বান্দরবানের আলীকদমে স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর পেঁপে ও কলাবাগান কেটে বনায়নের অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের বিরুদ্ধে। আলীকদমের মেনতকপাড়া ও কাইংওয়াইপাড়ার পাড়ার ৬টি পরিবারের প্রায় ১২ একর বাগান কেটে ফেলা হয়েছে বলে পাড়াবাসী অভিযোগ করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার ওই দুই পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে জানান, ২১ জুন থেকে বন বিভাগের লোকজন মেনতকপাড়া ও কাইংওয়াইপাড়ার পাড়াবাসীর বাগান কাটতে শুরু করেন। আলীকদম রেঞ্জ কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন এলাহীর নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক লাগিয়ে প্রথমে ইয়াঙবুং ম্রোর পাঁচ একর জায়গায় লাগানো কলা ও আমগাছ কেটে ফেলেন। তাঁরা পাড়াবাসী ও বাগানমালিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি এবং কোনো কথা শুনতেও চাননি। বাধা দিলে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জেলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

মেনতকপাড়ার ইয়াঙবুং ম্রো, অংহ্লা ম্রো বলেছেন, তাঁদের জমির গাছ কেটেছে বন বিভাগ। এ ছাড়া পাড়ার মেনক্রিং ম্রো, রেংতাং ম্রো, মেনসিং ম্রো ও কাইংওয়াইপাড়ার দীংওয়াই ম্রোর বাগান কেটে ফেলা হয়েছে। তাঁদের ১২ একর বাগানে ১ হাজার ২০০ কলাগাছ, কয়েক শ আম ও তিন শতাধিক পেঁপেগাছ ছিল।

আলীকদম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মেনতকপাড়া ও কাইংওয়াইপাড়া। নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলীকদম-নাইক্ষ্যংছড়ি নির্মাণাধীন সড়ক ঘেঁষে পাড়া দুটির অবস্থান। এলাকাটি মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পড়েছে দাবি করে বন বিভাগ। কিন্তু ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন বলছেন, তাঁরা সেখানে বংশপরম্পরায় বসবাস করছেন। ওই জমিতে করছেন জুমচাষ। সড়ক নির্মাণ শুরু হওয়ায় বাগান করা শুরু করেছেন বলে মেনতক পাড়াবাসী ও ভুক্তভোগী ইয়াঙবুং ম্রো জানিয়েছেন।

কাইংওয়াইপাড়ার দীংওয়াই ম্রো ও মেনতকপাড়ার অংহ্লা ম্রো ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলেন, ওই এলাকার ম্রোরা সবাই জুমচাষি। যুগ যুগ ধরে জুমচাষ করে আসছেন। আলীকদম-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক হওয়ায় এখন জুমের সঙ্গে ফলের বাগান ও আদা-হলুদের চাষ করে পরিবার চালান। গত বছর জুমে করা বাগানে সবেমাত্র ফলন আসা শুরু হয়েছে। সেই বাগান বন বিভাগ কেটে শেষ করে দিয়েছে। বন বিভাগ এ ধরনের আচরণ করলে তাঁদের টিকে থাকা কঠিন হবে জানিয়েছেন তাঁরা।

নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুমতুই ম্রো জানিয়েছেন, বন বিভাগ যা করেছে, খুবই অন্যায়। বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নয়াপাড়া ও কুরুকপাতা ইউনিয়নে হাজারো পরিবার বসবাস করে। তাঁরাও সেখানে বাগান করেছেন। কুরুকপাতা ইউনিয়নে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি খামারবাড়িও করেছেন। কিন্তু বন বিভাগ তাদের কিছু করেনি। এখানে দরিদ্র ম্রোদের বাগান কেটে দিয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক।

লামা বন বিভাগের আলীকদম রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন এলাহী বলেছেন, ম্রো পাড়া এলাকায় বনায়নের জায়গাটি ম্রোদের জুমচাষ শেষে পতিত পড়ে ছিল। কয়েক বছর আগের পরিত্যক্ত জুমে কিছু কলাগাছ ও পেঁপেগাছ থাকলেও সেটি বাগান নয়। ম্রোদের সঙ্গে কথা বলেই তাঁরা বনায়নের কাজ করছেন। ম্রোরাই বনায়নের উপকারভোগী হবেন। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের শত শত একর জায়গা প্রভাবশালীরা দখল করেছে কি না, জানতে চাইলে রেঞ্জ কর্মকর্তা তা অস্বীকার করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র কর মকর ত কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আলীকদমে বন বিভাগের বিরুদ্ধে ম্রোদের বাগানের গাছ কেটে বনায়নের অভিযোগ

বান্দরবানের আলীকদমে স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর পেঁপে ও কলাবাগান কেটে বনায়নের অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের বিরুদ্ধে। আলীকদমের মেনতকপাড়া ও কাইংওয়াইপাড়ার পাড়ার ৬টি পরিবারের প্রায় ১২ একর বাগান কেটে ফেলা হয়েছে বলে পাড়াবাসী অভিযোগ করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার ওই দুই পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে জানান, ২১ জুন থেকে বন বিভাগের লোকজন মেনতকপাড়া ও কাইংওয়াইপাড়ার পাড়াবাসীর বাগান কাটতে শুরু করেন। আলীকদম রেঞ্জ কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন এলাহীর নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক লাগিয়ে প্রথমে ইয়াঙবুং ম্রোর পাঁচ একর জায়গায় লাগানো কলা ও আমগাছ কেটে ফেলেন। তাঁরা পাড়াবাসী ও বাগানমালিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি এবং কোনো কথা শুনতেও চাননি। বাধা দিলে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জেলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

মেনতকপাড়ার ইয়াঙবুং ম্রো, অংহ্লা ম্রো বলেছেন, তাঁদের জমির গাছ কেটেছে বন বিভাগ। এ ছাড়া পাড়ার মেনক্রিং ম্রো, রেংতাং ম্রো, মেনসিং ম্রো ও কাইংওয়াইপাড়ার দীংওয়াই ম্রোর বাগান কেটে ফেলা হয়েছে। তাঁদের ১২ একর বাগানে ১ হাজার ২০০ কলাগাছ, কয়েক শ আম ও তিন শতাধিক পেঁপেগাছ ছিল।

আলীকদম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মেনতকপাড়া ও কাইংওয়াইপাড়া। নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলীকদম-নাইক্ষ্যংছড়ি নির্মাণাধীন সড়ক ঘেঁষে পাড়া দুটির অবস্থান। এলাকাটি মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পড়েছে দাবি করে বন বিভাগ। কিন্তু ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন বলছেন, তাঁরা সেখানে বংশপরম্পরায় বসবাস করছেন। ওই জমিতে করছেন জুমচাষ। সড়ক নির্মাণ শুরু হওয়ায় বাগান করা শুরু করেছেন বলে মেনতক পাড়াবাসী ও ভুক্তভোগী ইয়াঙবুং ম্রো জানিয়েছেন।

কাইংওয়াইপাড়ার দীংওয়াই ম্রো ও মেনতকপাড়ার অংহ্লা ম্রো ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলেন, ওই এলাকার ম্রোরা সবাই জুমচাষি। যুগ যুগ ধরে জুমচাষ করে আসছেন। আলীকদম-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক হওয়ায় এখন জুমের সঙ্গে ফলের বাগান ও আদা-হলুদের চাষ করে পরিবার চালান। গত বছর জুমে করা বাগানে সবেমাত্র ফলন আসা শুরু হয়েছে। সেই বাগান বন বিভাগ কেটে শেষ করে দিয়েছে। বন বিভাগ এ ধরনের আচরণ করলে তাঁদের টিকে থাকা কঠিন হবে জানিয়েছেন তাঁরা।

নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুমতুই ম্রো জানিয়েছেন, বন বিভাগ যা করেছে, খুবই অন্যায়। বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নয়াপাড়া ও কুরুকপাতা ইউনিয়নে হাজারো পরিবার বসবাস করে। তাঁরাও সেখানে বাগান করেছেন। কুরুকপাতা ইউনিয়নে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি খামারবাড়িও করেছেন। কিন্তু বন বিভাগ তাদের কিছু করেনি। এখানে দরিদ্র ম্রোদের বাগান কেটে দিয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক।

লামা বন বিভাগের আলীকদম রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন এলাহী বলেছেন, ম্রো পাড়া এলাকায় বনায়নের জায়গাটি ম্রোদের জুমচাষ শেষে পতিত পড়ে ছিল। কয়েক বছর আগের পরিত্যক্ত জুমে কিছু কলাগাছ ও পেঁপেগাছ থাকলেও সেটি বাগান নয়। ম্রোদের সঙ্গে কথা বলেই তাঁরা বনায়নের কাজ করছেন। ম্রোরাই বনায়নের উপকারভোগী হবেন। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের শত শত একর জায়গা প্রভাবশালীরা দখল করেছে কি না, জানতে চাইলে রেঞ্জ কর্মকর্তা তা অস্বীকার করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ