মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের বৈঠক
Published: 23rd, June 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ। আজ সোমবার পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রায় ৫০ মিনিট ধরে তাঁরা বৈঠক করেন। এ সময় কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি হাইকমিশনার সিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমান ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের কোনো মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত হাইকমিশনারের প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ এটি। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি শুভেচ্ছা পৌঁছে দিতে হাইকমিশনারকে অনুরোধ করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে চিরায়ত ভাষাগত, সাংস্কৃতিক ও অভিন্ন মূল্যবোধকেন্দ্রিক আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে, তা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বে বলে উল্লেখ করেন। তিনি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় নিয়ে অবহিত এক কর্মকর্তাকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভাবতেই পারিনি এতটা আন্তরিক, এতটা আবেগপূর্ণ আলোচনা হবে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী বললেন,“দেখুন, আমরা দুই দিকের বাঙালি মিলে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ভাষাগোষ্ঠী। যেখানে যাই পরিবর্তন হোক, আমাদের সম্পর্কটা তো নাড়ির সম্পর্ক। ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ইত্যাদি নিয়ে আমরা সব সময়ই কাজ করতে পারি।”’
এ সময় হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ বাংলাদেশ থেকে আনা শাড়ি, মিষ্টি এবং চারটি বই তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। বইগুলো ছিল বাংলাদেশে মনসাপূজা, রাসমেলা, সোমপুরের বৌদ্ধবিহারের পোড়ামাটির শিল্পকলা এবং বাংলাদেশের লাঠিখেলা নিয়ে।
বৈঠক সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক উন্নত করতে গবেষণার স্তরে কীভাবে আদান-প্রদান বাড়ানো যায়, তা নিয়ে কিছু কথাবার্তা হয়েছে বৈঠকে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আদান-প্রদান বাড়ানোর প্রসঙ্গ নিয়েও কথা হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দেন, এসব বিষয় নিয়ে আগামী দিনে আলোচনা এগোবে। দুই দেশের যেহেতু ‘নাড়ির সম্পর্ক’, তাই আদান-প্রদান থেমে থাকবে না। কিছু সময়ের পরে আবার সম্পর্কের যে ইতিবাচক দিক, সেগুলো সামনে আসবে, নতুন জোয়ার সৃষ্টি হবে। ‘মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেখা যাক আগামী দিনে কী হয়। আশা রাখি, (বাংলাদেশে) যে নতুন সরকার আসবে, সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে।’
বাংলাদেশের অবৈধ নাগরিক অভিযোগ এনে ভারত থেকে ফেরত পাঠানোর যে প্রক্রিয়া চলছে, সে সম্পর্কেও দুই পক্ষের মধ্যে কিছু আলোচনা হয়েছে বলে সরকারি এক কর্মকর্তা জানান। তবে এ বিষয়ে তিনি নির্দিষ্টভাবে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, বৈঠক শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে গাড়িতে তুলে দেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশের মানুষ এবং অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার কথা জানান। হাইকমিশনার হামিদুল্লাহও মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন দ য প ধ য য ম খ যমন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি
পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।
মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।
মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।
ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।