বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আয়োজনে সম্প্রতি তিন সপ্তাহব্যাপী মর্যাদাপূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রামে (আইভিএলপি) অংশ নিয়েছেন তরুণ অধিকারকর্মী ও ইয়ুথনেট গ্লোবাল-এর নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান। এই সফরে তিনি কী শিখলেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব কাঠামো থেকে এবং কীভাবে বাংলাদেশে তরুণ নেতৃত্ব ও নাগরিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন তা নিয়ে লিখেছেন বিস্তারিত.
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর নানা ধরনের আন্তর্জাতিক বিনিময় কর্মসূচি পরিচালনা করলেও এর মধ্যে সবচেয়ে সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মসূচি হলো ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রাম (আইভিএলপি)। গত বছর এই কর্মসূচির জন্য প্রথমবার আমার নাম মনোনয়ন দেয় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস। তৃণমূল পর্যায়ে পরিবেশ, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারভিত্তিক কার্যক্রমে সক্রিয়তা এবং তরুণ নেতৃত্ব বিকাশে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এই মনোনয়ন আসে। এক বছরের দীর্ঘ যাচাই-বাছাইয়ের পর এ বছরের এপ্রিল মাসে দূতাবাস থেকে পাই চূড়ান্ত নির্বাচনের খবর। খবরটি পাওয়ার মুহূর্তটা আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতির। এটি আমার জন্য শুধু ব্যক্তিগত অর্জন ছিল না বরং দেশের তরুণ সমাজের প্রতি একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও বটে।
আইভিএলপি কী?
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ফ্ল্যাগশিপ পেশাগত বিনিময় কর্মসূচি, যা ১৯৪০ সাল থেকে কার্যকর। আইভিএলপি’র উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের উদীয়মান নেতা, নীতিনির্ধারক ও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও নেতৃত্ব দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া। এই কর্মসূচিতে কেউ সরাসরি আবেদন করতে পারে না; বরং মার্কিন দূতাবাস থেকে মনোনয়ন আসে অংশগ্রহণকারীর নেতৃত্ব, অবদান ও সম্ভাবনার ভিত্তিতে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক নেতা এই বিনিময় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, যাদের অনেকে পরবর্তীকালে হয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান, নোবেল বিজয়ী বা সমাজের পথপ্রদর্শক।
আমার অভিজ্ঞতা
গত ১৭ মে থেকে ৭ জুন ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুব ও কমিউনিটি সম্পৃক্ততা’ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি অঙ্গরাজ্যের পাঁচটি শহর সফর করি। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে শুরু করে উত্তর ক্যারোলাইনার শহর র্যালি ও শার্লট, নিউ মেক্সিকোর আলবুকার্কি এবং ওয়াশিংটনের সিয়াটলে ২২টি দ্বিপক্ষীয় সভা ও দুটি অংশগ্রহণমূলক কর্মশালায় অংশ নিই। আমাদের দলটি ছিল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার ১০ জন উদীয়মান তরুণ ও সামাজিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গঠিত; যারা প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশে তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের কাজে যুক্ত।
এই সফর আমার জন্য ছিল একদম চোখ খুলে দেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা। যখন ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভবনে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সংলাপে অংশ নিই তখন গভীর উপলব্ধি হয় যে, আমি শুধু একজন অংশগ্রহণকারী নই বরং বাংলাদেশের যুবাদের প্রতিনিধিত্ব করে তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরছি। এই সফরের সময় আমি মার্কিন ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা, তরুণ নেতৃত্ব, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, স্থানীয় সরকার এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে নতুন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করি। দুটি আমেরিকান পরিবার পরিদর্শন করা ছিল ভিন্ন ধরনের এক অভিজ্ঞতা। এ সময়ে বাংলাদেশে তরুণরা কীভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে সেটিও তুলে ধরার সুযোগ পাই। বিশেষ করে আলোচনা করি, কীভাবে বাংলাদেশের তরুণরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া ইয়ুথনেট গ্লোবালের মাধ্যমে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে পরিবেশ ও জলবায়ু সুবিচারের জন্য তরুণ নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ ও আন্দোলনের গল্পও তুলে ধরি বিভিন্ন সভায়।
আইভিএলপি অভিযাত্রা ছিল আমার জন্য এক অনন্য উপলব্ধি। নেতৃত্ব এখন মানুষে মানুষে সম্পর্ক গড়ে তোলা, বিশ্বাস ও সামাজিক পুঁজি তৈরি করার মধ্য দিয়ে টেকসই পরিবর্তন আনার নাম। এই অভিজ্ঞতা আমাকে আরও দৃঢ় আত্মবিশ্বাস দিয়েছে যে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ কেবল ভবিষ্যতের নেতৃত্ব নয়, বরং বর্তমানের পরিবর্তনের প্রেরণা ও চালিকাশক্তি। আমি সেই পরিবর্তনের অংশ হয়ে আরও তরুণদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের সমাজ ও বিশ্বকে বদলে দিতে চাই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র তর ণ ন ত ত ব র জন য আম র জ
এছাড়াও পড়ুন:
এমন তো হবার কথা ছিল না: তারেক রহমান
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শেষ পর্যন্ত কোনো অগণতান্ত্রিক কিংবা অপশক্তির কাছে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের পথে হাটতে হয় কি-না, এমন শঙ্কাও জানিয়েছেন তারেক রহমান। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন বিপদের কথাও স্মরণ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।’
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।’
দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তবে তাঁর বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তাঁর দল।
তারেক রহমান বলেন, ‘দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।’
প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে