বিবর্জিত মনুষ্যত্ব
তুহীন বিশ্বাস
আমি নর্দমার পাশ দিয়েই হেঁটে যাই
যেখানে সব পরিত্যক্ত, পচা দুর্গন্ধময়,
তবুও আড়চোখে তাকিয়ে দেখি কীট;
পরিবর্তিত পোশাকেও নষ্ট চারিত্রিক ছাপ।
সানগ্লাস রঙে রাঙানো অতীত বসন্ত;
অন্ধত্ব বরণকারী মনুষ্যত্ব বিবর্জিত সময়,
সম্মুখ উচ্ছ্বাসে বুঁদ হওয়া কলঙ্কিত অধ্যায়
ঘোর কাটে একাকীত্বের নিঃস্ব আমিতে।
বন্দি পাখি
আলমগীর কবির
ভাবনা তোমার মিছে
দূরে সরে গেলেই দূরে থাকা যায়!
দেখো না
রূপবতী চাঁদ কতদূরে থেকে কেমন করে
আলোর ফোয়ারায় সাজায় ঘরের কোণ।
চাইলেই কি জোসনা ফিরিয়ে দেওয়া যায়?
ভাবনা তোমার মিছে
একা ছুটে যাবে নদীর মতো।
দেখো না নদী চলতে চলতে
কত নতুন বাঁক পেরিয়ে
শেষে মিলে মোহনায়।
মাটি
রফিকুল নাজিম
আকাশের ওই গাঁয়ে মেঘেদের বাড়ি
মেঘে মেঘের নৃত্য বিজলির আড়ি।
আকাশটা রেগে গিয়ে মেঘকে বলে,
‘বিতাড়িত হ রে তুই- বৃষ্টির জলে।’
মাটি শুনে বলে, ‘ওহে মেঘের দল,
বুকেতে পুষি আমি ব্যথার অনল।
নেমে এসো তবে- ঢালো যত জল
আমার বুকে আছে সায়র অতল!’
বিতাড়িত বৃষ্টি ঝরে মাটির অই বুকে
জলে জলে থাকে জল জলজ সুখে।
পৃথিবীর তরুলতা পশুপাখি কু’জন
মাটিতে দাঁড়ায় সব– মাটিতেই গোপন!
নিঃশব্দে বিষণ্ণতা
শারমিন নাহার ঝর্ণা
কিছু কথা ছুটে যায় বাঁধভাঙ্গা
নদীর মতো সত্য ন্যায়ের পক্ষে,
বুকের ভেতর তুমুল ঝড় ওঠে
বলতে না পারার যন্ত্রণায় ক্ষত বিক্ষত
হৃদয়ে রক্তবন্যা বয়ে যায় অগোচরে।
কিছু কথা পাহাড়ের মতো হৃদয়ে গেঁড়ে বসে
চোখে লবণাক্ত ঝর্ণা হয়ে ঝরে অবিরত।
কিছু কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় মুখে না বলেও,
একটি বিশ্বাসী চোখ থাকা চাই।
ঐ চোখে চেয়ে নিঃশব্দে বিষণ্নতা ভরা রাত
জেগে জেগে কাটিয়ে দেয়া যায়।
শূন্যতার এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত
কথা না বলেও পরিপূর্ণ করা যায়।
সমুদ্র অথবা একাকিত্ব
নিজাম উদ্দিন আল সুমন
আমার একাকি রাতের একাকিত্ব সমুদ্র অথবা
একান্ত আশা-নিরাশার সাম্পান তরী,
হাজার ঢেউয়ের ফেনীল মুক্তোঝরানো সৈকতে
নিকট দূরের লক্ষ তারাদের আকাশে
সাদাকালো মেঘেদের লুকোচুরি!
ভালোলাগা কবিতার মতো তুমি কেন যেন
ফিরে আসো শিহরিত শেষ রাতে!
দেখো, এখানে কতশত রুপালি কাঁকড়ার
ঝলমলে ছুটে চলা,
দূরে তুমি ডাকছো যেন ভালোবাসার ইশারাতে!!
না। তীব্র গতির দক্ষিণি হাওয়ার ফিসফিসানি
আর রাতের প্রহরীদের হুইসেল–
তোমাকে নিয়ে আর ভাবতে দেয় না!
আমি ফিরে যাচ্ছি গতকালের হিসাবের খাতায়,
জমা-খরচের জটিল সমীকরণের পাতায়.
পুতুলবাজি
আসাদুজ্জামান খান মুকুল
রক্তিম রবি স্তিমিত যখন
আবিরের আভা মেখে,
দেখি ক্রমে ক্রমে আঁধার রজনি
ধরণী দিয়েছে ঢেকে।
প্রভাতের রবি দিয়েছিল উঁকি
যবে জীবনের পর,
কলরোল কল কোলাহলে মাতি
বাঁধতে সুখের ঘর।
শূন্যের ঘড়া পূর্ণের তরে
সর্বদা রত থাকি,
ভাবিনি তো কভু সোনালি আলোক
তমসায় দিবে ঢাকি।
জীবনযুদ্ধে করেছি লড়াই
উন্নত রেখে শির,
আজিকে আমার ত্রাসে কাঁপে বুক
ছাড়তে হবে যে নীড়!
আলোর ভুবনে বিমোহিত হয়ে
খেলেছি রঙের খেলা,
পুতুলবাজির খেলায় কেবল
ফুরায় দিবস বেলা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খরায় বাড়বে গাছের মৃত্যু, আরও উষ্ণ হবে পৃথিবী: গবেষণা
খরার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে গাছের মৃত্যু বাড়বে। এতে আরও উষ্ণ হয়ে উঠবে পৃথিবী। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও জনজীবনে। এ ছাড়া পৃথিবীর উষ্ণ হওয়া ঠেকাতে বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, খরায় গাছের মৃত্যু সেই সংকট মোকাবিলাকে আরও কঠিন করে তুলবে।
গাছের ওপর খরার প্রভাব নিয়ে করা বৈশ্বিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ৩১ জুলাই বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী সায়েন্স–এ ‘উষ্ণমণ্ডলীয় গাছের কাণ্ডের বৃদ্ধিতে খরার প্রভাব সামান্য’ শীর্ষক এই গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
বেশ কয়েকটি দেশের গবেষক মিলে গবেষণাটি করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার জুইডেমা, ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের অধ্যাপক পিটার গ্রোয়েনেন্ডি, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক ভেলেরি ট্রাউট ও অধ্যাপক ফ্লোরিন বাবস্ট।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো বাছাই করেছিলেন তাঁরা। খরার এসব বছরে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা দেখেছেন। এ ছাড়া খরার পরে দুই বছরে গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও দেখা হয়।গবেষকেরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১০০ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫০০টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তাঁরা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।
উল্লেখ্য, বয়স্ক গাছকে আড়াআড়িভাবে করাত দিয়ে কাটলে ভেতরে গাঢ় রঙের যে বৃত্তাকার বলয় দেখা যায়, তা গুনে গাছের বয়স সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সেই বৃত্তাকার বলয়কে বলা হয় গাছের বর্ষবলয় বা ট্রি রিংস।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো বাছাই করেছিলেন তাঁরা। খরার এসব বছরে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা দেখেছেন। এ ছাড়া খরার পরে দুই বছরে গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও দেখা হয়।
গবেষকেরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১০০ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫০০টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তাঁরা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে খরার বছরে গাছের বৃদ্ধি ছিল স্বাভাবিক বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কম।
গবেষক মিজানুর রহমান গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
তবে খরার পরও বেশির ভাগ স্থানে গাছের বৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়েছে সামান্য। কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলেছেন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন কার্বন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ জন্য খরার পরও প্রকৃতিতে তার প্রভাব পড়ে খুব কম। কিন্তু পরিস্থিতি আর তেমনটা থাকবে না। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে। পাশাপাশি খরাও বাড়ছে। এতে গাছের কার্বণ শোষণের স্বাভাবিক যে প্রক্রিয়া, তা ধীর ধীরে কমছে।
বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল।গবেষণায় দেখা গেছে, খরার প্রভাবে বছরে অতিরিক্ত প্রায় দশমিক ১ শতাংশ গাছ মারা যেতে পারে। এতে দুটি বিষয় হবে। প্রথমত; গাছ কমে যাওয়ায় সেসব গাছ যে পরিমাণ কার্বন শোষণ করত, সেই পরিমাণ কার্বন প্রকৃতিতেই থেকে যাবে। আবার গাছ মরার পর পচে যাওয়া এসব গাছ থেকে অতিরিক্ত কার্বন নির্গত হবে।
গবেষক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত গাছের কাণ্ড বৃদ্ধিতে ও একই সঙ্গে গাছের কার্বন শোষণে খরার প্রভাব সীমিত পর্যায়ে আছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান যে প্রবণতা, তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই স্থিতিশীলতা থাকবে না।