চলমান আন্দোলনে রাজস্ব আদায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে: এনবিআর চেয়ারম্যান
Published: 26th, June 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনে রাজস্ব আদায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আপনারা আমরা সবাই দেশের জন্য কাজ করব। আমাদের সবার আগে দেশের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করা উচিত। যেকোনো ধরনের সংস্কার করি, আইন করি বা আন্দোলন ও সংগ্রাম করি, সবই যেন আমাদের নিজেদের জন্য না হয়ে দেশের জন্য হয়।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা ও ভ্যাট’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো.
সেমিনারে ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। এ সময় ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্কের গবেষণাপ্রধান ইমরুল হাসান তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, ‘আমরা ঢাকার ১৫টি স্থানে ১ হাজার ২২ জন নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেছি। গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি, তাঁদের মধ্য ৮৮ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ এক বেলা বিস্কুট ও পাউরুটি খান। তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশেরই প্রত্যাশ্য ছিল, এই বাজেটে এসব পণ্যর ওপর ট্যাক্স নিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ আসবে। তবে এ নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।’
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআরের চেয়ারম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম বাজেটের আকার কমেছে। লক্ষ্য ছিল, মানুষের ওপর যেন চাপ না পড়ে। বাজেটের আকার যতটা ছোট হয়েছে—ধরে নিতে হবে, রাষ্ট্র ততটা সঞ্চয় করেছে, ততটা ঋণের চাপ কমেছে।
চেয়ারম্যান আরও জানান, চলতি অর্থবছরে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার সংখ্যা ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে। যেখানে গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫ লাখ। গতবার অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বরে শুরু হলেও এবার জুলাই থেকেই অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সসহ অন্যান্য সুবিধার জন্য চালু হচ্ছে ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’। এর ফলে ১৯টি সংস্থার ১১০ ধরনের লাইসেন্স, অনুমোদন ও সনদ অনলাইনে জমা ও গ্রহণ করা যাবে।
করনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে বিবেচনা করতে হয়। একদিকে যেমন রাজস্ব আয়ের নির্ধারিত লক্ষ্যে থাকে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার শর্ত পূরণের চাহিদাও মাথায় রাখতে হয়। আগামী বছর উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে দেশের বেশ কিছু কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। এর মধ্যে শুল্ক হার কমিয়ে আনা অন্যতম। বর্তমানে দেশের কিছু পণ্যে সর্বোচ্চ ৮০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। এই শুল্ক কমাতে হবে ধাপে ধাপে। তা না হলে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের ধাক্কা সামলানো কঠিন হবে।
আবদুর রহমান খান আরও বলেন, পাউরুটি ও বিস্কুটে ভ্যাট বাড়ানো হলেও এই বাড়তি ভ্যাট ব্যবসায়ীরা নিজেরা বহন না করে পুরো বোঝা ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন কি না, সে বিষয়েও আমাদেরে খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের কর যেখান থেকে নেওয়ার কথা, সেখান থেকে নিতে পারলে সহজেই করছাড় দেওয়া যেত। অনেক সময় আবার কর বাড়ানোর যে সুবিধার কথা বলা হয়, তা ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছায় না। এর ফলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সরকারের ঋণ নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লজিস্টিকস ব্যয় কমাতে পারলে রপ্তানি বাড়বে
যেসব দেশে লজিস্টিক অর্থাৎ পণ্য সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থার ব্যয় অনেক বেশি, তার অন্যতম বাংলাদেশ। এই ব্যয় বাংলাদেশে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি। অতিরিক্ত এই ব্যয় কমাতে পারলে যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা তৈরি হবে, তাতেই রপ্তানি ২০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।
গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) আয়োজিত ‘কনডাক্টিভ অটোমাবাইল পলিসি ফর গ্রিন গ্রোথ অ্যান্ড কম্পিটিটিভ ইকোনমি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় একথা বলা হয়। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যাল ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি মো. আব্দুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. মাশরুর রিয়াজ। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, উত্তরা মোটর্সের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘যে কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ।’ দেশে গত ১৬ বছরে বহু প্রতারণামূলক বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে ঋণের নামে আমরা ১ টাকার জিনিস ২০ টাকা করেছি। আমরা তো পরিবেশেরও বড় ক্ষতি করে ফেলেছি। এসব উন্নয়ন করতে গিয়ে আমরা বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক দায় তৈরি করেছি, যা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এটা তো টেকসই বিষয় নয়। দীর্ঘ মেয়াদে চলনশীল নয়। এখান থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। এখান থেকে দেশের অর্থনীতিকে বের করে আনার জন্য সমন্বিত অর্থনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এমনকি এটার জন্য রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।’
দেশের অর্থনীতিকে এই দায় থেকে বের করে আনার জন্য সমন্বিত বহুমুখী নীতি গ্রহণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যয়গুলোকে এমনভাবে করতে হবে, যাতে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। দেশের জনমিতিক সুবিধার সুফল পেতে হলে সারাদেশে সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’ জনমিতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য তিনি দেশে অটোমোবাইল শিল্পের ব্যাপক প্রসারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে অন্তত ২০০টি এমন নদী রয়েছে, যেগুলো দিয়ে নৌ পরিবহনের মতো সস্তা ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে পণ্য পরিবহন করা যায়। দেশে পরিবেশবান্ধব সরবরাহ ও পরিবহন ব্যবস্থা তৈরির জন্য সমন্বিত পরিবহন নীতি গ্রহণ করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে মাসরুর রিয়াজ বাংলাদেশে লজিস্টিকস ব্যয় বেশি থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, লজিস্টিকের অন্যতম উপাদান হচ্ছে উন্নত সড়ক এবং উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা। পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তির গাড়ি আমদানি করতে হবে। শুধু নতুন গাড়িই যে পরিবেশবান্ধব তা নয়। বরং উন্নত প্রযুক্তির বা উন্নত দেশে তৈরি করা পুরোনো গাড়ি অনেক বছর পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব থাকে এবং উন্নত সেবা দেয়।
বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক বলেন, দেশে পুরোনো গাড়ি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ব্যাখ্যা দিয়ে অতিরিক্ত আমদানি কর চাপানো আছে। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তির তৈরি গাড়ি বিশেষ করে জাপানের মতো দেশের তৈরি পুরোনো গাড়িও অনেক বছর ধরে পরিবেশবান্ধব থাকে। যেটা অনেক দেশের নতুন গাড়িও দিতে পারে না। সুতরাং জাপানসহ উন্নত দেশের প্রযুক্তির তৈরি ব্যবহৃত এবং পুরোনো গাড়ি আমদানিবান্ধব নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন বারভিডার সভাপতি।
উত্তরা মোটর্সের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, দেশে গাড়ি সংযোজনে ভ্যালু এডিশন হচ্ছে না। বাংলাদেশের যে অটোমোবাইল পলিসি রয়েছে, সেটা তখনকার এনবিআর নিজেদের মতো পরিবর্তন করে জটিল করে রেখেছে। যে কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি।