শুল্ক-কর প্রশাসনে বড় ধরনের সংস্কার আনা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে দুভাবে বিভক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই দুটি সংস্থা বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে পৃথক দুটি বিভাগ সৃষ্টি করা হবে। গত সোমবার রাতে এ–সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার।

নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগটি শুল্ক-কর আদায়ের কাজ করবে। আর রাজস্ব নীতি বিভাগ শুল্ক-কর হার বৃদ্ধি বা কমানোর বিষয়টি ঠিক করবে। দুই বিভাগই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় কাজ করবে।

এদিকে এনবিআর বিলুপ্ত করার সরকারি উদ্যোগ নিয়ে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। আগামী তিন কার্যদিবস (বুধ, বৃহস্পতি ও রোববার) তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা কলমবিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্যোগে গঠিত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। গতকাল বিকেলে তারা এই কর্মসূচি ঘোষণা করে।

এদিকে অর্থনীতিবিদেরা রাজস্ব খাতের এই বড় সংস্কারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, এই সংস্কারের ফলে কর প্রশাসনের আধুনিকীকরণ, রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষ হবে।

অন্যদিকে এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তারা মনে করেন, এই সংস্কারের ফলে রাজস্ব খাতে প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য বাড়তে পারে। সীমিত হতে পারে শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের সুযোগ।

এত দিন ধরে এনবিআর রাজস্ব নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি শুল্ক-কর আদায়ের কাজটি করে আসছিল। তবে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, একই সংস্থার কাছে নীতি প্রণয়ন ও আদায়ের দায়িত্ব থাকায় তাতে করব্যবস্থায় জটিলতা দেখা দিয়েছিল। নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন ব্যবসায়ী ও করদাতারা। তাই ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব নীতি ও আদায় কার্যক্রম দুটি আলাদা করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত অক্টোবরে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদের নেতৃত্বে রাজস্ব খাত সংস্কারে পাঁচ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়। গত জানুয়ারিতে এই কমিটি একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেয়। সেখানে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ তৈরির সুপারিশ করা হয়। কিছুদিন আগে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তা অনুমোদন দেওয়া হয়।

দুটি বিভাগ গঠিত হলেও এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। এনবিআর ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেই এটি করা হয়েছে।সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থ উপদেষ্টা

গত সোমবার রাতে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই অধ্যাদেশে শুধু রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য রাখা হয়েছে।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রয়োগ ও কর আদায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। রাজস্ব সংগ্রহের মূল কাজ করবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে গতকাল এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, দুটি বিভাগ গঠিত হলেও এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। এনবিআরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এটিই করা হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে তার কোনো প্রভাব পড়বে না।

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বিশ্বের সব দেশেই রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়ন বিভাগ পৃথক। যাঁরা নীতি প্রণয়ন করবেন, তাঁদের পেশাদার হতে হবে। অর্থাৎ দেশের জিডিপি, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান—এসব বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে। যাঁরা নীতি প্রণয়ন করবেন, তাঁরা আবার রাজস্ব সংগ্রহও করবেন, তা হতে পারে না।

রাজস্ব নীতি বিভাগ কী কী করবে

অধ্যাদেশে নতুন দুই বিভাগের কার্যপরিধি কী হবে, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ নামে নতুন যে বিভাগ গঠিত হবে, সেটির কাজ হবে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় রাজস্ব জোগানে সম্প্রসারণমূলক করভিত্তি, যৌক্তিক করহার, সীমিত কর অব্যাহতি নীতি অনুসরণ করে উত্তম করব্যবস্থা তৈরি করা।

এ ছাড়া স্ট্যাম্প আইনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন নতুনভাবে প্রণয়ন বা সংশোধন করা, স্ট্যাম্প ডিউটি, আয়কর, ভ্রমণকর, দানকর, সম্পদ কর, কাস্টমস শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, আবগারি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, সারচার্জ ও অন্যান্য শুল্ক-কর, ফি আরোপ, হ্রাস-বৃদ্ধি ও অব্যাহতি প্রদান-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে এই বিভাগ।

এই বিভাগের জনবল সম্পর্কে বলা হয়েছে, আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা ও হিসাব এবং আইন–সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞদের দিয়ে বিভাগটির বিভিন্ন পদ পূরণ করা হবে। আর সরকার উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যেকোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে বলে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে।

এ বিভাগকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ার জন্য অর্থনীতিবিদ, রাজস্ব বিশেষজ্ঞ, আইনবিশেষজ্ঞ, হিসাব ও নিরীক্ষা বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী সংগঠন, পেশাজীবী প্রতিনিধি, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিত্বে একটি পরামর্শক কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে অধ্যাদেশে।

এই সিদ্ধান্ত সাহসী ও সময়োপযোগী। এই সংস্কারের ফলে বাংলাদেশের কর প্রশাসনের আধুনিকীকরণ, রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষ হবে।সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ কী কী করবে

রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের মূল কাজ হবে শুল্ক-কর আদায় করা। এই বিভাগ সম্পর্কে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এ বিভাগের কাজের মধ্যে থাকবে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধির যথাযথ প্রয়োগ; কাস্টমস-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন; আন্তর্জাতিক দ্বৈত কর পরিহার–সংক্রান্ত চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন; করভিত্তি সম্প্রসারণে করসেবা, উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি জোরদার করা এবং সবাইকে করজালের মধ্যে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ; রাজস্ব ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত পদ্ধতি প্রণয়ন; রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে রাজস্ব নীতি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় সাধন, দক্ষ জনবল কাঠামো গড়ে তোলা এবং নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করা।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর এনবিআরের বিদ্যমান জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হবে। তবে এসব জনবল থেকে প্রয়োজনীয় জনবল রাজস্ব নীতি বিভাগেও পদায়ন করা যাবে।

তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

এনবিআর ও আইআরডি বিলুপ্ত করে নতুন দুই বিভাগ গঠন–সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারির খবরে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে এ নিয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়। তাঁদের শঙ্কা, সীমিত হতে পারে পদোন্নতি ও পদায়ন। সারা দিন বিভিন্ন দফায় অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন তাঁরা। অবশ্য কয়েক দিন ধরেই এনবিআর ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের বিভিন্ন সংগঠন আপত্তি জানিয়ে আসছিল। গতকাল বিকেলে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। সেখান থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কলমবিরতি পালন করবেন এনবিআর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তবে কলমবিরতির সময় আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, বাজেট ও রপ্তানি—এই তিনটি কার্যক্রম চালু থাকবে। বাকি সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

ঐক্য পরিষদের তরফ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেন এনবিআরের শুল্ক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার। তিনি বলেন, ‘আমরা এই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এখানে একত্র হয়েছি। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করে হঠাৎ জারি করা অধ্যাদেশ গ্রহণযোগ্য হবে না।’

কর্মসূচিতে যুগ্ম কমিশনার মোনালিসা শারমিন বলেন, অধ্যাদেশ জারির প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা আলোচনার সুযোগ চাইলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে একতরফাভাবে। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি মজবুত করতে হলে জনবান্ধব ও অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা যা বলেন

গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত সাহসী ও সময়োপযোগী। এই সংস্কারের ফলে বাংলাদেশের কর প্রশাসনের আধুনিকীকরণ, রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষ হবে। সামগ্রিক করব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের মাধ্যমে জনসংখ্যার ধনী অংশ, যারা সঠিকভাবে কর দেয় না, তাদের করের আওতায় আনতে হবে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য (কর নীতি) সৈয়দ আমিনুল করিম মনে করেন, এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্তে এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এখন দুই বিভাগের যাঁরা সচিব হবেন, তাঁরা প্রশাসন ক্যাডার থেকে আসতে পারেন, সেই পথ তৈরি হলো। এনবিআর থেকে সচিব হবেন কি না, তা বলা যায় না। তাঁর মতে, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল।

এনবিআর বিলুপ্তির ব্যাখ্যা

এনবিআর ও আইআরডি বিলুপ্ত করে যে দুটি বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার মূল লক্ষ্য হলো করনীতি প্রণয়ন ও কর ব্যবস্থাপনার কাজ আলাদা করা। দক্ষতা বাড়ানো, স্বার্থের সংঘাত হ্রাস ও দেশের করভিত্তি প্রসারিত করাও এর লক্ষ্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গতকাল এই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এনবিআর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ; এটি এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন। কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে এনবিআর পুনর্গঠন জরুরি। একই সংস্থা করনীতি প্রণয়ন এবং সেই নীতির বাস্তবায়ন করবে—এ অবস্থান সাংঘর্ষিক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত দ র র র কর মকর ত ব ল প ত কর দ শ র কর শ ল ক কর ব যবস য় ক স টমস উপদ ষ ট প রণয়ন সরক র গতক ল করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে সংস্কারের মাধ্যমে ফুটপ্রিন্ট রেখে যেতে চাই: বিএসইসি চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘‘পুঁজিবাজারে সংস্কারে কাজ চলছে। আমরা সংস্কারের মাধ্যমে ফুটপ্রিন্ট রেখে যেতে চাই। ইতোমধ‍্যে আমরা মিউচুয়াল ফান্ড, আইপিও এবং মার্জিন রুলস প্রণয়নের কাজ করছি। আইন প্রণয়নের কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারলে, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সংস্কার হয়ে যাবে।’’

বুধবার (২৫ জুন) ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ক‍্যাপিটাল মার্কেটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী, অর্থ) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আইসিবি চেয়ারম্যান অধ‍্যাপক আবু আহমেদ, ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, সিডিবিএল চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী ও এফআইসিসিআই সভাপতি জাভেদ আক্তার উপস্থিত ছিলেন।

খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘‘বিএসইসির কাজ রেগুলেট করা। বাজারের সূচক উঠানো-নামানো আমাদের কাজ না। বাজারের উন্নয়নে পলিসি তৈরি করা এবং বাজারে তা কাজ করছে কিনা তা মনিটরিং করা আমাদের কাজ।’’

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘গত ১৫ বছরে কীভাবে আমরা পিছিয়েছি সেটা সবাই জানেন। শেয়ারবাজারে ১০ কোটি টাকার মূলধনের কোম্পানি ২৭৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। আমাদের চেষ্টা ও ইচ্ছার অভাব নেই। বর্তমানে কোথায় আছি, আগামীতে কী কী করা দরকার, সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। এ জন্য প্রত্যেকটি বাজার সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করেছি। পুঁজিবাজার সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের গভর্নেন্স সংক্রান্ত রিপোর্ট এ সপ্তাহে আমরা হাতে পেয়েছি। গভর্নেন্স শক্তিশালী করতে পারলে শেয়ারবাজার আরো শক্তিশালী হবে। আমরা একটা ভগ্ন প্রক্রিয়ার ইকোনোমি থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছি। গত ৯ মাসে আমাদের কান্ডারিরা এই জাহাজ যে ঘুরিয়ে আনতে পেরেছে সেটি প্রশংসনীয়।’’

বাজেট প্রসঙ্গে রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘‘বাজেটে শেয়ারবাজারের অনেক ফোকাস করা হয়েছে। তবে সব কিছু আসেনি।’’

মিউচ্যুয়াল ফান্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পুঁজিবাজারের স্তম্ভ মিউচ্যুয়াল ফান্ড। আমাদের বাজারে তার প্রভাব খুবই কম। আমরা জানি দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কী অবস্থা? কীভাবে কী হয়েছে, কারা করেছে? তাই আগামী দিনে মিউচ্যুয়াল ফান্ড রুলসকে কীভাবে আরো শক্তিশালী করা যায়, টাস্কফোর্সের মতামতের ভিত্তিতে কাজ চলছে।’’

নেগেটিভ ইক্যুইটি প্রসঙ্গে তিন বলেন, ‘‘মার্জিন ঋণ থেকে নেগেটিভ ইক্যুইটি তৈরি হয়েছে। এটা শেয়ারবাজারের ক‍্যান্সার। এর সমাধানের বিকল্প নেই।’’

খন্দকার রাশেদ মাকসুদ আরো বলেন, ‘‘সরকারের প্রধান অঙ্গীকার জবাবদিহিতা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির যৌথ টাস্কফোর্স করতে যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহে এ যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। তারা কোম্পানিগুলোকে ব্যাংকমুখী থেকে ফিরিয়ে শেয়ারবাজারমুখী করতে কাজ করবে। এটা শুধুমাত্র বিএসইসি কাজ নয়। এই বাজারের জন্য ৪টি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনেক কিছু করার আছে। এখানে আইডিআরএ ও এফআরসি বাজারের বড় একটি অংশ।’’

ঢাকা/এনটি/

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইকসু গঠন ও আইন প্রণয়নের দাবি ইবির ২ ছাত্র সংগঠনের
  • পুঁজিবাজারে সংস্কারের মাধ্যমে ফুটপ্রিন্ট রেখে যেতে চাই: বিএসইসি চেয়ারম্যান