহন ও মৎস্য মন্ত্রণালয়’
শ্রম উপদেষ্টার সঙ্গে জার্মান সংসদ সদস্যের সাক্ষাৎ
আগামী প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের নদীমাতৃক ঐতিহ্য তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুতফে সিদ্দিকীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “পিএস মাহসুদ বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও নৌ-পর্যটনের মধ্যে এক অনন্য সেতুবন্ধন তৈরি করবে।”
তিনি আরো বলেন, “আগামী ২১ নভেম্বর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে নিয়মিত পর্যটন সেবা শুরু করবে জাহাজটি।”
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিআইডব্লিউটিসির শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’কে সংস্কার ও পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।”
সাখাওয়াত বলেন, “পিএস মাহসুদ শুধু একটি জাহাজ নয়, এটি বাংলাদেশের নদীমাতৃক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম দেখুক, একসময় নদীই ছিল যোগাযোগ ও সংস্কৃতির প্রাণ।”
তিনি জানান, নদী ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং নৌ-পর্যটনের সম্ভাবনা বাড়াতে পিএস অস্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্নসহ আরও কয়েকটি পুরনো স্টিমার মেরামতের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা জানান, স্টিমারটির সংস্কার ও আধুনিকীকরণে মূল কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে, ইঞ্জিন, নিরাপত্তা ও অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ আধুনিক করা হয়েছে।
এতে রয়েছে আধুনিক কেবিন, পর্যটকবান্ধব ডেক ও ডিজিটাল নেভিগেশন ব্যবস্থা।
স্টিমারটি প্রতি শুক্রবার ঢাকা থেকে বরিশাল এবং প্রতি শনিবার বরিশাল থেকে ঢাকা যাবে। সকাল ৮টায় রাজধানীর সদরঘাট থেকে ছেড়ে রাতে বরিশালে পৌঁছাবে।
আগে স্টিমারটি শুধু রাতেই চলত। এবার দিনের ভ্রমণ চালু হওয়ায় পর্যটকরা নদী ও নদীর তীরের সৌন্দর্য আরও বেশি উপভোগ করতে পারবেন বলে আশা করছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা। খবর বাসসের।
ঢাকা/এসবি