আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা বাংলাদেশের স্বার্থে অপরিহার্য: মামুনুল হক
Published: 10th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা বাংলাদেশের স্বার্থে অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি আওয়ামী লীগকে একটি সন্ত্রাসী, ধর্মবিরোধী ও ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শনিবার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নির্বাহী কমিটির মাসিক সভায় মামুনুল হক এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, ‘বাংলাদেশকে ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করতে জাতিকে বিভক্ত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও ইসলামি মূল্যবোধশূন্য করতে হেন কোনো অপচেষ্টা নেই, যা এই দলটি করেনি। আমি মনে করি, বিডিআর হত্যা, শাপলা গণহত্যা, জুলাই-আগস্ট গণহত্যাসহ হাজার হাজার খুন-গুম-অপহরণ সংঘটিত করেছে যেই দল, সেই দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা বাংলাদেশের স্বার্থে অপরিহার্য।’
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মামুনুল হক । তিনি বলেন, ‘আপনারা দেয়াললিখন আর গ্রাফিতি নিয়ে সংকলন করেছেন, দেশ-বিদেশে বিতরণও করছেন। এগুলো নিজেরা ভালো করে পড়ুন, দেখুন, অনুভব করুন। হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তে রাঙানো বিপ্লব ব্যর্থ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না।’
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব দল-মত-ধর্মের মানুষের তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরও সরকার এই ব্যর্থ কমিশন বাতিল করেনি। বরং সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা এই কমিশনের পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন। মনে হচ্ছে সরকার নারী সংস্কার কমিশনের মোড়কে ‘ধর্ম সংস্কার কমিশন’ গঠন করেছে। মামুনুল হক অবিলম্বে তথাকথিত নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের আহ্বান জানান।
এ ছাড়া গাজায় অবিলম্বে ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর হস্তক্ষেপ ও বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় কূটনৈতিক উদ্যোগ দাবি করেন। একই সঙ্গে চলমান পাকিস্তান-ভারত সামরিক পাল্টাপাল্টি হামলা দ্রুত বন্ধ করার আহ্বান জানান।
সভায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মুফতি সাঈদ নূর, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা কুরবান আলী, মাওলানা মাহবুবুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আব্দুল আজিজ, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, মুফতি শরাফত হোসাইন, শরীফ সাঈদুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ম ন ল হক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা দখল করে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়তে চান নেতানিয়াহু
নিজের জনগণকে ৬৭০ দিনের বেশি সময় ধরে ধ্বংস হতে দেখার বেদনা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এত কষ্ট, এত অপরাধের সাক্ষী হওয়ার পরও গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরেক দফা ইসরায়েলি হামলার কথা ভাবা পর্যন্ত কল্পনার বাইরে। অথচ বিশ্বের চোখের সামনেই এটি হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ব কি শুধু দাঁড়িয়ে দেখে যাবে?
ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা গাজায় এই নতুন হামলার ঘোষণা দিয়েছে। গাজা উপত্যকাকে ‘সম্পূর্ণ দখল’ করার জন্যই তারা সেখানকার জনবসতিগুলোয় হামলা চালানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এ হামলা শুরু হবে গাজা সিটি থেকেই। এর ফলাফল অনুমান করা কঠিন নয়।
২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ অমান্য করে ইসরায়েল রাফা এলাকায় হামলা চালায়। আজ রাফার কোনো অস্তিত্ব নেই। এরপর ২০২৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তারা উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া, বেইত হনুন ও জাবালিয়া শহরে হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে দেয়।
আরও পড়ুনমুখ ফিরিয়েছে বিশ্ব, গাজা কি নিভে আসছে ০৯ জুন ২০২৫সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালন এ অভিযানকে বলেছেন ‘জাতিগত নিধন’। এরপর ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফেলে, ২০ লাখ বেঁচে থাকা মানুষকে অনাহারে রাখে এবং দক্ষিণের খান ইউনিস শহর ধ্বংস করে দেয়। এসব কাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারি, মার্চ ও মে মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দেওয়া তিনটি গণহত্যাবিরোধী রায়ের সরাসরি লঙ্ঘন।
জানুয়ারিতে আদালত গাজায় গণহত্যার ঝুঁকি আছে বলে জানান এবং তা ঠেকাতে কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেন। এর মধ্যে ছিল গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু দেখা গেল, ইসরায়েল এই নির্দেশ মানছে না। গাজা সিটিতে হামলা হলে তা এই গণহত্যা অভিযানের শেষ ধাপ হবে।
যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলো গত দুই বছরে ইসরায়েলের গণ–অত্যাচারের সহযোগিতার দায় থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারবে না। ইসরায়েলকে জবাবদিহি থেকে মুক্তি দিয়ে এবং এই দুষ্ট রাষ্ট্রকে অস্ত্র সরবরাহ করে পশ্চিমারা এই অপরাধগুলোকে সম্ভব করেছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার যে ঘোষণাগুলো এসেছে, তা কেবল প্রচারমূলক চাল ও মনোযোগ সরানোর কৌশল।৭ অক্টোবরের পরপরই ইসরায়েলের নেতা, রাজনীতিক, সামরিক কমান্ডার ও সেনারা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তাঁরা গাজাকে ধ্বংস করে দেবেন, পুড়িয়ে দেবেন এবং সমতল করে দেবেন। তাঁরা ঠিক সেটাই করেছেন। তাঁরা গাজার ৯০ শতাংশ এলাকা কার্যত ধ্বংস করে এটিকে জনমানবহীন মরুভূমিতে পরিণত করেছেন। বাকি জনসংখ্যাকে ঠাসা অবস্থায় মাত্র ১২ শতাংশ এলাকায় গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। সেখানে মানুষের বেঁচে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। অবরোধ আর বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ইসরায়েল গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা রাখেনি। বাইরে যাওয়ারও কোনো পথ রাখেনি।
এখন গাজা সিটি, দেইর আল-বালাহ বা আল-মাওয়াসির বাকি জনবসতিতে হামলার মানে হবে নতুন গণহত্যা, আরও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি এবং অবশিষ্ট অনাহারগ্রস্ত মানুষকে সরাসরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এর মানে ইসরায়েল আসলে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়ার মেসিয়ানি কল্পনা ও অপরাধমূলক প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে—ইসরায়েলের লক্ষ্য ‘সর্বোচ্চ পরিমাণ জমি, সর্বনিম্নসংখ্যক আরব’।
গাজায় দাতব্য রান্নাঘরের সরবরাহ করা খাবার সংগ্রহ করতে ফিলিস্তিনিদের ভিড়।