ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে ব্রাজিলে থাকেন তিনি। লাতিন ফুটবলের প্রবল টান আর ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের মুগ্ধতায় তিনি ইংল্যান্ড ছেড়ে ব্রাজিলে ফ্রিল্যান্স করছেন। বিখ্যাত সেই ক্রীড়া সাংবাদিক টিম ভিকরি ব্রাজিলের নতুন কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে নিয়ে নিজস্ব কিছু বিশ্লেষণ করেছেন। যেখানে এই অভিজ্ঞ সাংবাদিক প্রথমে ব্যাখ্যা করেছেন কেন বহু বছরের প্রথা ভেঙে ইউরোপিয়ান কোচ আনল ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা। আনচেলত্তি আসায় ব্রাজিল কি পারবে বিশ্বকাপে তার হারানো গৌরব ফেরাতে? 

আপাতত এই দুটি কৌতূহল সারাবিশ্বের ব্রাজিল সমর্থকদেরও; যার উত্তর দিতে গিয়ে একটি পডকাস্ট চ্যানেলে টিম ভিকরি জানিয়েছেন, ‘আনচেলত্তি ইউরোপের পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন লিগে চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ ছিলেন। তাঁর এই সফলতার হার দেখে আকৃষ্ট হয়েছে ব্রাজিল। তা ছাড়া ২০০২ সালের পর থেকে বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরে ব্রাজিল ইউরোপিয়ান দলগুলোর কাছে নকআউট পর্বে হেরে বিদায় নিয়েছে। সে কারণে ব্রাজিলের ফুটবল কর্মকর্তারা মনে করছেন ইউরোপিয়ান দলগুলোকে হারাতে হলে তেমন একজন কোচ দরকার, যিনি কিনা ইউরোপিয়ান ফুটবলটা ভালো জানেন। বিশ্বকাপে তিনি সফল হতে পারবেন কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আনচেলত্তির একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। ব্রাজিলের একটি সমর্থক গোষ্ঠী জাগো বনিতা ফুটবল দেখতে অভ্যস্ত, আনচেলত্তি সেই কৌশল ধরে রাখতে পারবেন কিনা তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।’

বছর দুয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে আনচেলত্তি জানিয়েছিলেন তিনি কোনো জাতীয় দলের কোচ হতে চান না, যেখানে বছরে মাত্র তিন মাসের মতো কাজ করার সুযোগ থাকে। তিনি চান ক্লাব ফুটলের ব্যস্ততার মধ্যে ডুবে থাকতে। তাঁর এ মানসিকতা বদলাতে সাহায্য করেছেন ক্যাসিমিরো। ব্রাজিলের ‘গ্লোবও’-এর খবর, নতুন চাকরি নেওয়ার আগে আনচেলত্তি ব্রাজিলের মিডফিল্ডার ক্যাসিমিরোর সঙ্গে কথা বলেছেন। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এ খেলোয়াড়ই তাঁকে ব্রাজিলে আসার জন্য প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছেন। সেই সঙ্গে নেইমারের সঙ্গেও নাকি যোগাযোগ ছিল আনচেলত্তির। মাসে ৭ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ডে ব্রাজিলের সঙ্গে চুক্তি করেছেন এ ইতালিয়ান কোচ। সেই সঙ্গে ছুটিতে ইউরোপে আসা-যাওয়ার জন্য জেট প্লেনেরও বন্দোবস্ত করার শর্ত রেখেছেন। 

ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা তাঁকে পেয়ে এতটাই খুশি যে বিশ্বকাপ জিততে পারলে বোনাস হিসেবে ৫ মিলিয়ন ইউরোও ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। বিশ্বকাপের এক বছর বাকি, এই সময়ের মধ্যে প্রথমে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপের টিকিট এনে দেওয়ায় প্রথম লক্ষ্য নতুন কোচের। সেখানে দল গোছানোর একটি ব্যাপারও রয়েছে। ব্রাজিলিয়ান মিডিয়ার খবর, আনচেলত্তি ক্যাসিমিরো, নেইমারকে দলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। সেই সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদে খেলা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগো, মিলিতাও আর এন্ড্রিক তো থাকছেনই আনচেলত্তির একাদশে। 

৬ ও ১১ জুন বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ইকুয়েডর আর প্যারাগুয়ের মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। নতুন কোচ চেষ্টা করছেন রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ব্রাজিলের একটি ফ্রেন্ডশিপ ম্যাচ আয়োজনেরও। ২৫ মে লা লিগায় রিয়ালের হয়ে শেষ ম্যাচের পরই ক্লাব থেকে বিদায় নেবেন আনচেলত্তি। তাঁকে সম্মান জানিয়ে বিশাল আয়োজনের পরিকল্পনাও করছে রিয়াল মাদ্রিদ।

ব্রাজিল তাদের ১১১ বছরের ফুটবল ইতিহাসে মোট ৮৪ জন কোচ নিয়োগ দিয়েছে; যার মধ্যে আনচেলত্তিকে নিয়ে মোট চতুর্থবার বিদেশি কোচ নিয়োগ দিল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউর প য় ন ব শ বক প কর ছ ন ফ টবল র একট

এছাড়াও পড়ুন:

ককটেল ফেটে কব্জি উড়ে গেল ডাকাতের, যন্ত্রণায় মৃত্যু

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাল্কহেডে ডাকাতি করতে গিয়ে হাতে ককটেল বিস্ফোরিত হয়ে এক ডাকাত সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অপর দুই ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। এছাড়া ডাকাত দলের হামলায় দুই গ্রামবাসীও আহত হয়েছেন।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে গজারিয়া উপজেলা হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে ডাকাতদের নারায়ণগঞ্জের চর কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে আটক করে।

তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ও আহত ডাকাত সদস্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ডাকাত দলের হামলা আহতরা হলেন, ভাটি বলাকী গ্রামের ইসহাক বেপারীর ছেলে আলম (৩৭) ও একই গ্রামের রাসেলের ছেলে সোহাগ (১৬)।

আরো পড়ুন:

ছেলের খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে লাশ হলেন বাবা

সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ২

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে নোঙ্গর করে রাখা ছিল কয়েকটি বাল্কহেড। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাত ৩টার দিকে একটি স্পিডবোট নিয়ে সেখানে ডাকাতির চেষ্টা করে সঙ্ঘবদ্ধ একটি নৌ ডাকাত দল। তবে নদীতে জেলেরা থাকায় সুবিধা করতে না পেরে তারা ফিরে যায়।

পরদিন শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একটি স্পিডবোট ও একটি ট্রলার নিয়ে তারা আবার ফিরে আসে। খবর পেয়ে ভাটি বলাকী গ্রামের লোকজন তাদের বাধা প্রদান করে। আতঙ্ক তৈরি করতে ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও গ্রামবাসীকে উদ্দেশ্য করে ২-৩টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় ডাকাতদল। এ সময় ট্রলার থেকে গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়তে গিয়ে অসাবধানতাবশত তা ডাকাত দলের এক সদস্যের হাতে বিস্ফোরিত হয়। এতে ওই ডাকাত সদস্যের এক হাতের কব্জি উড়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে স্পিডবোটে থাকা ৫-৬ জন ডাকাত পালিয়ে যায়।

অন্যদিকে, ট্রলারে থাকা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে ধাওয়া দিয়ে নদীর চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় থেকে আটক করে জনতা। পরে উত্তেজিত জনতা তাদের গণধোলাই দিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় একজন।

বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, “এ রকম একটি খবর আমি পেয়েছি। ঘটনা নদীতে আর ঘটনাস্থল নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সীমানায় পড়ায় বিষয়টি তারা দেখছে।”

বিষয়টি সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সালেহ আহম্মেদ পাঠান বলেন, “আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী তারা শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার আনন্দবাজার এলাকা থেকে একটি জেলেদের ট্রলার ছিনতাই করে। ছিনতাই করা ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে কয়েকজন ডাকাত মেঘনা নদীর গজারিয়া উপজেলার ভাটি বলাকী এলাকায় ডাকাতি করতে যায়।”

তিনি বলেন, “স্থানীয়রা তাদের বাধা দিলে ডাকাতরা জনগণকে উদ্দেশ্য করে কয়েক কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় বলে শুনেছি। ককটেল নিজের হাতে বিস্ফোরিত হয়ে এক ডাকাত সদস্যের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাকেসহ তিন ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে জনতা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “তাদের তিনজনের অবস্থায়ই আশঙ্কাজনক। চিকিৎসার জন্য তাদের নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর একজন মারা গেছে। নিহতের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে আমরা দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছি।”

বিষয়টি সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. জহিরুল ইসলাম, “এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে দুইজন রোগী আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন যার হাতে ককটেলে বিস্ফোরিত হয়েছিল, সে মারা গেছে। আরেকজন চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমরা কারোই নাম পরিচয় পাইনি।”

বিষয়টি সম্পর্কে নৌ পুলিশ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় এক ডাকাত সদস্য নিহত হয়েছে। আহত দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনো পর্যন্ত আমরা কারোই নাম পরিচয় পাইনি। তাদের নাম পরিচয় জানতে চেষ্টা করা হচ্ছে।”

ঢাকা/রতন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ