মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ইতিহাসে ইরান একটি অনন্য স্থান দখল করে রেখেছে। প্রাচীন সভ্যতা, ঐতিহ্য, এবং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে ইরান যুগে যুগে শত্রু-মিত্রের আক্রমণ সহ্য করেছে এবং প্রতিকূলতাকে জয় করে টিকে থাকার এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে। আধুনিক যুগে ইরানের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে গেলে, এটি স্পষ্ট যে দেশটি কেবল রাষ্ট্র নয়, বরং একটি আদর্শ—পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক। ইরানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থান, বিশেষ করে ফিলিস্তিন, সিরিয়া, এবং লেবাননের মতো মুসলিম দেশগুলোর প্রতি তাদের অবিচল সমর্থন, ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম বিশ্বের এক অপরিহার্য অংশে পরিণত করেছে।

ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের নির্মম আচরণ নতুন কিছু নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনিদের অধিকার এবং মুসলিম বিশ্বে শান্তির জন্য এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েল বারবার আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে দখলদারিত্ব, আক্রমণ, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে। সম্প্রতি, ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের ওপর ইসরায়েলের চালানো হত্যাযজ্ঞ বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখে পড়েছে। মসজিদ, হাসপাতাল, এবং সাধারণ বসতিতে বোমা বর্ষণ ফিলিস্তিনিদের জীবনে এক ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজার উপর ইসরায়েলের হামলা এই নৃশংসতার একটি সর্বশেষ উদাহরণ। ফিলিস্তিনিদের ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, ইসরায়েল তাদের আক্রমণাত্মক নীতিতে ইরানকে একটি কৌশলগত লক্ষ্য হিসেবে স্থাপন করেছে।

ইরানের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্পষ্টভাবে দুটি মেরু সৃষ্টি করেছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট এবং অন্যদিকে ইরান ও তার মিত্ররা। পশ্চিমা বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরে ইরানের প্রভাব সীমিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অবরোধ, রাজনৈতিক চাপ এবং সামরিক হুমকি তাদের প্রধান অস্ত্র। কিন্তু এর মধ্যেও ইরান তার নিজস্ব প্রযুক্তিগত এবং সামরিক অগ্রগতি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

ইরানের সামরিক সক্ষমতার অন্যতম উদাহরণ হল তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি এবং আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই অগ্রগতি ইসরায়েল ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের উদ্বেগের প্রধান কারণ। ইরানের সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নের ফলে তারা এমন এক শক্তিতে পরিণত হয়েছে যা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। ইসরায়েলের আক্রমণাত্মক মনোভাবের বিপরীতে ইরানের এই প্রতিরোধমূলক সামরিক নীতি কেবল তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
২০২৫ সালের ১৩ জুন ইরানের অভ্যন্তরে ইসরায়েলের আকস্মিক আক্রমণ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই আক্রমণে ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু হলেও, ইরান তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইরান পাল্টা হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। পাল্টা আক্রমণের ফলে ইসরায়েলে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়।

যুক্তরাষ্ট্রের এই আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইরান মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরানের এই পদক্ষেপ শুধু তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতার পরিচায়ক নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থানকেও চ্যালেঞ্জ করেছে। ইরানের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কার্যক্রম সীমিত করে তুলেছে।

পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ২৩ জুন, যখন ইরানের মিত্র কাতার থেকে ইরান পরিচালিত হামলায় ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এই আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধিত হয়, যা তাদের আঞ্চলিক প্রভাবকে আরও দুর্বল করে। ইরানের এই সাহসী পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, তারা তাদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস করবে না।

এই ঘটনার পর, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় যা কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতির এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে সাময়িক স্থিতিশীলতা আনলেও এটি ইরান এবং তাদের মিত্রদের প্রতিরোধের কাছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের এক প্রকার পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। ইরানের দৃঢ় প্রতিরোধ এবং পাল্টা আক্রমণ স্পষ্ট করেছে যে, তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসন কেবল ব্যর্থই হবে না বরং আক্রমণকারী পক্ষের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।

এই সংঘাতের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে এই উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। যদিও এই যুদ্ধবিরতি মধ্যপ্রাচ্যে অস্থায়ী শান্তি নিয়ে এসেছে, তবে এটি কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে।

এই হামলা কোনো উস্কানি ছাড়াই সংঘটিত হয়েছে, যা ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ইসরায়েলের এই আচরণ শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি গুরুতর সংকেত। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সৌদি আরব, কাতার, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশের কৌশলগত সম্পর্ক তাদের নিরপেক্ষতা এবং অসহায়ত্বকে স্পষ্ট করেছে।

এই ঘটনার পটভূমিতে ইরানের প্রতিক্রিয়া ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ইরান তাদের সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, তারা শুধু প্রতিরোধেই সক্ষম নয়, বরং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার সামর্থ্য রাখে। ইরানের এই দৃঢ় অবস্থান আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের অবস্থানকে আরও মজবুত করেছে। তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়িয়েছে এবং আঞ্চলিক শান্তি প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এই হামলার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইসরায়েলের জন্য একটি প্রধান হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। পশ্চিমা বিশ্বও ইরানের এই পরমাণু উন্নয়নকে তাদের আধিপত্যের জন্য হুমকি মনে করে। দ্বিতীয়ত, ইরানের আঞ্চলিক মিত্রতা—বিশেষত হিজবুল্লাহ এবং সিরিয়ার সরকার–ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তৃতীয়ত, ইরানের অর্থনৈতিক ও সামরিক অগ্রগতি তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা প্রভাব প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে ইরানের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এই হামলার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শুধুমাত্র ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা এবং তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকেও চ্যালেঞ্জ করবে। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোর নিরবতা তাদের পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি তাদের আনুগত্যকে স্পষ্ট করে তুলেছে। তবে এই নিরবতা দীর্ঘমেয়াদে তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এটি তাদের আঞ্চলিক প্রভাব এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতি তাদের দায়িত্বশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডও এই প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে তুলেছে। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলা তাদের জন্য একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। প্রথমত, ইরান একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করেছে যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয়ত, ইরান আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত হানতে পারে। হরমুজ প্রণালীর মতো কৌশলগত স্থানে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে। তৃতীয়ত, ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো হামলা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোকে বিপদে ফেলবে।

ইরান দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা অর্থনৈতিক অবরোধ এবং সামরিক হুমকির মুখে রয়েছে। কিন্তু দেশটি এই প্রতিকূলতাকে তাদের উন্নয়নের পথে বাধা হতে দেয়নি। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, এবং সামরিক ক্ষেত্রে ইরানের অগ্রগতি একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের এই অগ্রগতি শুধু দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সহায়তা করেনি, বরং এটি তাদের জনগণের জন্য একটি নতুন আশা এবং অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

ইরানের এই দৃঢ় অবস্থান কেবল তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর প্রেক্ষাপটেও তাৎপর্যপূর্ণ। ফিলিস্তিন, লেবানন, এবং সিরিয়ার মতো দেশের প্রতি ইরানের সমর্থন তাদের মুসলিম বিশ্বের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রতীক। ইরানের এই ভূমিকা মুসলিম বিশ্বের ঐক্য এবং স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।

তবে, ইরানকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের পরিকল্পনা শুধু সামরিক বা কৌশলগত নয়। তারা ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করে, যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক চাপ এবং সামাজিক বিভাজন সৃষ্টি করা। কিন্তু ইরানের জনগণ এবং নেতৃত্ব এই সমস্ত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রমাণ করেছে যে, তাদের দৃঢ়তা এবং প্রতিরোধের মন্ত্রে কোনো ফাটল ধরানো সম্ভব নয়।

মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই ক্রান্তিকালে ইরানের মতো একটি দেশের ভূমিকা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম বিশ্বকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের পক্ষে তাদের অবস্থান, ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিক্রিয়া এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্য রক্ষায় তাদের প্রচেষ্টা ইরানকে শুধু একটি দেশ নয়, বরং একটি প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ইরান ও ইসরায়েলের এই সংঘাত শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। পশ্চিমা বিশ্বের পরিকল্পনা এবং ইরানের প্রতিরোধের মধ্যে এই সংঘাতের ফলাফল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য নির্ধারণ করবে। ইরানের এই প্রতিরোধের গল্প কেবল তাদের জাতির জন্য নয়, বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। ইরানের এই প্রতিরোধ এবং অগ্রগতির মন্ত্র বিশ্ব রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

রাজু আলীম: কবি ও লেখক 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র স ম র জন য একট ত ক র জন ত ক র জন ত ত ব শ ব র জন ইসর য় ল র পর স থ ত র জন ত ক ত র জন য ব যবস থ অবস থ ন ক শলগত আগ র স এই প র

এছাড়াও পড়ুন:

সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা

দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও আস্থাহীনতার এক চক্রে বন্দী হয়ে আছে। স্বাধীনতা লাভের শুরু থেকে যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে, তারা পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি, প্রতিশোধমূলক মামলা, এমনকি নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার মতো অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ফলে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ক্রমে ক্ষয়ে গেছে।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে রাজনীতিক, পুলিশ কর্মকর্তা, বিচারক ও শিক্ষাবিদেরা অকপটে এ অস্বস্তিকর বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। আলোচনা থেকে যে মূল দাবি উঠে এসেছে তা থেকে স্পষ্ট, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি। এই সংস্থা হতে হবে ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছা, আমলাতান্ত্রিক স্বার্থ ও পুলিশের নিজস্ব প্রভাব থেকে মুক্ত। কাঠামোগত এ পরিবর্তন ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে করা সংস্কার ব্যর্থ হয়ে পড়বে পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির চাপের মুখে।

পুলিশের পদোন্নতি নির্ধারিত হয় রাজনৈতিক আনুগত্য দিয়ে, যোগ্যতা দিয়ে নয়—এ রকম অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। এটা পুলিশ সদস্যদের মনোবল ও পেশাদারত্ব ধ্বংস করে। এ ব্যাপারে সাবেক বিচারপতি ফরিদ আহমেদ বলেছেন, নিয়োগ হতে হবে দ্রুত, স্বচ্ছ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত। 

আলোচনায় উঠে এসেছে, অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিশন ও স্বাধীন তদন্ত সেবা গঠন—এগুলো যথেষ্ট নয়। কারণ, এগুলো এখনো রয়ে গেছে মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। যেসব কমিশনে আমলা আর কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারা প্রকৃত অপব্যবহার রোধ করতে পারবে না; বরং সেগুলো হয়ে উঠবে নিয়ন্ত্রণের আরেকটি হাতিয়ার।

গোলটেবিলে উপস্থিত কারও কারও মতে, পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে অনেক সময় লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার নারীরা ন্যায়বিচার পান না। কারণ, অনেক পুলিশ সদস্য এসব বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। পুলিশ সদস্যদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

পুলিশ বা এ রকম কোনো বাহিনীর সংস্কারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হলো দায়মুক্তির সংস্কৃতি। গত আমলে হেফাজতে মৃত্যু ও নির্বিচার গ্রেপ্তার নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ উঠেছিল। সরকার পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। শুধু রাজনৈতিক চাপের কারণেই যদি ওই ঘটনাগুলো ঘটে থাকে, তাহলে এখন কেন তা বন্ধ হচ্ছে না—এমন প্রশ্ন তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। এ থেকে বোঝা যায়, প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশে এখনো জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু হয়নি।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় দেখা গেছে, রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত পুলিশ কতটা ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে। একই ধারা অব্যাহত থাকলে বৈধতার সংকট আরও গভীর হবে। প্রকৃত সংস্কার মানে হবে ঔপনিবেশিক যুগের আইনের বদল, পুলিশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং এমন একটি নজরদারি সংস্থা গঠন করা, যা সত্যিকার অর্থে বিশ্বাসযোগ্য।

পুরোনো বন্দোবস্তের যারা বড় সুবিধাভোগী, তারাই সংস্কারের সবচেয়ে বড় বিরোধী। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, আমলাতন্ত্র ও পুলিশ মিলে কীভাবে স্বৈরাচারী শাসনের শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলে হাসিনা সরকার, তার কাছের দৃষ্টান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্যি, স্বাধীন পুলিশ কমিশনের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিরোধিতা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, সবার আগে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হতে হবে।

নাগরিকের প্রত্যাশা হলো, পুলিশ হবে গণতান্ত্রিক, সৎ, নীতিনিষ্ঠ ও নিয়মভিত্তিক। এ রকম আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও পুলিশ—সবারই মানসিকতা পাল্টাতে হবে। পুলিশ কোনো সরকার বা দলের নয়, জনগণের সেবক হবে—এই নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশ সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংস্কারের জন্য সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছয় বিভাগে এগিয়ে বিএনপি, একটিতে জামায়াত
  • জনগণের নির্বাচন–ভাবনা জরিপ: কোন দলের প্রতি কত সমর্থন
  • পিআর পদ্ধতি নিয়ে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব জাকসু ভিপি জিতুর
  • জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহারের নির্দেশ দেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর
  • গালির জবাবে দোয়া হবে আমাদের কর্মসূচি: জামায়াত আমির
  • বিএনপির উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্থনৈতিক পরিবেশ অর্জনে সহায়ক
  • ‘আরব’ বা ‘মুসলিম ন্যাটো’ এবার কি আলোর মুখ দেখবে
  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগে ডিন নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি
  • সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা
  • ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোথায় বাধা