নতুন বাংলাদেশে নানা পরিবর্তনের অঙ্গীকার থাকলেও ৪৪তম বিসিএস প্রার্থীরা এখনো রয়ে গেছেন দীর্ঘ অপেক্ষা আর হতাশার বেড়াজালে। ৪৪তম বিসিএসের দীর্ঘতম প্রক্রিয়া প্রায় ৩ বছর সাত মাস পর শেষ হয়েছে।

তবে চূড়ান্ত ফলাফল এখনো না এলেও ফলপ্রত্যাশীদের মুখে নেই আশার আলো, বরং রয়েছে গভীর হতাশা আর আহাজারি।

সরকারি তথ্যমতে, ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত হয় ৪৪তম বিসিএস এর বিজ্ঞপ্তি। যেখানে প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৭১০টি ক্যাডার পদে নিয়োগের কথা বলা হয়। তবে প্রতি বিসিএসের সাধারণ রেওয়াজ অনুযায়ী, চূড়ান্ত ফলাফলের আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে পদ সংখ্যা বাড়ানো হয়ে থাকে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ, ৩৭তম বিসিএসে ১১২টি, ৩৮তম বিসিএসে ৪০০টি, ৪০তম বিসিএসে ৪৬৩টি, ৪১তম বিসিএসে ৫২০টি এবং ৪৩তম বিসিএসে ৪০৪টি ক্যাডার পদ চূড়ান্ত ফলাফলের আগে বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এরই প্রেক্ষাপটে নায্যতা নিশ্চিত করতে ও বৈষম্য নিরসনে ৪৪তম বিসিএসে সরকারের উচিত অতিরিক্ত ক্যাডার পদ দ্রত বৃদ্ধি করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকাল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) সাংবাদিক সমিতির কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাডার সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি তুলে ধরেন ৪৪তম বিসিএসের ফলপ্রত্যাশীরা।

৪৪তম বিসিএসের ফলপ্রত্যাশীরা অভিযোগ করে বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য মতে ৪৪তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে (যেমন- ট্যাক্স, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি, স্বাস্থ্য, প্রাণিসম্পদ) মোট ৩৮২টি অতিরিক্ত পদ বৃদ্ধির প্রস্তাবনা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত ৪৭তম বিসিএসে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছে ৪৪তম বিসিএস প্রার্থীরা। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও তাদের প্রতি সরকার বিমাতাসুলভ আচরণ করছে।

তারা আরো বলেন, ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষাও দুই দফায় সম্পন্ন হয়েছে। একটি আগের স্বৈরাচার সরকারের আমলে এবং আরেকটি নতুন সরকারের অধীনে। তখন অনেকেই আশ্বস্ত হয়েছিলেন যে, নতুন সরকার বৈষম্য দূর করে একটি ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়বে। কিন্তু বাস্তবে ৪৪তম বিসিএস ফলপ্রার্থীরা আগের থেকেও বেশি বঞ্ছিত হয়েছে।

ফলপ্রত্যাশী প্রার্থীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) বরাত দিয়ে বলেন, ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি ক্যাডারের জন্য ১১০টি শূন্য পদের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০টি পদ বৃদ্ধি করে ১৬০টি পদে নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিটি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে নতুন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে কোনো চিঠি না পাঠালে, কৃষি মন্ত্রণালয়ে জমে থাকা ১১৫টি ক্যাডার পদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াও আইনি জটিলতায় আটকে আছে। একই সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যান্য মন্ত্রণালয়েও।

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে দাবি তুলে ৪৪তম বিসিএসের ফলপ্রত্যাশীরা বলেন, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) প্রথমবারের মতো ২০২৫ সালে তিনটি মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে। এতে অংশগ্রহণকারী অনেক প্রার্থী নতুন বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পেয়ে আশাবাদী হয়েছিলেন যে, আর কোনো প্রার্থী বৈষম্যের শিকার হবেন না। কিন্তু ৪৪তম বিসিএস-এর প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের জোরালো দাবি, সরকারের উচিত ফল প্রকাশের আগে ৪৪তম বিসিএসে অতিরিক্ত ক্যাডার পদ দ্রুত বৃদ্ধি করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা। নইলে ‘নতুন বাংলাদেশ’ এর ধারণাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ড় ন ত ফল ফল ক য ড র পদ পদ ব দ ধ সরক র র প রক শ ফলপ র

এছাড়াও পড়ুন:

আগ্রহ বেশি শহরের কলেজে, মফস্‌সলে খালি থাকবে আসন

শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়া ও আসন ফাঁকা থাকার প্রবণতা অব্যাহত থাকায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এ বছর একাদশ শ্রেণির ১৭ হাজার ৮৭৫টি আসন কমানো হয়েছে। গত বছর বোর্ডের অধীন ২৯০ কলেজে আসন ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৪টি, এ বছর কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৬৪৯টিতে। আসন কমানো হলেও এবারও প্রায় ৩৩ শতাংশ আসন খালি থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। গত বছরও খালি ছিল ৩৫ শতাংশ আসন।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, পরিচিত ও ভালো কলেজগুলোয় ভর্তির চাপ বেশি থাকলেও মফস্‌সল এলাকার অনেক কলেজে আসন ফাঁকা থেকে যায়। এ বছর বোর্ডের অধীন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলা—রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির কলেজগুলোয় মোট পাস করেছে ১ লাখ ১ হাজার ১৮১ জন শিক্ষার্থী। পাস করা সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও অন্তত ৫০ হাজার আসন খালি থাকবে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে এই পাঁচ জেলায় ভর্তি হয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭৩১ শিক্ষার্থী, খালি ছিল ৫৮ হাজার ৭৯৩টি আসন।

চট্টগ্রাম বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক মোহাম্মদ ছরওয়ার আলম বলেন, অনেক কলেজ আসন বাড়ানোর আবেদন করেছিল। যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, কোথাও ভর্তি অর্ধেক বা তারও কম। তাই আসন কমানো হয়েছে।

পাস করা সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও অন্তত ৫০ হাজার আসন খালি থাকবে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে এই পাঁচ জেলায় ভর্তি হয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭৩১ শিক্ষার্থী, খালি ছিল ৫৮ হাজার ৭৯৩টি আসন।

চট্টগ্রামে আসন বেশি, চাপও বেশি

বোর্ডের হিসাবে, চট্টগ্রাম জেলা একাই ধারণ করছে ১ লাখ ৯ হাজার ১৯৪টি আসন। পাস করা সব শিক্ষার্থী এখানকার কলেজে ভর্তি হলেও আট হাজারের বেশি আসন খালি থাকবে। বাস্তবে অনেকে জেলার বাইরে বা অন্য বোর্ডের কলেজে চলে যান।

ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই চট্টগ্রাম নগরের সরকারি কলেজগুলোর দিকে ঝোঁকেন। সম্প্রতি চকবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী দোকানে বসে কলেজ ভর্তির আবেদন করছেন। তাঁদের পছন্দের তালিকায় চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, সিটি কলেজ ও সরকারি কমার্স কলেজ শীর্ষে।

নগরে সরকারি কলেজ ৮টি, আসন সাড়ে ৯ হাজারের বেশি। কলেজগুলোয় প্রতিবছর আসনের দ্বিগুণ আবেদন পড়ে। চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির আগ্রহ বেশি, ব্যবসায় শিক্ষায় সরকারি কমার্স কলেজ এগিয়ে। সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই আসনের দ্বিগুণ আবেদন আসে। জিপিএ এবং প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি চূড়ান্ত হয়।

ঢাকায় যান ৭-১০ শতাংশ শিক্ষার্থী

বোর্ডের হিসাবে প্রতিবছর ৭ থেকে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্য বোর্ডের কলেজে ভর্তি হন, বিশেষ করে ঢাকায়। ২০২৪ সালে পাস করেছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭ জন, ভর্তি হননি প্রায় ৮ শতাংশ। এ বছর পাসের হার কমায় এই হার আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষকেরা।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষকসংকট ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে মফস্‌সলে ভর্তি আগ্রহ কম। তাই সেখানে আসন বেশি ফাঁকা থাকে। নিয়ম মেনে এবার স্বল্পসংখ্যক আসন কমানো হয়েছে।

ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষক-সংকট ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে মফস্‌সলে ভর্তি আগ্রহ কম। তাই সেখানে আসন বেশি ফাঁকা থাকে। নিয়ম মেনে এবার স্বল্পসংখ্যক আসন কমানো হয়েছেইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ, চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড

আসন তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম ছাড়া বাকি চার জেলায় মোট আসন ৪২ হাজার ৪৭৫টি—এর মধ্যে কক্সবাজারে ১৮ হাজার ৬৮৫, খাগড়াছড়িতে ৯ হাজার ৫২০, রাঙামাটিতে ৮ হাজার ৭৯৫ ও বান্দরবানে ৫ হাজার ৪৭৫টি।

চট্টগ্রাম বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে আসন ৩২ হাজার ৪৮৯, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫২ হাজার ২৭৫ ও মানবিক বিভাগে ৬৬ হাজার ৮৩৫টি। গার্হস্থ্যবিজ্ঞানে আছে মাত্র ৫০টি আসন, যা নগরের হালিশহরের গার্হস্থ্য অর্থনীতি সিটি করপোরেশন কলেজে। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রথম ধাপের আবেদন চলবে ১১ আগস্ট পর্যন্ত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ