পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত চলাকালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারত উদ্বিগ্ন। ভারত মনে করে, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে যে পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তা করেনি।

আজ মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে এই মন্তব্য করেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল।

জয়সোয়াল বলেন, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ওই দেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা খর্ব হওয়ায় ভারত স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত।

ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিং কিছুদিন বন্ধ ছিল। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তা শুরু হয়। অধিকাংশ প্রশ্ন ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাত নিয়ে হলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ভারতের মনোভাব জানতে চাওয়া হয়।

জবাবে জয়সোয়াল বলেন, যথাযথ পদ্ধতি না মেনে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় ভারত স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত।

জয়সোয়াল বলেন, গণতন্ত্রে কাজের একটা পদ্ধতি আছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি না মেনে। সংগত কারণেই এটি এক উদ্বেগজনক ঘটনা। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত স্বাভাবিক কারণেই উদ্বিগ্ন। কারণ, এর মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে এবং সেই কারণে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিসর সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।

জয়সোয়াল এই প্রসঙ্গে ভারতের পুরোনো মনোভাব স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই, বাংলাদেশে দ্রুত সুষ্ঠু, অবাধ ও সবার অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।’

গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচারকার্য সসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

পরে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর র গণত ন ত র ক জয়স য় ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা নগরীর পথে ইসরায়েলি ট্যাংক, পালাচ্ছেন বাসিন্দারা

ফিলিস্তিনের গাজায় অভিযানের পরিসর আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েল। এবার গাজা নগরী দখলে নিতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এই নগরীর ১০ লাখ বাসিন্দার জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। ইতিমধ্যে গাজা নগরীর পূর্বাঞ্চল থেকে বাসিন্দারা বাড়িঘর ছাড়তে শুরু করেছেন। বিমান হামলার শব্দ শোনা যাচ্ছে, তাল আল-হাওয়ার দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে এগিয়ে আসছে ট্যাংক।

এদিকে ইসরায়েলের হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২৩ জন নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার জানিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ত্রাণ নিতে যাওয়া ২১ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিও রয়েছেন।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বুধবার বলেছে, তারা গাজা উপত্যকায় নতুন অভিযানের রূপরেখা অনুমোদন দিয়েছে। গাজার সবচেয়ে বড় নগরী দখলে নিতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার আহ্বান জানানোর কয়েক দিন পর সামরিক বাহিনী নতুন এ অভিযান অনুমোদন করল।

সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর আভিযানিক পরিকল্পনার মূল রূপরেখা অনুমোদন দিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়াল জামির।

কবে নাগাদ ইসরায়েলি সেনারা গাজা নগরীতে প্রবেশ করবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা জানায়নি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার। তবে গাজার গণমাধ্যম দপ্তরের মহাপরিচালক ইসমাইল আল-ছাওয়াবতা বুধবার বলেন, গাজা নগরীতে আগ্রাসী অনুপ্রবেশ অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী।

২২ মাস ধরে গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে সেখানকার বেশির ভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার ২২ লাখ বাসিন্দার বেশির ভাগই দফায় দফায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন গাজা নগরীতে।

স্থল অভিযানের বিষয়ে গাজার গণমাধ্যম দপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, এসব হামলা পোড়া মাটি নীতি এবং বেসামরিক স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংসের মাধ্যমে নতুন পরিস্থিতি তৈরির মারাত্মক উসকানিরই অংশ।

গাজা নগরীর তাল আল-হাওয়া এলাকার বাসিন্দা সাবাহ ফাতোম (৫১) ওই এলাকায় ব্যাপক বিস্ফোরণ শুনতে পাওয়ার কথা টেলিফোনে বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান। এই নারী বলেন, অনেক বিমান হামলার শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাল আল-হাওয়ার দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে ট্যাংক এগিয়ে আসছে। আকাশে ড্রোন উড়ছে। বহু মানুষ বাড়িঘর ও তাঁবু ছেড়ে শহরের পশ্চিম দিকে ছুটছেন।

এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে বুধবার জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রাণ নিতে যাওয়া ২১ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিও রয়েছেন। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় আহত হয়েছেন ৪৩৭ জন।

ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাবার না পেয়ে একই সময়ে অনাহারে মারা গেছেন আট ফিলিস্তিনি, তাঁদের মধ্যে তিনজন শিশু। এ নিয়ে অনাহারে ২৩৫ ফিলিস্তিনি মারা গেলেন, যাঁদের মধ্যে ১০৬টি শিশু। এ ছাড়া ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ৬১ হাজার ৭২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় লাখের বেশি।

আরও পড়ুনইসরায়েলি সেনাপ্রধানই কি নেতানিয়াহুর লাগাম টেনে ধরবেন৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ