অভিবাসীবিরোধী অভিযানের জেরে বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে ৭০০ মেরিন সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে অন্যান্য বাহিনীকে সহায়তা করতে তাদের মোতায়েন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসের বিস্তৃত এলাকায় ফেডারেল কর্মী ও ফেডারেল সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ে যেসব বাহিনী কাজ করছে মেরিন সেনারা তাদের সঙ্গে কাজ করবে। ওই এলাকায় নজরদারি অব্যাহত রাখতে পর্যাপ্ত সংখ্যক বাহিনী সরবরাহের জন্য তাদের মোতায়েন করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঅভিবাসীদের আটকের প্রতিবাদে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেস, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন ট্রাম্পের০৮ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, টাস্ক ফোর্স ৫১–এর মধ্যে ২ হাজার ১০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য এবং ৭০০ মেরিন সেনা রয়েছেন। তারা উত্তেজনা প্রশমন, জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ এবং বলপ্রয়োগের নিয়ম সম্পর্কে প্রশিকক্ষণপ্রাপ্ত।

এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম। তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেরিন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছেন।

গ্যাভিন নিউসম আরও বলেন, ‘তারা (মেরিন সেনারা) আমাদের বীর। একজন একনায়কোচিত প্রেসিডেন্টের উন্মাদ বাস্তবতা বর্জিত ইচ্ছা পূরণের জন্য নিজের দেশের মাটিতে তাদের দেশবাসীর মুখোমুখি দাঁড় করানো উচিত নয়। এটা আমেরিকান আদর্শের পরিপন্থী।’

আরও পড়ুনন্যাশনাল গার্ড না দিলে লস অ্যাঞ্জেলেস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেত: ট্রাম্প৪ ঘণ্টা আগে

এদিকে সান ফ্রান্সিসকো পুলিশ রোববারের বিক্ষোভ কর্মসূচির সম্পর্কে একটি হালনাগাদ তথ্য দিয়েছে। পুলিশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পল ইয়েপ জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ শেষ পর্যন্ত সহিংসতা ও সম্পত্তি ধ্বংসে পরিণত হয়।

পল ইয়েপ আরও জানান বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি এখন সুস্থ হয়েছেন। বিক্ষোভ ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানানো ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রোববার রাতভর বিভিন্ন স্থান থেকে ১৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলো। ১৪৭ জনকে পরে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের অর্ধেক সান ফ্রান্সিসকোর বাসিন্দা, আর বাকি অর্ধেক শহরের বাইরের বাসিন্দা ছিলেন

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ ল স

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে