আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া ‘জুলাই জনতার’ আরেকটি বিজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। এস্টাবলিশমেন্টের মধ্যে থাকা আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘সতর্ক হয়ে যান। একটু অসতর্কতা পরের বার আপনাদের পতনের কারণ হতে পারে। জুলাইকে মেনে না নিয়ে বাংলাদেশে শান্তিতে থাকার সুযোগ নেই।’

রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে এ কথাগুলো বলেছেন আসিফ মাহমুদ। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হন। বর্তমানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

স্ট্যাটাসে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া লিখেছেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের থেকে রক্ষা করা কঠিন। এর চেয়ে কঠিন সত্য আর নেই। লড়াই যেন থামছেই না। রাজপথের লড়াইটা সামষ্টিক, জুলাইয়ের যোদ্ধাদের মিলনস্থলে পরিণত হওয়ায় একধরনের ভালো লাগার জায়গাও তৈরি করে। মাঝে মাঝে মনে হয় ছেড়ে দিয়ে চলে যাই রাজপথে। সেটাই আমার জায়গা, যা করতে অভ্যস্ত এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা মাথায় এলেও থেকে যেতে হয় গণ-অভ্যুত্থানের পাহারাদার হওয়ার জন্য, জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আওয়াজটা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আমাদের এই লড়াইটা হয়তো দেখা যায় না, শোনা যায় না।’

আসিফ মাহমুদ লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় জুলাই জনতার আরেকটি বিজয় হলো। এ এস্টাবলিশমেন্টের মধ্যে যাঁরা আওয়ামী সিম্প্যাথাইজার আছেন, সতর্ক হয়ে যান। একটু অসতর্কতা পরের বার আপনাদের পতনের কারণ হতে পারে। জুলাইকে মেনে না নিয়ে বাংলাদেশে শান্তিতে থাকার সুযোগ নেই।’

স্ট্যাটাসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু উপলব্ধির কথাও তুলে ধরেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘সরকারে থাকাটা দুধারি তলোয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকার মতো হয়ে গেছে। সরকার কোনো ভুল করলে, সেটা আমাদের এখতিয়ারভুক্ত না হলেও জনতার কাঠগড়ায় আমাদের দুজনকে (মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ) দাঁড় করানো হয়। আবার ছাত্র-জনতা মাঠে নামলে রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভরকেন্দ্রগুলো আমাদের সন্দেহের চোখে দেখে, টার্গেট করে। এস্টাবলিশমেন্ট মনে করে, এটা আমরা করাচ্ছি। এ ছাড়া ক্ষমতার বিভিন্ন ভরকেন্দ্রের সঙ্গে জুলাই প্রশ্নে আপস না করতে পারায় তাদের চক্ষুশূলে পরিণত হওয়াটা বোনাস।’

আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, ‘রাষ্ট্র অনেক বড় এবং জটিল জায়গা। এখানে কোনো কিছু বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন। তবে স্বস্তির বিষয় হলো এই উপদেষ্টা পরিষদ অনেক বাধা এলেও দিন শেষে ছাত্র-জনতার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে, জনরায়ের বাস্তবায়ন করতে পারছে; যত দিন পারবে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকবে, গণ-অভ্যুত্থানের ভয়েসের (কণ্ঠ) যথাযথ গুরুত্ব এই উপদেষ্টা পরিষদ দেবে, তত দিনই আছি। গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের পক্ষ থেকে সরে গেলে আমার আর এখানে কাজ নেই।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে নিয়ে আজ দিনভর কিছু ভুয়া ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, মাহফুজ আলম উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

এই ফটোকার্ডগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন আসিফ মাহমুদ। তিনি লিখেছেন, ‘এমন মিথ্যাচার বন্ধ করুন। আপনার সঙ্গে কারও চিন্তাগত পার্থক্য থাকতেই পারে, সেটাকে নোংরা মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত নয়।’ তিনি বলেন, মাহফুজ আলম প্রথম থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা এবং এর সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা কী হতে পারে, তা নিয়ে আর্গুমেন্ট (তর্ক) করেছেন। বিস্তারিত বলতে গেলে গোপনীয়তার শপথ ভঙ্গ হতে পারে বলে এর বেশি আর কিছু লিখতে চাননি বলে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন এই উপদেষ্টা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উপদ ষ ট আম দ র আওয় ম জনত র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সূর্য উঠলে দেখতে পাবেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে: সিইসি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, সূর্য উঠলে দেখতে পাবেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে।

সোমবার দুপুরে বিদেশি একটি সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

তিনি বলেন, সরকার গেজেট প্রকাশ করলেই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। যেহেতু সরকার এখনও গেজেট প্রকাশ করেনি, সেহেতু এ ব্যাপারে ইসি এখনও ভাবেনি।

তিনি আরও বলেন, আমরা গেজেটের জন্য অপেক্ষা করছি। পত্র-পত্রিকার সংবাদে তো আর ইসি সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। গেজেট অনুযায়ী ইসি সিদ্ধান্ত নেবে।

ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের আন্দোলনের মুখে শনিবার (১০ মে) আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

শনিবার (১০ মে) রাত ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধনী অনুমোদিত হয়। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ