ঢাকায় একের পর এক ভবন হচ্ছে; নতুন নতুন স্থাপনা হচ্ছে। এর মধ্যেও কিছু কিছু জায়গায় আছে গাছ। সরকারের বন বিভাগ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সংস্থা ইউএস ফরেস্ট সার্ভিসের করা এক বৃক্ষ জরিপ থেকে জানা গেছে, ঢাকার ৩০৬ বর্গকিলোমিটারে এখনো টিকে আছে ছোট–বড় প্রায় ১৩ লাখ গাছ।
ঢাকায় প্রথমবারের মতো এই বৃক্ষ জরিপ হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘আরবান ট্রি ইনভেনটরি অব ঢাকা সিটি’। এতে আরও উঠে এসেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় গাছের ঘনত্ব বেশি। সেখানে প্রতি হেক্টর জায়গায় গড়ে গাছ রয়েছে ১৫টি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এ সংখ্যা ৭টির মতো।
ঢাকা দক্ষিণে গাছ-আচ্ছাদিত জায়গার পরিমাণ ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। ঢাকা উত্তরে তা সাড়ে ১০ শতাংশ। বৃক্ষ জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডার টরন্টোয় প্রায় ২৭ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় ৩৭ শতাংশ ও নিউইয়র্কে প্রায় ২১ শতাংশ এবং জাপানের শিকাগোয় ১৭ শতাংশের বেশি এলাকা গাছে আচ্ছাদিত।
এত দিন ঢাকা শহরে গাছে আচ্ছাদিত জায়গা নিয়ে একেক ধরনের উপাত্ত ছিল। এ গবেষণার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আমরা ঢাকার গাছ, গাছের ধরন, প্রজাতি, ঘনত্ব ও আচ্ছাদন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেলাম।বন অধিদপ্তরের উপ–বনসংরক্ষক (ডিসিএফ) মো.জহির ইকবাল
ঢাকায় প্রতি সাতজনের বিপরীতে গাছের সংখ্যা একটি। এসব গাছ প্রতিবছর ঢাকা শহরের দূষিত বাতাস থেকে ৫৩৮ টন বস্তুকণা, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন ডাই–অক্সাইডসহ ছয় ধরনের পরিবেশদূষণকারী উপাদান শুষে নেয়। বিপরীতে গাছগুলো বছরে সাড়ে ৫৩ হাজার টন অক্সিজেন জোগায়। ১৩ লাখ গাছের আর্থিক মূল্য ১০৬ কোটি টাকা।
গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বন অধিদপ্তরের উপ–বনসংরক্ষক (ডিসিএফ) মো. জহির ইকবাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন ঢাকা শহরে গাছে আচ্ছাদিত জায়গা নিয়ে একেক ধরনের উপাত্ত ছিল। এ গবেষণার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আমরা ঢাকার গাছ, গাছের ধরন, প্রজাতি, ঘনত্ব ও আচ্ছাদন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেলাম।’
প্রথমবারের মতো হওয়া বৃক্ষ জরিপ বলছে, ঢাকায় সব মিলিয়ে ৩৩ গোত্রের ১১০ প্রজাতির গাছ পাওয়া গেছে।জহির ইকবাল আরও বলেন, নগর উন্নয়নে সবুজকে প্রাধান্য দিতে গেলে নগর–বৃক্ষ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকা দরকার। এ গবেষণা নীতিনির্ধারকদের সবুজকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য, আজ বৃহস্পতিবার পালিত হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে দিবসটি পালন করা হয়।
কীভাবে হিসাব
বৃক্ষ জরিপ শুরু হয় ২০২২ সালে নভেম্বরে। উপাত্ত সংগ্রহ শেষ হয় ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল। এরপর উপাত্ত প্রক্রিয়াজাত ও বিশ্লেষণ করা হয় এবং গবেষণা প্রতিবেদন লেখা হয়। সম্প্রতি এটি বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণাটিতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ইউএসএআইডি।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা ঢাকা দক্ষিণের ৩৭০টি ও ঢাকা উত্তরের ৩৮৫টি, মোট ৭৫৫টি প্লট বেছে নেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নর্দান রিসার্চ সেন্টারের ‘আই–ট্রি ইকো টুল’ ব্যবহার করে গাছের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। প্লট বেছে নেওয়া হয়েছে স্তরভিত্তিক দৈবচয়ন–পদ্ধতিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফরেস্ট সার্ভিসের সাবেক কর্মসূচি সমন্বয়ক সহদেব চন্দ্র মজুমদার এ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাছের সংখ্যা নির্ণয়ে আমরা পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতিটি বেছে নিয়েছি।’
কোন গাছ বেশি
ঢাকায় সব মিলিয়ে ৩৩ গোত্রের ১১০ প্রজাতির গাছ পাওয়া গেছে। বৃক্ষ জরিপে ঢাকায় কোন গাছ বেশি, তা–ও উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ১৩ লাখ গাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে আম, মেহগনি ও নারকেলগাছ। আরও পাওয়া গেছে বট, কড়ই, আকাশমণি, ইউক্যালিপটাস, অশ্বত্থ, মান্দার, গামার, রেইনট্রি, জারুল, সিন্দুরি, দেবদারু, কাঠগোলাপ, জামরুল, জাম, তেঁতুল, অর্জুন, সেগুন, বহেড়া, কাঠবাদাম, বাবলা, বড়ই, বার্মিজ শিমুল, পাতাবাহার, বরুণ, কর্পূর, তাল, কামরাঙা, কাঁঠাল, হিজল, নিম, বকুল, শজনে, কামিনী, কদম, শিউলি ইত্যাদি গাছ।
গবেষণায় সম্পৃক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক কামাল হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার গাছের ৬২ শতাংশ বিদেশি প্রজাতির। সবুজায়নের পরিকল্পনায় সৌন্দর্যবর্ধনের গাছকে প্রাধান্য না দিয়ে আম, মেহগনি, জাম, সাদা কড়ই, কাঁঠাল ও কনকচূড়া প্রজাতির গাছ লাগানো যেতে পারে।
গাছগাছালিতে ভরপুর রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা। গতকাল বিকেলেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ১৩ ল খ গ ছ উপ ত ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কোহলিদের উৎসবে ১১ জনের মৃত্যু: দায় কার—ফ্র্যাঞ্চাইজি না রাজ্য সরকারের
ক্রীড়াঙ্গনে অভাগাদের অপেক্ষা ফুরানোর মৌসুম হিসেবেই শুধু এটিকে মনে রাখতেন সবাই। কিন্তু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু সমর্থকদের হুড়োহুড়ির কারণে ভারতীয় ক্রিকেটে এটিকে ট্র্যাজেডির মৌসুম হিসেবেও মনে রাখা হবে।
১৮ বছরের আইপিএল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছে বিরাট কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। পরশু রাতে আহমেদাবাদের ফাইনালে পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে কাল ট্রফি নিয়ে বেঙ্গালুরুতে ফিরেছে চ্যাম্পিয়ন দল। বিধান সৌধ থেকে ‘ভিক্টরি প্যারেড’ করতে করতেই নিজেদের মাঠ এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পৌঁছান কোহলি-পতিদার-ক্রুনালরা।
শিরোপাজয়ী দলের আগমন ঘিরে বেঙ্গালুরুর সমর্থকদের মধ্যে বাড়তি উন্মাদনা কাজ করবে, তা জানাই ছিল। আট থেকে আশি—সব বয়সী মানুষ কাল রাস্তায় নেমে এসেছিলে। কিন্তু উন্মাদনা লাগাম ছাড়িয়ে যাওয়াতেই বেঁধেছে বিপত্তি।
পদদলিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন, আহত হয়েছেন ৩৩ জন। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া হতাহতের এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। যদিও ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আহতের সংখ্যা ৫০–এর বেশি।
মর্মান্তিক এই ঘটনায় ভারতের সর্বমহল থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হলেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব ও পরিস্থিতি সামাল দিতে গাফিলতির অভিযোগ এনে কর্ণাটক সরকারকেই দায়ী করা হচ্ছে। তবে ভারতের বিশ্বকাপজয়ী পেসার মদন লাল মনে করেন, শুধু রাজ্য সরকার নয়; দায় নিতে হবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মালিকপক্ষকেও।
ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মদন লালের অভিযোগ দুটি—কয়েক দিন অপেক্ষা না করে ট্রফি জয়ের পরদিনই এত বড় আয়োজন করা এবং পদদলিত হয়ে হতাহতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরও স্টেডিয়ামের ভেতর উদ্যাপন চালিয়ে যাওয়া।
বার্তা সংস্থা পিটিআইকে মদন লাল বলেছেন, ‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে ১১ জন প্রাণ হারিয়েছে। এই ট্র্যাজেডি কোনোভাবেই ঘটা উচিত ছিল না। এটি পুরোপুরি এড়ানো যেত। মঙ্গলবার রাতে আপনি আহমেদাবাদে উদ্যাপন করলেন। তাহলে বেঙ্গালুরুতে উদ্যাপন করার জন্য এত তাড়াহুড়ো কেন? উদ্যাপন দুই-তিন দিন পরেও হতে পারত। আরসিবি সমর্থকেরা তখনো পূর্ণ উদ্যমে উপস্থিত থাকতে পারত।’
ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এত জনসমাগম দেখে স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশ ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষকে ‘ভিক্টরি প্যারেডের’ অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মালিকপক্ষ নাকি আদেশ অমান্য করেই কর্ণাটকের আইনসভা বিধান সৌধ থেকে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম পর্যন্ত প্যারেড করে। পরে পুলিশ এতে বাধা দেয়নি। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ লাঠিপেটা করতে বাধ্য হয়। সেই হুড়োহুড়িতেই পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
মদন লাল তাই দায় দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সবাইকেই, ‘কে দায়ী—আরসিবি না রাজ্য সরকার? যদি রাজ্য সরকার বাধা দিত, তাহলে প্যারেড এগিয়ে যেত না। তাই সরকার অবশ্যই দায়ী। কিন্তু আরসিবিও দোষী। বেঙ্গালুরুতে পৌঁছানোর মাত্র চার ঘণ্টা পরেই দলকে জনসাধারণের সঙ্গে উদ্যাপনের জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাদের এত তাড়া কীসের? আইপিএল দলগুলোর বিশাল ভক্ত রয়েছে। এখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক বড় ভুল করেছেন।’
বেঙ্গালুরু ট্র্যাজেডি নিয়ে বার্তা সংস্থা আইএএনএসকেও নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মদন লাল। সেখানে কথা বলতে গিয়ে তিনি বেঙ্গালুরুর মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন, ‘যখন বাইরে মানুষ মারা যাচ্ছিল, তখন তারা ভেতরে উৎসব করছিল। এটা সত্যিই মর্মান্তিক এবং হতাশাজনক। মৃতদের পরিবারের উচিত এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য আরসিবি এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি রুপির মামলা করা।’
প্রথমবার আইপিএল শিরোপা জেতা কোহলিও হৃদয় বিদারক এই ঘটনায় হতবাক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। বলার মতো অবস্থা নেই। খুবই ভয় পেয়েছি।’
ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার লিখেছেন, ‘বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি আমার হৃদয় আজ বেদনার্ত। সবার শান্তি ও শক্তি কামনা করছি।’