যুদ্ধবিরতি না মানলে ট্রাম্পের বাণিজ্য বন্ধের হুমকিসংক্রান্ত বক্তব্য নাকচ করল ভারত
Published: 13th, May 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করলেও ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত অবসানে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বাণিজ্য প্রসঙ্গ কখনো আলোচিত হয়নি বলে জানাল ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে আজ মঙ্গলবার এ মন্তব্য করেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল।
জয়সোয়াল বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিবৃতি ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের এই মনোভাবের কথা যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব দাবি করে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশকেই তিনি বলেছিলেন, তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য করতে চায়। যুদ্ধ বন্ধ করলে বাণিজ্য করবে, না হলে বাণিজ্য করবে না। তিনি বলেছিলেন, তারপরই দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি, তাঁর মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি সম্ভবপর হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে আজ মঙ্গলবার জয়সোয়ালকে একাধিক প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বাণিজ্যসংক্রান্ত বিষয় অস্বীকার করে বলেন, কখনো কোনো আলোচনায় বাণিজ্য প্রসঙ্গ ওঠেনি এবং সেটা যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত জানিয়েও দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তৃতীয় কোনো দেশে ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের সম্ভাব্য বৈঠক প্রসঙ্গে যে মন্তব্য করেছেন, সে নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। জবাবে জয়সোয়াল বলেন, ভারতের দীর্ঘদিনের নীতি জম্মু-কাশ্মীর তার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। একমাত্র দ্বিপক্ষীয় আলোচনাতেই এই সমস্যার সমাধান হবে। ভারতের এই ঘোষিত নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি এ কথাও বলেন, দুই দেশের আলোচনায় ভারতের একমাত্র বিবেচ্য পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ফেরত আনা।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, সিন্ধু পানিচুক্তি ভারত অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রেখেছে। সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তান পুরোপুরি রাশ না টানা পর্যন্ত চুক্তি স্থগিতই থাকবে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, জলবায়ু বদল হওয়া, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে।
আরও পড়ুনভারত–পাকিস্তান সংঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কারা৫১ মিনিট আগেজয়সোয়াল এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ভারতের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে কোনো পরমাণু স্থাপনা ছিল না। এ কথা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন।
পাকিস্তান এই সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে জয়ী হয়েছে বলে দাবি জানিয়েছে। এই বিষয়ে ভারতের মনোভাব জানতে চাওয়া হলে জয়সোয়াল বলেন, যতবার লড়াই হয়েছে, প্রতিবারই তারা হেরেছে। অথচ সব সময় জয়ের ঢোল পেটায়। ১৯৭১, ১৯৭৫ ও ১৯৯৯ সালে হেরেও তারা জয়ের ঢোল পিটিয়েছিল। তিনি বলেন, ১০ মে পাকিস্তানের ডিজিএমওই যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানিয়ে ফোন করেছিলেন। ভারত সেই অনুরোধেই সাড়া দিয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে ১১ সেনা নিহত ও ৭৮ জন আহত হয়েছেন: পাকিস্তান আইএসপিআর৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পরর ষ ট র জয়স য় ল প রসঙ গ
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষের কর্মপ্রচেষ্টা ও পরিণতির পথ
সুরা লাইল, পবিত্র কোরআনের ৯২তম সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ। এতে ২১টি আয়াত রয়েছে। ‘লাইল’ অর্থ রাত্রি, যা সুরার প্রথম আয়াতে উল্লেখিত। এই সুরা মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার বৈচিত্র্য, দানশীলতা ও কৃপণতার পরিণতি, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ বর্ণনা করে। সুরাটি দুই ধরনের মানুষের চিত্র তুলে ধরে: যারা দান করে ও ভালোকে গ্রহণ করে, তাদের জন্য সুখকর পথ সহজ হয়; আর যারা কৃপণতা ও অহংকারে ভালোকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য কঠোর পরিণতি অপেক্ষা করে।
সুরার প্রধান বিষয়
সুরা লাইল রাত, দিন এবং নর-নারীর সৃষ্টির শপথ দিয়ে শুরু হয়, যা মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার বৈচিত্র্যের দিকে ইঙ্গিত করে, ‘শপথ রাত্রির, যখন সে ঢেকে ফেলে! আর শপথ দিনের, যখন সে আলোয় উজ্জ্বল! আর শপথ তাঁর, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টার তো বিভিন্ন গতি।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১-৪)
আরও পড়ুনবিপদের সময় বলতে হবে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫রাতকে জাহেলিয়াতের অন্ধকার এবং দিনকে ইমানের আলোর সঙ্গে তুলনা করা যায়। নর-নারীর সৃষ্টি সব সৃষ্টির জোড়ার বৈচিত্র্য প্রকাশ করে। এই বৈচিত্র্য মানুষের কাজেও প্রতিফলিত হয়। (মাওলানা মুহাম্মদ শফি, মা’আরিফুল কোরআন, সুরা লাইল)
দানশীলতা ও সৎকর্মের পথ
সুরায় দানশীল ও সাবধানী মানুষের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে: ‘তাই কেউ দান করলে, সাবধানী হলে, ও যা ভালো তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুখকর পরিণামের পথ সহজ করে দেব।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ৫-৭)
এই ব্যক্তিরা ভালোকে সত্য হিসেবে মেনে নেয়, অহংকার থেকে মুক্ত থাকে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে। তারা জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে থাকবে: ‘তার থেকে দূরে রাখা হবে সেই সাবধানীকে, যে ধনসম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির জন্য, আর কারও প্রতি অনুগ্রহের প্রতিদানের প্রত্যাশায় নয়, কেবল তার মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য। সে তো সন্তুষ্ট হবেই।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১৭-২১)
কৃপণতা ও অহংকারের পরিণতি
বিপরীতে, কৃপণ ও অহংকারী ব্যক্তির পরিণতি ভয়াবহ: ‘আর কেউ ব্যয়কুণ্ঠ হলে, নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, ও যা ভালো তা বর্জন করলে, তার জন্য কঠোর পরিণামের পথ সহজ করে দেব। এবং যখন তার পতন ঘটবে, তখন ধনসম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ৮-১১)
এই ব্যক্তিরা ভালোকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং অহংকারে আল্লাহর পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের জন্য লেলিহান অগ্নি অপেক্ষা করে: ‘আমি তোমাদেরকে লেলিহান অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি। সেখানে সে-ই প্রবেশ করবে, যে নিতান্ত হতভাগ্য, যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১৪-১৬)
আরও পড়ুনসুরা গা’শিয়ার সারকথা০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আল্লাহর পথনির্দেশ
সুরায় আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন যে পথনির্দেশ দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর: ‘আর কাজ তো কেবল পথের নির্দেশ দেওয়া। আর আমিই (মালিক) ইহকাল ও পরকালের।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১২-১৩)
এই আয়াত মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এবং আল্লাহর হিদায়াতের মধ্যে ভারসাম্য তুলে ধরে। মানুষ তার পথ বেছে নেয়, কিন্তু আল্লাহই চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করেন।
সুরার তাৎপর্য
সুরা লাইল রাত ও দিনের শপথ দিয়ে মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার দ্বৈততা তুলে ধরে। রাত জাহেলিয়াতের অন্ধকার এবং দিন ইমানের আলোর প্রতীক। দানশীলতা, সাবধানিতা এবং ভালোকে গ্রহণ করা মানুষকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়, যেখানে কৃপণতা ও অহংকার জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। এই সুরা মানুষকে চিন্তাশীল হতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে উৎসাহিত করে। (তাফসির ইবনে কাসির, সুরা লাইলের ব্যাখ্যা)
মুহাম্মদ আসাদ, দ্য মেসেজ অব দ্য কোরআন, সুরা লাইল
আরও পড়ুনসুরা নাজিআতের সারমর্ম০২ মে ২০২৫