করপোরেট করের বোঝা কতটা বইতে পারবে ছোট প্রতিষ্ঠান
Published: 20th, June 2025 GMT
ব্যবসা করলে কর দিতে হবে– এটা সবাই জানে। কিন্তু ব্যবসায় যদি লোকসান হয়? বাংলাদেশে ব্যবসা মানেই কর। লাভ হোক বা লোকসান, সরকার কর আদায় করবে– এই বাস্তবতা নিয়ে দেশে ব্যবসা করতে হয়। ছোট-বড়, নতুন-পুরোনো সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই এই নিয়ম কার্যকর। তবে সাম্প্রতিক বাজেটে প্রস্তাবিত কর কাঠামো বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন বাস্তবতা তৈরি করেছে। ব্যবসার আয় নেই, তবু কর দিতে হবে– এমন এক অযৌক্তিক কাঠামোর মুখোমুখি হচ্ছেন তারা।
অথচ সরকার যেমন বলছে, কর আদায় না হলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিপরীতে ব্যবসায়ীরাও বলছে, ব্যবসা টিকলেই কেবল কর দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ টিকে থাকার শর্তে কর আদায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে ব্যবসার শুরুতেই একটি কোম্পানিকে যে করের ফাঁদে পড়তে হয়, তা অনেক সময়েই তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
লোকসান হলেও কর
বাংলাদেশে যৌথ মূলধনি বা কোম্পানি কাঠামোয় ব্যবসা পরিচালনা করলে কর দিতে হবে– এটা প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, লাভ না হলেও ব্যবসায়িক লেনদেন বা ‘টার্নওভার’ এর ওপর একটি নির্ধারিত হারে কর দিতে হয়, যা ‘টার্নওভার ট্যাক্স’ বা লেনদেন কর নামে পরিচিত।
এটি আসলে কর নয়, একটি নির্দিষ্ট হারভিত্তিক বাধ্যতামূলক কর্তন। ১৯৮২ সালে তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদ অধ্যাদেশ জারি করে প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর ‘টার্নওভ্যার ট্যাক্স’ বা লেনদেন কর নামে ন্যূনতম করপোরেট ট্যাক্সের এই বোঝা চাপিয়েছিল। নব্বইয়ের অভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরার পরও কোনো সরকারই সহজ এই কর আদায়ের পথ থেকে সরে আসেনি। এমনকি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারে দায়িত্ব নেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের এই সংস্কারে কোনো আগ্রহ দেখাল না।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা ড.
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাথায় হাত
এই কর কাঠামোতে সবচেয়ে বিপাকে পড়ছেন নতুন ব্যবসা শুরু করা উদ্যোক্তারা এবং এসএমই খাতের কোম্পানিগুলো। একটি নতুন ব্যবসা সাধারণত প্রথম কয়েক বছর লোকসানে থাকে। তখন তার মূল লক্ষ্য থাকে বাজার ধরার চেষ্টা এবং ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা। কিন্তু শুরুতেই যদি লোকসানের ওপর কর দিতে হয়, তাহলে তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ধরুন, একটি ই-কমার্স কোম্পানি ‘ওয়াই লিমিটেড’-এর বার্ষিক বিক্রি ৩০ কোটি টাকা। প্রচার-প্রচারণা, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও কর্মী ব্যয় মেটাতে গিয়ে তারা বছরে ২ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এরপরও তাদের কর দিতে হবে ৩০ লাখ টাকা, কারণ ১ শতাংশ টার্নওভার কর বাধ্যতামূলক। এই কর দিতে গিয়ে তাদের নগদ প্রবাহে চাপ পড়বে এবং তা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও সম্প্রসারণে বাধা সৃষ্টি করবে।
আরেকটি বাস্তব উদাহরণ হলো, একটি টেক্সটাইল এসএমই ‘মুন টেক্স’ যার বার্ষিক টার্নওভার ১০ কোটি টাকা। তাদের প্রকৃত লাভ ১০ লাখ টাকা হলেও নতুন কর কাঠামোয় তাদের কর দিতে হবে ১০ লাখ টাকা– অর্থাৎ সম্পূর্ণ লাভটাই চলে যাচ্ছে কর বাবদ।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালা হলো, কর আরোপ হবে মুনাফার ওপর, লেনদেন মূল্যের ওপর নয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামসহ প্রায় সব দেশেই এই নীতিই মানা হয়। বাংলাদেশে সেই নীতি উপেক্ষিত হওয়ায় বিশ্লেষকরা একে ‘শাস্তিমূলক কর ব্যবস্থা’ বলছেন। কারণ কোম্পানি যখন ব্যবসার প্রতিটি ধাপে–কাঁচামাল আমদানি, পণ্য উৎপাদন, পরিবহন, বিক্রয়–সবক্ষেত্রে ভ্যাট, শুল্ক, উৎসে করের মাধ্যমে সরকারকে কর দিচ্ছে, তখন লোকসানে থাকার পরও অতিরিক্ত একটি কর আরোপ সংবেদনশীল নয়।
ব্যবসা কতটা টিকে থাকে
বাংলাদেশের যৌথ মূলধনি কোম্পানিগুলোর নিবন্ধক (আরজেএসসি) অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি। কিন্তু পেশাদার নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইসিএবি বলছে, গত বছর নিরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৫৮ হাজার কোম্পানির। এর মানে বাকিরা হয় ব্যবসা করছে না, অথবা কর নীতির চাপে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
ব্যবসার প্রাথমিক ধাপে টিকে থাকার লড়াইয়ে এই কর কাঠামো বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে যারা বড় কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে, তাদের সংখ্যাই বেশি। অথচ দেশের বড় শিল্পগোষ্ঠীর বেশির ভাগেরই যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে।
সরকার বলছে, রাজস্ব আদায়ের হার আশানুরূপ না হওয়ায় বাধ্য হয়েই কর হার বাড়াতে হচ্ছে। কর ফাঁকি রোধ ও বৈষম্য দূর করতে এ সম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানি যদি বছরে মোট ব্যয়ের ৫০ শতাংশ নগদে করে, তাহলে তার ২৫ শতাংশ করযোগ্য আয় ধরে নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখনও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত নয়। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের জন্য ব্যাংকিং লেনদেন বাধ্যতামূলক করেনি। ফলে বাস্তবতা উপেক্ষা করে কৃত্রিম করযোগ্য আয় নির্ধারণ করাটা যুক্তিসংগত নয়।
পুঞ্জীভূত মুনাফার ওপর কর: বিনিয়োগে বাধা
আগের বছর মুনাফার ৭০ শতাংশ পুঞ্জীভূত মুনাফা বা রিটেইন্ড আর্নিংসে যোগ করলে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত কর দিতে হতো। এবার বলা হয়েছে, চলতি বছরের আয়ের ৭০ শতাংশ রিটেইন করলেও অতিরিক্ত কর দিতে হবে। অথচ বাংলাদেশের অধিকাংশ কোম্পানি পারিবারিক মালিকানাধীন। তারা লভ্যাংশ না দিয়ে পুঁজি হিসেবে মুনাফা পুনঃবিনিয়োগ করে। এই কর বাধ্যবাধকতা তাদের বিস্তারে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
আজকে টিকলেই আগামীকাল রাজস্ব
বাংলাদেশে রাজস্ব বাড়ানো জরুরি, কিন্তু তা যেন টিকে থাকা ব্যবসাকে হত্যা করে না হয়। যে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান আজ একটি দোকান, সেটাই কাল হতে পারে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। কর কাঠামো হওয়া উচিত এমন– যা ব্যবসাকে টিকতে সাহায্য করে, ধ্বংস করে না। সময় এসেছে কর কাঠামোতে বড় ধরনের সংস্কার আনার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ট র নওভ র কর ক ঠ ম ব যবস র ব স তবত ব যবস য় ত ম লক কর দ ত ল নদ ন র ওপর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৫ হাজার রুপি দিয়ে শুরু, ৩৩ বছরে অক্ষয়ের পারিশ্রমিক কতটা বেড়েছে?
বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমার ভারতীয় প্রভাবশালী অভিনেতাদের অন্যতম। আসল নাম রাজীব হরি ওম ভাটিয়া। রুপালি জগতে তাকে সবাই ‘অক্ষয় কুমার’ নামেই চেনেন। তবে রাজীব হরি ওম ভাটিয়া থেকে অক্ষয় কুমার হয়ে ওঠার গল্প সিনেমাকেও হার মানায়।
কারণ অক্ষয় কুমার এক সময় ঢাকার পূর্বাণী হোটেলে বাবুর্চির কাজও করেছেন। পরবর্তীতে রুপালি জগতে পা রাখেন। আজ তিনি বলিউডের প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা! নাম-খ্যাতি যেমন কুড়িয়েছেন, তেমনি অঢেল অর্থের মালিকও হয়েছেন। কিন্তু অক্ষয়ের প্রথম পারিশ্রমিক কত ছিল? গত ৩৩ বছরে তার পারিশ্রমিক কত বেড়েছে, আর এখন কত টাকার মালিক অক্ষয়?
কয়েক দিন আগে পিঙ্কভিলাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অক্ষয় কুমার। এ আলাপচারিতায় অক্ষয় কুমারকে তার প্রথম পারিশ্রমিকের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। জবাবে এই অভিনেতা বলেন, “৫ হাজার ১ রুপি।”
১৯৯১ সালে মুক্তি পায় অক্ষয় অভিনীত ‘সুগন্ধা’ সিনেমা। এ সিনেমার জন্য কি এই পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন? জবাবে অক্ষয় বলেন, “না। আমার প্রথম পারিশ্রমিকের চেকটি পেয়েছিলাম ‘দীদার’ সিনেমার জন্য। প্রমোদ চক্রবর্তীজি আমাকে ৫ হাজার ১ রুপির চেক দিয়েছিলেন। আমি ৫০ হাজার রুপিতে সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম।”
দীর্ঘ ক্যারিয়ার যাত্রার কথাও স্মরণ করেছেন অক্ষয়। ‘হেরা ফেরি’ তারকা মনে করেন, কঠোর পরিশ্রমের চেয়ে তার প্রতি ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হয়েছেন। অক্ষয় কুমার বলেন, “এটি ৭০ শতাংশ ভাগ্য, ৩০ শতাংশ কঠোর পরিশ্রম।”
খানিকটা ব্যাখ্যা করে অক্ষয় কুমার বলেন, “আমি মনে করি, একজন মানুষ ক্যারিয়ারে যদি সফল হয় অথবা সে যাই করুক না কেন, তার ৭০ শতাংশ ভাগ্য এবং ৩০ শতাংশ কঠোর পরিশ্রম।” তবে তরুণদের চেষ্টা চালিয়ে যেতেও উৎসাহ দিয়েছেন এই অভিনেতা।
পিঙ্কভিলার তথ্য অনুসারে, অক্ষয় কুমারের প্রথম পারিশ্রমিক ছিল ৫ হাজার ১ রুপি। এখন প্রতি সিনেমার জন্য ৯০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন এই অভিনেতা।
লাইফস্টাইল এশিয়ার বরাত দিয়ে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ জানিয়েছে, অক্ষয় কুমারের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭৪২ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বেশি)। বলিউডের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম তিনি।
১৯৮৭ সালে ‘আজ’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক ঘটে অক্ষয় কুমারের। এতে ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৯১ সালে ‘সুগন্ধা’ সিনেমায় প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘খিলাড়ি’ সিনেমায় অভিনয় করে সাড়া ফেলেন অক্ষয়। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৯ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মাননায় ভূষিত করেছে।
অক্ষয় কুমার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘হাউজফুল ৫’। চলতি মাসে মুক্তি পেয়েছে এটি। তারকাবহুল সিনেমাটি মুক্তির পর বক্স অফিসে বেশ সাড়া ফেলেছে। ফলে আলোচনায় রয়েছেন এই অভিনেতা।
অক্ষয় কুমারের হাতে বর্তমানে চারটি সিনেমার কাজ রয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে— ‘ওয়েলকাম টু দ্য জঙ্গল’, ‘ভূত বাংলা’, ‘হেরা ফেরি থ্রি’ ও মহেশ মাঞ্জেরেকর পরিচালিত একটি বায়োপিক।
ঢাকা/শান্ত