আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়ার মধ্যকার বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচের এক পর্যায়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের তারকা লিওনেল মেসি ও জেমস রদ্রিগেজ। মাঠের সেই মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা।
ঘটনাটি ঘটে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে, যখন আর্জেন্টিনার এনজো ফার্নান্দেজ কলম্বিয়ার কেভিন কাস্তানোকে ভয়ানক একটি ট্যাকল করে লাল কার্ড দেখেন। কাস্তানো তখন মাঠে পড়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এ সময়ই দেখা যায়, মেসি ও জেমস মুখে হাত চেপে কী যেন বলাবলি করছেন। মুখ চেপে কথা বললেও দক্ষিণ আমেরিকায় ম্যাচ সম্প্রচারকারী টিওয়াইসি স্পোর্টস দাবি করেছে, মেসি জেমসকে বলেছিলেন, ‘তোমরা বলেছিলে আমাদের ফাইনালে সাহায্য করা হয়েছিল। তুমি অনেক কথা বলো।’ জবাবে বিস্মিত জেমস বলেন, ‘কেন? আমি তো কিছু বলিনি।’
ঘটনার সূত্রপাত গত কোপা আমেরিকার ফাইনাল থেকে। যেখানে কলম্বিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। যে বিষয়টি এখনও মেনে নিতে পারেননি কলম্বিয়ান অধিনায়ক জেমস রদ্রিগেজ। সেই ম্যাচের পর বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন জেমস। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, আর্জেন্টিনাকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান রেফারি রাফায়েল ক্লাউস। স্থানীয় একটি টক শোতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ভালো খেলেছি, কিন্তু শিরোপা জিততে পারিনি কারণ কিছু বাইরের বিষয় আমাদের বিপক্ষে গেছে। রেফারি স্পষ্টভাবেই আর্জেন্টিনাকে পক্ষপাত দিয়েছে, আমাদের প্রাপ্য পেনাল্টি দেয়নি।’
সেই সূত্র ধরে এদিন বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে উতপ্ত বাক্য বিনিময় হয় আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও জেমসের মধ্যে। ম্যাচ শেষে সাংবাদিকেরা যখন জেমসের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান, তিনি আর বিতর্কে জড়াতে চাননি। শুধু বলেন, ‘যা মাঠে ঘটে, তা সেখানেই থেকে যায়।’
৩৭ বছর বয়সী এই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ম্যাচ শেষে রেফারি হুয়ান গ্যাব্রিয়েল বেনিতেজের দিকেও ক্ষোভ ঝাড়েন। ম্যাচ শেষে মাঠ ছাড়ার সময় মেসিকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি এটা ঘটিয়েছো! সবকিছুর শুরু তোমার সিদ্ধান্ত থেকেই! তুমি দায়ী!’
ম্যাচটিতে প্রথমার্ধে লুইস দিয়াজের অসাধারণ গোলে এগিয়ে যায় কলম্বিয়া। তবে ৮১ মিনিটে থিয়াগো আলমাদার গোলে সমতায় ফেরে আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলের ড্রয়ে শেষ হয় ম্যাচটি। এই ড্রয়ের ফলে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে এখনও দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শীর্ষে আছে আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইকুয়েডর ও ব্রাজিল, দুদলেরই পয়েন্ট ২৫।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন ব শ বক প কলম ব য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি-জামায়াতের নেতারা আগেভাগেই ভোটের মাঠে
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে খুলনায় আগেভাগেই মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। খুলনার ছয় আসনের দুটিতে বিএনপির একজন করে প্রার্থী সক্রিয় থাকলেও অন্য চারটিতে একাধিক নেতা তৎপরতা চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে চার মাস আগেই ছয় আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দলটির প্রার্থীরা নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডও চালাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান। আগামী নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন পেতে এলাকায় তৎপর তিনি। পাশাপাশি এ আসনে দলীয় ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা জিয়াউর রহমান পাপুল। এলাকার লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি তিনি দলীয় নেতাকর্মীকে পক্ষে রাখার চেষ্টা করছেন।
খুলনা-২ (খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা) আসনে এখন পর্যন্ত সক্রিয় রয়েছেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। এরই মধ্যে সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও নগর বিএনপির সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি। সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনায় রয়েছেন এই বিএনপি নেতা। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আসগার লবী অন্য আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। শফিকুল আলম তুহিন বলেন, দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করব।
খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী) আসনে দলীয় ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, মাঠ পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করার কাজ করছি। আমরা জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
খুলনা-৪ (রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তিনজন। তারা হলেন– কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুক্তরাজ্য বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ পারভেজ মল্লিক ও কেন্দ্রীয় সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজ। এর মধ্যে হেলাল ২০১৮ সালে ও তাজ ২০০৮ সালে এ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া, ফুলতলা) আসনে এতদিন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজ, জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক ইবাদুল হক রুবায়েদ, আমেরিকা প্রবাসী টিকু রহমান ও সাবেক ছাত্রদল নেতা শফি মোহাম্মদ খান। তবে গত ৩০ মে থেকে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বিসিবির সাবেক সভাপতি আলী আসগার লবী। তিনি দাবি করেন, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাতে বলেছে। সে অনুযায়ী কাজ করছি।
খুলনা-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান পাঁচজন। তারা হলেন– জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোমরেজুল ইসলাম, জিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক আমিরুল ইসলাম কাগজী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান ও দৈনিক ইত্তেফাকের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার আলদীন এবং পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. আব্দুল মজিদ।
জামায়াতে ইসলামী
জামায়াতে ইসলামী গত ৯ ফেব্রুয়ারি খুলনার তিনটি আসনের প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। এর কয়েকদিন আগে অন্য তিনটি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
তারা হলেন খুলনা-১ আসনে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির শেখ আবু ইউসুফ, খুলনা-২ আসনে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, খুলনা-৩ আসনে মহানগর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, খুলনা-৪ আসনে জেলা নায়েবে আমির মাওলানা কবিরুল ইসলাম, খুলনা-৫ আসনে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং খুলনা-৬ আসনে খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। এর মধ্যে খুলনা-১, ২, ৩ ও ৪ আসনের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নতুন মুখ। খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ২০০১ সালের নির্বাচনে জিতলেও ১৯৯১, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে হারেন। অন্যদিকে খুলনা-৬ আসনে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ হেরেছিলেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে।
খুলনা-৫ ও ৬ আসনে জামায়াতের তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় আমিরের উপস্থিতিতে এ দুটি নির্বাচনী এলাকায় বেশ কয়েকটি সভা-সমাবেশ করেছে দলটি। তবে অন্য চার আসনের প্রার্থীরাও বসে নেই। তারা নির্বাচনী এলাকায় দলকে আরও সংগঠিত ও বিস্তৃত করার পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কাজ করছেন।
এ ব্যাপারে জামায়াত নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, জামায়াত প্রার্থীরা গণসংযোগ, বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। আমরা জনগণের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।
অন্যান্য দল
জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাসদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এখনও নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা শুরু করেনি। নতুন দল এনসিপি একাধিক আসনে প্রার্থী দেবে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে এখনও তাদের নির্বাচনী প্রচারণা দৃশ্যমান হয়নি।