লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাবা-ছেলেকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ, ওসির বক্তব্য ঘিরে সমালোচনা
Published: 24th, June 2025 GMT
লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ‘মব’ তৈরি করে নরসুন্দর বাবা ও ছেলেকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে উত্তেজিত জনতা। ঘটনার পর জনতার সামনে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরনবীর দেওয়া একটি বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
গত রোববার দুপুরে শহরের হানিফ পাগলার মোড়ে অবস্থিত নরসুন্দর পরেশ চন্দ্র শীল (৬৯) ও তাঁর ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের (৩৫) দোকানে গিয়ে হট্টগোল করেন একদল লোক। তাঁরা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তাঁদের মারধর করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একদল লোক বাবা-ছেলেকে মারধর করছেন। এরপর সদর থানার একদল পুলিশ তাঁদের জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
ভিডিওটি ছড়ানোর পর ঘটনা জানাজানি হলে কয়েক শ মুসল্লি থানা চত্বরে এসে স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থানায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এ সময় উত্তেজিত জনতার সামনে বক্তব্য দেন সদর থানার ওসি নুরনবী। আজ মঙ্গলবার সেই বক্তব্যের একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘ওসি হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আমার। কিন্তু যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা আমারও কলিজায় আগুন লেগেছে। আপনাদের মতো চোখে পানি আমারও এসেছে। কীভাবে এত বড় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এ দেশে করে। আমি আপনাদের ওয়াদা দিলাম। আমি তাদের যখন অ্যারেস্ট করেছি। বাংলাদেশে এমন মামলা তাদের দেব, নিশ্চিত তাদের যেন যাবজ্জীবন বা ফাঁসি হয়.
জানতে চাইলে ওসি মোহাম্মদ নুরনবী প্রথম আলোকে বলেন, ভাইরাল হওয়া বক্তব্যটি তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও উপস্থিত লোকজনকে শান্ত করতে বলেছেন। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সদর থানার ওসির বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ ও সেনাসদস্যরা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কাউকে ‘মব জাস্টিসের’ সুযোগ দেওয়া হবে না।
এ ঘটনায় শহরের নামাটারী আল হেরা জামে মসজিদের ইমাম মো. আবদুল আজিজ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় পরেশ চন্দ্র শীল ও বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে আসামি করে তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক কার্যক্রম ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ করা হয়। পরে সন্ধ্যায় ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার বিষ্ণু চন্দ্রের স্ত্রী দিপ্তী রানী শীল বলেন, তিনি কারাগারে বন্দী তাঁর স্বামী ও শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার চুল কাটাতে আসা এক গ্রাহকের সঙ্গে টাকা বেশি নেওয়া নিয়ে সামান্য তর্কবিতর্ক হয়। পরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ তুলে ঘটনার দুই দিন পরে মুসল্লিদের ভুল বুঝিয়ে শত শত লোক এনে সেলুনে গিয়ে তাঁর স্বামী-শ্বশুরকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তিনি বলেন, ‘সংসারে আর কেউ উপার্জন করার নেই। আমরা নিরাপত্তাহীন অবস্থায় আছি। শ্বশুর ও স্বামীর মুক্তি চাই।’
মামলার বাদী মো. আবদুল আজিজ (২৯) প্রথম আলোকে বলেন, নবী করিম (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের নিয়ে ওই নরসুন্দররা অনেকের সামনে কটূক্তি করেছেন। রোববার দুপুরে উপস্থিত জনতা ও মুসল্লিদের সামনে এ জন্য তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করে তাঁদের ভুল হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এখন ঘটনা ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে পরিবারের সদস্যরা চুল কাটানোর টাকা নিয়ে তর্কবিতর্কের কথা বলছেন, যা সত্য নয়।
এদিকে আজ দুপুরে শহরের জেলা কালেক্টরেট মাঠ থেকে ‘সম্মিলিত মুসল্লিবৃন্দ, গোশালা বাজার জামে মসজিদ’ ব্যানারে মহানবী (সা.) ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনলালমনিরহাটে ‘মব সন্ত্রাস’ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাবা-ছেলেকে হেনস্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ১ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রায়কে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বললেন শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায়ের পর প্রকাশিত পাঁচ পৃষ্ঠার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিস্ক্রিয় করে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি পন্থা হচ্ছে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া।”
আরো পড়ুন:
হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ‘অতীতের প্রতিশোধ নয়’: প্রধান কৌঁসুলি
এই রায়ে কষ্ট পেয়েছি: শেখ হাসিনার আইনজীবী
ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা এর আগে এ বিচার প্রক্রিয়াকে ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
তিনি বলেন, “এমন একটি ট্রাইব্যুনাল যেখানে ন্যায্যভাবে অভিযোগ যাচাই ও পরীক্ষা করা হয়, সেখানে অভিযোগকারীদের মুখোমুখি হতে আমি ভয় পাই না।”
তিনি আরো যোগ করেন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, এই অভিযোগগুলো হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিয়ে যেতে।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, তিনি তার মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত রেকর্ড নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়ে ছয়টি অংশ রয়েছে।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত। দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
একটি অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি অনলাইন
ঢাকা/রফিক