জুলাইকে মেনে না নিয়ে বাংলাদেশে শান্তিতে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
Published: 11th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া ‘জুলাই জনতার’ আরেকটি বিজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। এস্টাবলিশমেন্টের মধ্যে থাকা আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘সতর্ক হয়ে যান। একটু অসতর্কতা পরের বার আপনাদের পতনের কারণ হতে পারে। জুলাইকে মেনে না নিয়ে বাংলাদেশে শান্তিতে থাকার সুযোগ নেই।’
রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে এ কথাগুলো বলেছেন আসিফ মাহমুদ। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হন। বর্তমানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
স্ট্যাটাসে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া লিখেছেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের থেকে রক্ষা করা কঠিন। এর চেয়ে কঠিন সত্য আর নেই। লড়াই যেন থামছেই না। রাজপথের লড়াইটা সামষ্টিক, জুলাইয়ের যোদ্ধাদের মিলনস্থলে পরিণত হওয়ায় একধরনের ভালো লাগার জায়গাও তৈরি করে। মাঝে মাঝে মনে হয় ছেড়ে দিয়ে চলে যাই রাজপথে। সেটাই আমার জায়গা, যা করতে অভ্যস্ত এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা মাথায় এলেও থেকে যেতে হয় গণ-অভ্যুত্থানের পাহারাদার হওয়ার জন্য, জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আওয়াজটা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আমাদের এই লড়াইটা হয়তো দেখা যায় না, শোনা যায় না।’
আসিফ মাহমুদ লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় জুলাই জনতার আরেকটি বিজয় হলো। এ এস্টাবলিশমেন্টের মধ্যে যাঁরা আওয়ামী সিম্প্যাথাইজার আছেন, সতর্ক হয়ে যান। একটু অসতর্কতা পরের বার আপনাদের পতনের কারণ হতে পারে। জুলাইকে মেনে না নিয়ে বাংলাদেশে শান্তিতে থাকার সুযোগ নেই।’
স্ট্যাটাসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু উপলব্ধির কথাও তুলে ধরেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘সরকারে থাকাটা দুধারি তলোয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকার মতো হয়ে গেছে। সরকার কোনো ভুল করলে, সেটা আমাদের এখতিয়ারভুক্ত না হলেও জনতার কাঠগড়ায় আমাদের দুজনকে (মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ) দাঁড় করানো হয়। আবার ছাত্র-জনতা মাঠে নামলে রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভরকেন্দ্রগুলো আমাদের সন্দেহের চোখে দেখে, টার্গেট করে। এস্টাবলিশমেন্ট মনে করে, এটা আমরা করাচ্ছি। এ ছাড়া ক্ষমতার বিভিন্ন ভরকেন্দ্রের সঙ্গে জুলাই প্রশ্নে আপস না করতে পারায় তাদের চক্ষুশূলে পরিণত হওয়াটা বোনাস।’
আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, ‘রাষ্ট্র অনেক বড় এবং জটিল জায়গা। এখানে কোনো কিছু বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন। তবে স্বস্তির বিষয় হলো এই উপদেষ্টা পরিষদ অনেক বাধা এলেও দিন শেষে ছাত্র-জনতার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে, জনরায়ের বাস্তবায়ন করতে পারছে; যত দিন পারবে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকবে, গণ-অভ্যুত্থানের ভয়েসের (কণ্ঠ) যথাযথ গুরুত্ব এই উপদেষ্টা পরিষদ দেবে, তত দিনই আছি। গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের পক্ষ থেকে সরে গেলে আমার আর এখানে কাজ নেই।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে নিয়ে আজ দিনভর কিছু ভুয়া ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, মাহফুজ আলম উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
এই ফটোকার্ডগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন আসিফ মাহমুদ। তিনি লিখেছেন, ‘এমন মিথ্যাচার বন্ধ করুন। আপনার সঙ্গে কারও চিন্তাগত পার্থক্য থাকতেই পারে, সেটাকে নোংরা মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত নয়।’ তিনি বলেন, মাহফুজ আলম প্রথম থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা এবং এর সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা কী হতে পারে, তা নিয়ে আর্গুমেন্ট (তর্ক) করেছেন। বিস্তারিত বলতে গেলে গোপনীয়তার শপথ ভঙ্গ হতে পারে বলে এর বেশি আর কিছু লিখতে চাননি বলে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন এই উপদেষ্টা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র উপদ ষ ট আম দ র আওয় ম জনত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রায়কে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বললেন শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায়ের পর প্রকাশিত পাঁচ পৃষ্ঠার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিস্ক্রিয় করে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি পন্থা হচ্ছে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া।”
আরো পড়ুন:
হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ‘অতীতের প্রতিশোধ নয়’: প্রধান কৌঁসুলি
এই রায়ে কষ্ট পেয়েছি: শেখ হাসিনার আইনজীবী
ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা এর আগে এ বিচার প্রক্রিয়াকে ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
তিনি বলেন, “এমন একটি ট্রাইব্যুনাল যেখানে ন্যায্যভাবে অভিযোগ যাচাই ও পরীক্ষা করা হয়, সেখানে অভিযোগকারীদের মুখোমুখি হতে আমি ভয় পাই না।”
তিনি আরো যোগ করেন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, এই অভিযোগগুলো হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিয়ে যেতে।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, তিনি তার মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত রেকর্ড নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়ে ছয়টি অংশ রয়েছে।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত। দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
একটি অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি অনলাইন
ঢাকা/রফিক