রাঙামাটিতে ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ
Published: 20th, June 2025 GMT
রাঙামাটিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতাকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরে শহরের বনরূপা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম আনোয়ার হোসেন কায়সার। তিনি রাঙামাটি জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর একটি প্রাইভেটকারে চট্টগ্রাম যাওয়ায় সময় কায়সারকে আটকে করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। এসময় তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে কায়সারকে তাদের হাতে সোপর্দ করা হয়।
এর আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় কায়সারকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিছুদিন কারাগারে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান তিনি।
কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) সাহেদ বলেছেন, ‘‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কায়সারকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/শংকর/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দারিদ্র্য থাকলে গণতন্ত্র আসবে না
গণতন্ত্র ও দারিদ্র্য যেমন একে অপর থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র স্বভাবের, তেমনি উভয়ের মধ্যে শত্রুতা একেবারেই স্বভাবগত। গণতন্ত্রের একটি মূল বিষয় হচ্ছে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া। কিন্তু দরিদ্র মানুষ কী ভাগ করবে, অভাব ছাড়া? অভাব তো অবিভাজ্য, যারটা তারই থাকে, ভাগ করতে গেলে নেওয়ার লোক পাওয়া যায় না খুঁজে। নাম শুনলেই দৌড়ে পালায়। গণতন্ত্র প্রকাশ্য, আবার গোপনীয়। গণতন্ত্র সবল, দারিদ্র্য দুর্বল। গণতন্ত্র মানুষকে মেলায়; দারিদ্র্য বিচ্ছিন্ন করে। গণতন্ত্র জগৎমুখী, দারিদ্র্য আত্মমুখী। গণতন্ত্র আলাপ করে; দারিদ্র্য করে কলহ। না; গণতন্ত্র ও দারিদ্র্য কিছুতেই একসঙ্গে থাকতে পারে না। তার চেয়েও বড় কথা, দারিদ্র্য থাকলে গণতন্ত্র থাকে না; থাকতে পারে না। কেবল যে ভোট কেনাবেচা কিংবা ছিনতাই হয়, তা-ই নয়। মানুষ মানুষে মিলনটাই গড়ে ওঠে না। গৃহহীনরাই সবচেয়ে বড় গৃহী, তারা কেবলই গৃহ খুঁজে বেড়ায়; উন্মুক্ত প্রান্তরে ছুটে আসে।
কিন্তু দারিদ্র্যের কারণ কী– সেটা এটা এনজিও কিংবা শাসক শ্রেণি বলেন না। বলেন যখন, তখন আসল কথা না বলে আজেবাজে কথা বলেন। মুখ্যকে গৌণ করে, গৌণকেই ধরে টানাটানি করেন। বলেন, দারিদ্র্যের কারণ আমাদের আলস্য। আমরা কাজ করি না। ফাঁকি দিই। বলেন, দারিদ্র্যের কারণ আমাদের জনসংখ্যা। এত মানুষ, এদের কে খাওয়াবে? যা আছে খাওয়াতেই শেষ; উন্নতি কী করে হবে? কী করে ঘুচবে দারিদ্র্য? কেউ বলেন, অন্য কিছু নয়, দায়ী আমাদের দুর্নীতি। চোর। চোরে ছেয়ে গেছে দেশ। চাটার দল। বেত চাই। বেতাতে হবে। এসব বলেন, কিন্তু দারিদ্র্যের আসল কারণটা দেখেন না বা দেখলেও মানতে চান না।
অন্য কারণ অবশ্যই রয়েছে, কিন্তু আসল কারণ হচ্ছে বৈষম্য। এই বৈষম্যই দারিদ্র্য সৃষ্টি করছে এবং করেছে। না; দারিদ্র্য বৈষম্য সৃষ্টি করেনি। উল্টোটাই সত্য। বলা হবে এবং হচ্ছে, প্রতিযোগিতা থাকা ভালো। হ্যাঁ, তা ভালো বৈকি। প্রতিযোগিতা ছাড়া উন্নতি নেই। কিন্তু কার সঙ্গে কার প্রতিযোগিতা, সেটা তো দেখতে হবে। হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে দিয়ে যদি বলি, তুমি আমার সঙ্গে সাঁতরাও দেখি, পাল্লা দাও। তাহলে লোকটি তো পারবে না, ডুবেই মরবে। সাঁতরাতে বলার আগে তার হাত-পায়ের বন্ধনগুলো কাটতে হবে; তাকে মুক্ত করতে হবে। তবেই সাঁতারের প্রশ্নটা উঠবে, নইলে তা নিষ্ঠুর বিদ্রুপ ছাড়া আর কী! দেশের অধিকাংশ মানুষ এই হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রয়েছে। তারা নিক্ষিপ্ত হয়েছে দারিদ্র্যের জলাশয়ে। তাদের অবস্থা সাঁতরে তীরে ওঠার নয়; ডুবে মরার।
দেশে যে বৈষম্য রয়েছে, তার দরুন অধিকাংশ মানুষ নিজেকে উৎপাদনশীল কাজে যুক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। জনসংখ্যা বোঝা হয়ে উঠছে; তাকে সম্পদে পরিণত করা যাচ্ছে না। শিক্ষা কর্মসূচি ভেঙে পড়ছে। কাজ নেই। অদক্ষ লোকে দেশ ছেয়ে যাচ্ছে।
পুঁজি যা রয়েছে তা অল্প কিছু লোকের হাতে। এই লোকেরা দেখছে, দেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাই পুঁজি বিনিয়োগ না করে তারা বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই ধনীরাই আবার আমদানি করছে বিদেশি জিনিসপত্র। ব্যবস্থা করছে চোরাচালানের। ফলে দেশীয় পণ্যের বাজার গড়ে উঠছে না। ধনীদের মধ্যে দেশপ্রেম ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। তারা আবার দ্রুতগতিতে ভোগবাদিতার পথে এগোচ্ছে। প্রতিযোগিতা উৎপাদনের নয়; ভোগের। পুঁজির সঞ্চয় বিঘ্নিত হচ্ছে এভাবে– পদে পদে।
বাংলাদেশের মূল সমস্যা হলো বৈষম্য। দারিদ্র্য এই বৈষম্য থেকেই সৃষ্টি। ধনী গরিবকে শোষণ করে; গরিবকে কর্মক্ষম হতে দেয় না এবং ধনী শোষণ করে, যা পায় তা ভোগ করে এবং যা বাঁচে তা বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। গরিব মানুষ অন্য কিছু উৎপাদন করতে পারে না, হতাশা ও সন্তান ভিন্ন। ফলে সে আরও গরিব হয়। অপরাধ বাড়ে। বাড়ছে, আরও বাড়বে। বিদেশনির্ভরতা বাড়ে। বাড়ছে, আরও বাড়বে। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের ছবি। অন্য সমস্যা রয়েছে হাজারে হাজার। কিন্তু সবই বৈষম্যের সঙ্গে বাঁধা। আসল গ্রন্থিটা ওখানেই।
আর গণতন্ত্রের কথা যে বলি, তার মূল কথাই হলো অধিকার ও সুযোগের সাম্য। এ না থাকলে গণতন্ত্র থাকার প্রশ্নই ওঠে না। ওই অধিকার ও সুযোগের সাম্য বাংলাদেশে কী পরিমাণে রয়েছে তার যদি হিসাব করি তাহলেই জানতে ও বুঝতে পারব, বাংলাদেশে গণতন্ত্র কতটা আছে বা তার ভবিষ্যৎ কী?
বৈষম্য ইংরেজ আমলে ছিল। ইংরেজ ও বাঙালি এক ছিল না। বৈষম্য পাকিস্তান আমলে ছিল। পাঞ্জাবি ও বাঙালি এক ছিল না। বৈষম্য বাংলাদেশ আমলেও রয়েছে। বাঙালি ও বাঙালি এক নয়। মূল তফাৎ অর্থনৈতিক। আমরা ইংরেজ হটিয়েছি, পাকিস্তানিদের তাড়িয়েছি। তবু বৈষম্য দূর করতে পারিনি। সে জন্যই দুর্দশা ঘুচছে না। স্বস্তি নেই, অগ্রগতিও নেই। এগোতে হলে দু’পায়ে হাঁটতে হয়। একটি পা যদি খোঁড়া থাকে, তাহলে যা করা যায় তাকে হাঁটা বলা চলে না। অথচ আমরা দৌড়াচ্ছি। আশঙ্কা রয়েছে, অচিরেই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ব।
দারিদ্র্য ঘোচানোর চেষ্টা যে নেই, তা নয়। আছে; সরকারি উদ্যম আছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। কারণ দারিদ্র্যের আসল কারণ যে বৈষম্য, তা কমিয়ে আনার চেষ্টা নেই। রোগের কারণ না জেনে লক্ষণ ধরে টানাটানি করলে রোগ সারবে কি? সারবে যে না– তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
আমরা গণতন্ত্র চাই। কিন্তু গণতন্ত্র আসবে না দারিদ্র্য থাকলে। আর দারিদ্র্য যাবে না বৈষম্য থাকলে। পরস্পরটি এই রকমেরই। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবার শোষণ করত; এখন করে ২২শর বেশি পরিবার এবং এরা পরিচয়ে বাঙালি। এই পরিচয়ের গৌরব নিয়ে গরিব বাঙালি যে আহ্লাদে আটখানা হবে, তার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। লক্ষণ বরঞ্চ উল্টো রকম। বিস্ফোরণোন্মুখ। যাত্রা বৈষম্য নিরসনের দিকে নয়। যাত্রা উল্টোদিকে, তাই বিস্ফোরণের আশঙ্কা বাড়ছেই; কমছে না– এটা যেন না ভুলি। অনেকেই ভাবেন, পালাবেন। কিন্তু পালাবেন কোন পথে; কোন সীমান্ত পার হয়ে; কোন সমুদ্র সাঁতরে?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়