গ্রীষ্মের সকালে

তোমার গোপন দাগ আমি চিনি না

তবু তাকে ডাকি প্রেম।

তুমি শুয়ে আছ গ্রীষ্মের করুণ রোদে; পেছনে জ্বলছে আকাশ।

দূরে কোনোখানে গোলাপের মউ মউ গন্ধ, লাল আটার রুটি,

আর একফালি তরমুজ—

যেন মুখ ভরে ওঠে স্বপ্নে।

তোমার সাথে দেখা নেই, কতকাল নেই আলাপচারিতা,

দুঃখ নেই, নেই একসাথে শোনা কোনো গান।

আজ শুধু তোমার জন্মদিন আমাকে ছুঁয়ে আছে মমতায়।

চেয়ে দেখো, কোনো এক ঝড়ে ভেঙে গেছে জাহাজের ডেক

সে জাহাজ আমার চোখে,

আমি ভেঙে গেছি কোনো এক সভ্যতার সাথে,

আমি ভেঙে গেছি ভাষার সাথে সাথে।

পোস্টম্যান আসবে একটা চিঠি নিয়ে,

চিঠির অক্ষরে গাঢ় অন্ধকার।

সে লেখায় কার অশ্রু?

চিঠিতে লেগে আছে অসহ্যের প্রলেপ।

আমি ভাঙা ঢেউ, আমি গ্রীষ্মের তাপ।

আমরা কি কাঁধে তুলে নেব অস্ত্র?

আমাদের প্রেম কি তবে হয়ে যাবে অঙ্গার?

আমরা একসাথে যাব বসন্তবিহারে, বিশ্রামে।

দুহাত ভরে প্রেম নিয়ে বসাব অপ্রেমিকের পাঁজরে।

আজ এই সকালে ঝনঝন থালাবাসনের আওয়াজ,

আজ এই সকালে বুকের ভেতর তোমার প্রেমের জোঁক।

গ্রীষ্মদিনে একটা শর্টকাট রাস্তায় ঢুকে পড়তে চায় মন

তোমার হাত ধরে।

ওইটুকু হাতই সব।

ওইটুকু ধরার জন্যই হাত পাতি তোমার সম্মুখে।

আমি লোভী নই,

হলে তোমার মাথাটা কেটে নিয়ে আসতাম।

সাজিয়ে রাখতাম আমার কোলের কাছে।

আমার প্রেমের কাছে।

আমি অত কালবৈশাখী নই।

আমি অত রুদ্র নই।

আমাদের কথা বলবার কথা ছিল।

কথা ছিল ক্যাবিনেটে বসে ঘোষণা করব প্রেমের দরপত্র।

কিন্তু যুদ্ধে যেতে হলো আমাদের।

আমরা ফিরতে পারলাম না।

আমার দরিয়ায় দিক নেই,

নেই পথহারা কোনো সাগরপাখি।

আমি একা একা খুঁজে বেড়াই বাতাসে

তোমাকে।

আজকে সকালে তুমিই ওষুধ, তুমিই নেপথ্যে।

আমার এই নষ্টমুখ নেবে তুমি?

ধানক্ষেতে যাবে? অস্তগামী সূর্য যেখানে মিশে যায় লজ্জায়?

বাংলার মেহগনিগাছের গন্ধ শুকে শুকে আগাবে কি?

চলো আমরা মঞ্জিল গড়ে তুলি

সবুজে সবুজ।

গ্রীষ্মের ফল আর ছুটি।

একটা সকালে সমস্ত পৃথিবীকে পাগলা গারদে পাঠিয়ে

শুধু তুমি আর আমি।

আমার সিগারেট ভালো লাগে না,

শ্বাস নিলে জামপাতার ঘ্রাণে বুক ভরে যায়।

তোমার গন্ধ যেন পাখির পালকের গায়ে লেগে আছে,

তুমি যেন সমুদ্রের ঢেউয়ের নোনা প্রাণ!

আমাকে পাখি পড়ানোর মতো প্রেম পড়ালে তুমি;

আমি দিকদিশা হারিয়ে, দুর্দান্ত পোষা পাখির সুরে

শুধু বলি, আমি তোমাকে ভালোবাসি।

সে শব্দ, সে আলো, সে উন্মুখ চিৎকার—

কোথাও যায় না;

আটকে থাকে খাঁচার পাঁজরে।

তুমি কী ভুবন ভ্রমিয়া আসবে?

রবীন্দ্রনাথের মতো?

কোনো এক গ্রীষ্মের সকালে.

..

মেসোপটেমিয়া

আমার বুক বরাবর তোমার যেই হাত উইঠা আসে মোলায়েম ভঙ্গিতে,

তারা মেসোপটেমিয়া ভ্রমণরত?

আমার ঠোঁট বরাবর তোমার যে চোখ ভেদ করে,

সেই চোখেরে মনে হয় শামুকের খোসা

তোমার সুদৃপ্ত প্রেম থেকে পরিত্রাণ চাই না কোনোকালেও।

বিস্মরণ ফুল, নদী, রজনীগন্ধার বাস আর তুমি সকলই প্রস্থান করো।

সস্তা কবিতা লিখে জবুথবু আমার হাত তুমি কী লীলায় ধরলা,

রাস্তা পার করলা, যেন পার করলা পুলসিরাত।

তোমারে স্টেজে দেখতাম বহু আগে অবিরত ডায়ালগ দিতেছ।

আমার মনে হইত,

তোমার শিকড় গজাইছে স্পট লাইটের তলায়।

প্রেমিকরে দেবতা ডাকার ধৃষ্টতা আমার নাই,

তবে নীল জামা গায়ে আমার দিকে যখন তুমি হাঁইটা আসো,

আমার ভেতরে একটা পলিটিক্যাল বাহাস চলে।

তোমার সিগারেটে কালো হওয়া দাঁত আমারে কামড়াইতে আসে।

আমি বিহ্বল হইয়া টের পাই—

জ্যামাইকা থেকে অস্ট্রেলিয়াগামী হলুদ রোদের মতো নরোম তোমার কামড়!

প্রেম আটকাইছে বানসালির সেটে,

আর আমি তোমার সিনে।

ঢেউয়ের পর ঢেউ আসে—

কখনো জাগায় প্রেম, কখনো যৌনতা,

কখনো তুমি আর কখনো শিল্পকলা...

নীলক্ষেত পারায়া জিগাতলা যাবার দিনগুলায়,

ঠিক রাত দশটায় আমি নিয়ম করে ক্ষয়ে গেছি।

এই মোলায়েম বেঁচে থাকা এখন শুধুই তোমার জন্য।

এই ট্র্যাশ কবিতা, দুটো সিগারেট,

একটা বেহুশ দিন আর ঘোলা চোখ সব তোমার।

প্রেমপ্রার্থীরা বলে,

আমার চোখ নাকি সমুদ্রের মতন!

আমি বাঁকা হাসি হাইসা নির্দ্বিধায় তাদের বলি—

এইখানের সমুদ্রের নাবিক একজনই!

মে মাসে বৃষ্টি ব্লুজ

জলের দিন,

আই রিমেম্বার স্কাইজ রিফ্লেক্টেড ইন ইওর আইজ।

বাজে মুডি ব্লুজ...

ড্যাং ড্যা ড্যাং ড্যাং ড্যাং।

জল, দুপুর, নদী, দ্বিপ্রহর, প্রজাপতি ম্যাচ আর মের গান।

আত্মহননের গান কলাবতীগাছের শরীরজুড়ে।

কানাগলি,

বৃষ্টির জল ঘোলা হলো বারগেন্ডি রঙা বিকেলে।

বিরহী নকশা জাগে কপালের ঠিক মাঝখানে।

কামিনীকাঞ্চন ঝুরঝুর করে আদরে নুয়ে পড়ে ছাদের কার্নিশে।

কালো পাখি উড়ে যায় গলির শেষে।

নিঃস্তব্ধতা তরঙ্গ ছড়ায় বিস্মৃতির শুঁড়িখানায়।

মাজবুরিয়া,

আকাশের রং খয়েরি, ভয় ছড়ায় নাভিমূলে।

কান্নাকে ডাকি ক্লাউন।

গোধূলির আলোয় এসো,

খোলো সব আবরণ যা তোমাদের আছে।

বিরাগ, জেদ, খিদে, কাম, লোভ, পরোক্ষ প্রতিহিংসা, কাপড়, ন্যাকা কান্না—সব সব সব।

ড্রাগস,

নেশাতুর চোখ, উইন্ডি মন আর হৃদয় জোড়া স্কারস।

দিন কাটছে নধর সাইডবার্নে।

ফ্যান্সি ডিল হচ্ছে তোমার সাথে।

প্রেমানল ছড়াব সিন্ধু থেকে ইনকায়—

মায়ান থেকে মোগলে।

তামাম দুনিয়ায় ঘোষণা করি জিহাদের।

স্কেচ করি প্রেমের।

বৃষ্টি এতগুলো কথা কওয়াইলো শালা!

বৃষ্টির আশঙ্কা

আমার মেঘমেদুরে মন

বৃষ্টি নামলেই কাদা কাদা।

আমার বৃষ্টি নামার মন

ভিজে ভিজে নয়নতারা।

বৃষ্টির আশঙ্কায় সারা দিন ক্লাউডি

ঘোলা চোখমুখে তোমাকে খুঁজি।

আলুথালু চুল ঠোঁট।

মৃন্ময় ডাক শুনি।

রাগী বেড়াল আর মেঘ একসাথে ডাকে।

ঘরঘরঘর।

গাছের শরীর ভিজে ভিজে দাঁড়িয়ে আছে।

কালো শরীর।

গাছের বৃষ্টিমুখর ভরাট শরীর।

তাতে উসকানি দেয় হাওয়া।

গাছের জলোৎসব।

আমি ভাবি—

তোমার শরীর কি মাটির মতো ভিজে উঠছে?

তুমি কি গাছের মতো ভিজে উঠছ?

কেয়া–কামিনীর ঘ্রাণ;

ভারী বাতাসে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে।

মাথাটা বাড়ি মেরে দুই ভাগ করে ফেলতে ইচ্ছা হয়।

কেন শুধু বৃষ্টির শব্দ পাই না?

কেন সাতসতেরো শব্দ ঘিরে রাখে?

পুকুরের পানিতে বৃষ্টির ফোঁটা কেন পৃথিবীর শেষ কথা নয়?

বৃষ্টির দিন রিকশার পর্দা তুলে দিয়ে

চলে যেতে ইচ্ছা করে আসামে।

সেখানেও একই মেঘ, একই জলঝড়।

কিন্তু কীভাবে বলি,

‘ওই রিকশা যাবা? আসাম?’

শৈশবে বৃষ্টি ছিল আমার

কৈশোরে বৃষ্টি ছিল বন্ধুদের

যৌবনে বৃষ্টি হয়ে গেল তোমার, হা হা হা!

এখন মেঘ দেখলেই তুমি,

এখন জল নামলেই তুমি,

এখন সরোদ বাজলেই তুমি।

বৃষ্টির দিন এলে মনে হয়,

তোমার সাথে ফুল তুলতে যাই।

যে ফুলে কাঁটা,

যে ফুলে ব্যথা,

যে ফুলে কেটে যাবে হাত।

তুমি তখন পাশেই থাকো,

আমার আঙুলে এঁকে দাও সেই শব্দ।

আমি জলরাশির অভিমানে ফেটে পড়ি।

আমাকে বৃষ্টির সাথে ঝরাও।

আমাকে মেঘের সাথে ভাসাও।

চড়ুই পাখিরা আনন্দে বাতাসে ভাসছে

টিয়ারা গা ঢেকে ঝিমায়।

বারান্দার সব কাপড় ভিজে গেছে।

আর কখনো শুকাবে না।

যেভাবে শুকায়নি শৈশবের ক্ষত।

যেভাবে শুকায়নি বুকের দাগ।

কিছু বৃষ্টি থামে না।

কিছু কান্না থামে না...

তুমি আর আসো না কেন?

আর ডাকো না কেন আমাকে?

মেঘের সাথে আসতে পারো না?

তোমার পায়ে শিকড় আটকে গেছে।

তুমি কি এই বরষায় পথ হারানো নাবিক?

আমার চতুর্দিকে কি উত্তাল ঢেউ?

বৃষ্টির দিন

দালান বাড়ি, খেতখামারি—

সব ভিজে উঠছে।

বৃষ্টির দিন,

তোমার জন্য;

আমার চোখ আর চোয়াল ভিজে উঠছে।

আমি নদীর দিকে চলে যাব।

জল আর ঘোলাটে জলে খাবি খাব।

নদী মেখে আমি বৃষ্টির আশঙ্কা ভুলে যাব।

আজ সারাটা দিন পাখির ডানা ঝাপটানো

আজ সারাটা দিন ফেলে আসা শীতকালের কথা।

আজ সারাটা দিন উড়াক-তাড়াক সন্ধ্যার স্মৃতি।

আজ সারাটা দিন বৃষ্টি নামের জলের দাগ।

আজ সারাটা দিন আমি আর ভেজা শরীরের ল্যাজ নাড়া কুত্তা।

আজ সারাটা দিন এর পর থেকে তুমি

মেয়েদের বুক

একটা–দুইটা–তিনটা কইরা তুলা মেঘ উইড়া যাচ্ছে তোমার ঘরের দিকে।

ওরা রাতে কোথায় থাকে? তোমার ঘরে? বুকেই?

বুকে কী রাখো? কর্পূর না খাঁচা?

তোমার বুক কি পাথর?

ভাঙে না?

কীভাবে ভাঙে? হাতুড়ি চালাইলে নাকি পানিতে?

চোখের পানিতে ভাঙন ধরলে কী করো?

শুকাও না?

তোমার বুকের ভেতর গন্ধ পাওয়া যায় ছাতিম ফুলের।

ভুল বললাম? অন্যরা কিসের গন্ধ পাইত?

পাইত না?

তোমার বুককে উদ্দেশ্যে করে সেদিন লিখলাম দুইটা লাইন—

মাননীয়, আপনি সুবিশাল প্যারেড গ্রাউন্ড,

আপনার ওপর দিয়ে বাজ পাখির মতন সরে সরে যাচ্ছি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র চ খ আজ স র ট

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পর্কের মতো জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতেও এআইয়ে ঝুঁকছে মানুষ, পরিণতি কী

চলতি বছরের এপ্রিলে কেটি মোরান প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর ছয় মাসের সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এমন এক সাহায্যকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। তাঁর কৃতজ্ঞতা পেয়েছে চ্যাটজিপিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চ্যাটবট।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ৩৩ বছর বয়সী এই নারী চ্যাটবটটিকে স্নেহের সঙ্গে ‘চ্যাট’ নামে ডাকেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাকে কিছু বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে এবং নিজের সঙ্গে আলাপে বাধ্য করেছে, যা আমি এড়িয়ে যাচ্ছিলাম।’

মোরান তাঁর বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের কাছেও মনের কথা খুলে বলেছিলেন। এরপরও তিনি মনে করেন, চ্যাটজিপিটিই তাঁকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিল যে, তাঁর সম্পর্কের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর দুশ্চিন্তার মূল কারণ। চ্যাটবটটির সঙ্গে এক সপ্তাহ কথা বলার পর, তিনি সম্পর্কটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে।

বিচ্ছেদ, চাকরি পরিবর্তন বা অন্য দেশে চলে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই সাধারণত বন্ধুবান্ধব, পরিবার বা থেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে অভ্যস্ত। তবে এখন কিছু মানুষ নিজের অনুভূতির বিষয়ে তাৎক্ষণিক নির্মোহ মূল্যায়ন পেতে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছেন।

মোরানের মতো কেউ কেউ কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস জোগানোর কৃতিত্ব এআইকে দিচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে বলছেন, এআইয়ের তোষামুদে স্বভাব কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

নিখুঁত নয়

জুলি নাইসকে চ্যাটজিপিটির কাছে মনের কথা খুলে বলতে বাধ্য করেছিল মূলত অবসাদ। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর প্রযুক্তি শিল্পে তিন বছর কাজ করার পর তিনি দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা এবং ক্রমাগত ক্লান্তিতে ভুগতে শুরু করেন।

গত বছরের শেষের দিকের সেই সময়টি সম্পর্কে জুলি বলেন, ‘অবশেষে আমি এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছি, যেখানে মনে হচ্ছিল— আমাকে কিছু একটা করতেই হবে, পরিবর্তন আনতেই হবে। আমি তখন একটা মানব-খোলস মাত্র ছিলাম (নিষ্প্রাণ)।’

জুলি সিদ্ধান্ত নিলেন— স্থান পরিবর্তন করবেন, বিশেষত ফ্রান্সে চলে যাবেন। আর এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য তিনি দ্বারস্থ হন চ্যাটজিপিটির। তিনি তাঁর চাওয়াগুলো (একটি শান্ত শহর, যেখানে ভালো সংখ্যক প্রবাসীর বসবাস থাকবে) এবং তাঁর অপছন্দগুলো (প্যারিসের মতো ব্যস্ত শহর নয়) বিশদভাবে উল্লেখ করলেন। চ্যাটবটটি তাঁকে ফ্রান্সের দক্ষিণের একটি ছোট্ট শহর ইউজেস সুপারিশ করল। সেখানকার বাসিন্দা ৮ হাজার ৩০০ জনের মতো।

জুলি চলতি বছরের এপ্রিলে সেখানে চলে যান। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই প্রক্রিয়াটি চ্যাটজিপিটির হাতে তুলে দেওয়ায় পুরো ব্যাপারটি নিয়ে তাঁর অতিরিক্ত চাপ অনেক কমে গিয়েছিল। যদিও তিনি এখন বলছেন, সিদ্ধান্তটি নিখুঁত ছিল না। ইউজেসে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা প্রবাসীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আছে ঠিকই। তবে চ্যাটজিপিটি যে তথ্যটি দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, সেটি হলো এই প্রবাসীদের বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত। আর জুলির বয়স ৪৪ বছর।

তরুণদের মধ্যে জিজ্ঞাসার প্রবণতা বেশি

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান উল্লেখ করেছেন, এই প্রবণতাটি তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

গত মে মাসে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিকোইয়া ক্যাপিটালের ‘এআই অ্যাসেন্ট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বয়সে ২০ থেকে ৩০ বছরের কোঠায় থাকা ব্যবহারকারীদের বিষয়ে অল্টম্যান বলেন, ‘তাঁরা চ্যাটজিপিটির কাছে জিজ্ঞাসা না করে আসলেই জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তগুলো নেন না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘তাঁদের জীবনে আসা প্রতিটি ব্যক্তি এবং তাঁদের আলাপের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট এআইয়ের কাছে আছে।’ (এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ওপেনএআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি)।

আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও, ফস্টার স্কুল অব বিজনেস, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন

তবে এভাবে তরুণেরাই শুধু এআইয়ের শরণাপন্ন হচ্ছেন, ব্যাপারটা তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের কানসাস সিটির বাসিন্দা মাইক ব্রাউন। ২০২৩ সালে ৫২ বছর বয়সে এসে নিজের ৩৬ বছরের বিবাহিত জীবন নিয়ে কী করা উচিত, সেই পরামর্শের জন্য একটি চ্যাটবটের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর বন্ধু, যাজক এবং বিবাহ পরামর্শক সবাই তাঁকে বিচ্ছেদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তিনি বলেন, ওই বছরই চালু হওয়া একটি ইন্টারেকটিভ চ্যাটবট ‘পাই.এআই’-এর সঙ্গে ৩০ মিনিটের কথোপকথনের পরই তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিশ্চিত হন।

ব্রাউন বলেন, ‘আমার এই ভাবনাগুলো যাচাই করে নেওয়া দরকার ছিল এবং এই পথে এগোনোই যে সঠিক, সেটির জন্য নিশ্চয়তা পাওয়াটা দরকার ছিল।’ তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ দৃষ্টিভঙ্গি পেতে তিনি চ্যাটবটটির ওপর আস্থা রেখেছিলেন।

আরও পড়ুনচ্যাটবট কি মানুষের মতো বুদ্ধিমান হতে পারবে২৯ মে ২০২৪

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ফস্টার স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও কীভাবে মানুষ ও এআইয়ের মধ্যে সহযোগিতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথার্থতা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বুঝতে পারছেন, কেন মানুষ এভাবে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো সার্বক্ষণিক এটি হাতের কাছে পাওয়া যায়, বেশিরভাগ মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত উত্তর দিতে পারে এবং এটিকে তুলনামূলক বেশি নিরপেক্ষ বলেও মনে করা হয়।

বুসিও বলেন, ‘এআই সাধারণত অনেকটাই কূটনৈতিক ভাষায় অভ্যস্ত, পক্ষান্তরে মানুষ বিশেষত ব্যক্তিগত পরামর্শের ক্ষেত্রে নিজের চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মতামত দিয়ে থাকে।’

তবে বুসিও সতর্ক করে বলেন, বেশিরভাগ এআই মডেলের ‘তোষামোদী’ প্রবণতা থাকায় তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করার বিষয়ে যতটা আগ্রহী, ততটা সেরা পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী নয়। তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (চ্যাটবট) এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করতে পারে। কারণ, ব্যবহারকারী খুশি হলে, তারা আবার ফিরে আসে।’

কেটি মোরানের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। চ্যাটজিপিটি বন্ধুর মতো করে কথা বলায় তিনি অবাক হয়েছিলেন বলে জানান। চ্যাটবটটি তাঁকে এ রকম বলেছিল, ‘আপনি এমন কাউকে পাওয়ার যোগ্য, যে আপনাকে আশ্বস্ত করবে; এমন কাউকে নয়, যার নীরবতা আপনাকে দুশ্চিন্তার গোলকধাঁধায় ফেলে দেবে।’

আরও পড়ুনকিশোরকে আত্মহত্যায় উৎসাহ দিয়েছে চ্যাটবট, নির্মাতার বিরুদ্ধে মায়ের মামলা২৪ অক্টোবর ২০২৪

রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা ব্যক্তিদের কেউই এআইয়ের ওপর নির্ভর করার জন্য অনুতপ্ত নন বলে জানিয়েছেন। মাইক ব্রাউনের মতে, এআই ‘আবেগী, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের’ মতো কাজ করেছে। কেটি মোরানের কাছে এটি ছিল ‘সবচেয়ে কাছের বন্ধুর’ মতো। আর জুলি নাইস বলেন, এআই তাঁকে তিনি আসলে কী চান, তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে।

এরপরও, অধ্যাপক বুসিও একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।’

এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি বলব, একটু পিছিয়ে আসুন এবং নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যে যে সৌন্দর্য আছে, তা নিয়ে ভাবুন। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করার জন্য যে, আমরা নিজেরাও চিন্তাভাবনার কাজটা করছি।’

আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটিসহ অন্য এআই চ্যাটবটকে যে ৭ তথ্য দেওয়া যাবে না৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ