ঈদের ছুটির রোদেলা দিনে রাজধানীর মিরপুর যেন রূপ নিয়েছে এক উৎসবে।
পবিত্র ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে রবিবার (৮ জুন) দুপুর হতেই মানুষের ঢল নামে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। শিশুদের হাত ধরে বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা মামা-মামিরা এসেছেন প্রিয়জনদের সঙ্গে।
গরমকে উপেক্ষা করে রাজধানী ও আশপাশের অঞ্চল থেকে নানা বয়সী মানুষ জড়ো হয়েছেন বন্যপ্রাণীর দেখা পেতে, প্রাণের ছোঁয়া খুঁজতে। দুপুর থেকেই চিড়িয়াখানার প্রবেশদ্বার হয়ে ওঠে সরগরম। দীর্ঘ লাইন, টিকিটের ধাক্কাধাক্কি, হকারদের হাঁকডাক, রঙিন খেলনার আকর্ষণ-সব মিলিয়ে এক নিখাদ উৎসবের আবহ।
সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বাস শিশুদের
চিড়িয়াখানায় পা রেখেই শিশুদের চোখ যেন ছুটে যায় বানরের খাঁচার দিকে। কারও হাতে কলা, কারও হাতে বাদাম। ছোট্ট আতিক আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, “আমি বানরকে খাবার দিছি। ও কাছে আসছিল, তখন অনেক মজা লাগছে।”
বাঘ, সিংহ, হরিণ আর রঙিন পাখিদের দেখে চঞ্চল হয়ে উঠছে কচিকাঁচারা। তাদের চোখে যেন এক রূপকথার জগৎ। বড়রাও যেন ফিরে গেছেন নিজেদের শৈশবের কোনো এক বিকেলে। কেউ ক্যামেরায় বন্দি করছেন প্রাণীর ছবি, কেউ ভিডিও করছেন সন্তানদের উচ্ছ্বসিত মুখ।
বিশ্রাম ও নিরাপত্তায় স্বস্তি
জাতীয় চিড়িয়াখানার বিস্তৃত সবুজ প্রান্তর, ছায়াঘেরা বিশ্রাম স্থান ও প্রশস্ত হাঁটার পথ দর্শনার্থীদের গরমের মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর ড.
বিরক্ত দর্শক
তবে উৎসবের এই আনন্দে কিছু অসন্তোষও মিশে রয়েছে। হকারদের ঘিরে তৈরি হওয়া ভিড় অনেক দর্শনার্থীকেই বিরক্ত করছে। সরকারি চাকরিজীবী করিম উদ্দিন বলেন, “বাচ্চাদের নিয়ে এক খাঁচা থেকে আরেক খাঁচায় যেতেই হকাররা বারবার কিছু কিনতে বলছে। এতে বিরক্ত হচ্ছি।”
বিকেলে ভিড় বাড়ে
চিড়িয়াখানর একজন কর্মচারী শাহ আলম বলেন, “শনিবারের তুলনায় আজ দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি।”
পান বিক্রেতা আলম বলেন, “রোদ একটু কম হলে ভেতরে থাকত আরো লোক। তবে যারা ঢুকছেন, তারা বেশি সময় থাকছেন না। বিক্রিও কম।”
বেসরকারি চাকরিজীবী আহমেদ বলেন, “গ্রাম থেকে মা ও বাবা এসেছেন। সবাইকে নিয়ে বের হলাম। শিশুরা খুব উপভোগ করছে।”
টিকিট লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বাছির জামান বললেন, “ছেলে-মেয়েসহ ১৬ জন এসেছি কেরাণীগঞ্জ থেকে। ভেবেছিলাম খুব ভিড় হবে। কিন্তু সহজেই টিকিট পেয়েছি, এটা ভালো লেগেছে।”
চিড়িয়াখানার ১০টি টিকিট কাউন্টারের মধ্যে চালু রয়েছে চারটি। ফলে কিছুটা অসুবিধা হলেও দর্শনার্থীরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন। বাঁশ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী গেট দিয়েও প্রবেশ করতে দেখা গেছে অনেককে।
দর্শনার্থী বশির হোসেন বললেন, “ছুটির দিনে নাগরিক জীবনের রুটিন ভেঙে পরিবার নিয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানায় সময় কাটানো এখন এক ধরনের শহুরে সংস্কৃতি। গরম, ভিড়, হকারদের হট্টগোল সব পেরিয়ে মানুষ খুঁজছে কিছু স্বস্তি, কিছু আনন্দ। আর সেই আনন্দেই প্রাণ জেগে ওঠে পশুপাখির ঘেরা এই ছোট্ট জগতে। মিরপুরের এই সবুজ পরিসরে ছুটির দিন যেন হয়ে ওঠে এক অন্যরকম ঈদ।”
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।