ইসরায়েল নিজেই পরমাণু অস্ত্র বানাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বারবার ধোঁকা দিয়েছিল
Published: 26th, June 2025 GMT
‘স্মরণ রাখবেন, ইরান কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারবে না। খুব সহজ কথা। এতে আর গভীরে যাওয়ার দরকার নেই। তাদের হাতে এই অস্ত্র থাকা চলবে না’—ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ১৭ জুন ২০২৫।
‘ইরানের নেতাদের বোঝা উচিত, আমি কোনোভাবেই “দমননীতি” মেনে চলি না। আমার নীতি হলো, পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে ইরানকে প্রতিরোধ করা’—বারাক ওবামা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ৪ মার্চ ২০১২।
‘আমি বিশ্বাস করি, তারা (ইরান) পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ও জ্ঞান অর্জন করতে চায়। আর আমি নিশ্চিত, পুরো বিশ্বের স্বার্থে তাদের এটা করতে না দেওয়া জরুরি’—প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, ১৭ অক্টোবর ২০০৭
২০০২ সালে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্টরা দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করে যাচ্ছেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া হবে না।
ইরান ১৯৭০ সাল থেকে পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তির (এনপিটি) সদস্য। এই চুক্তির শর্ত হলো, অস্ত্র না থাকা দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অধীনে থাকবে।
তবে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের অনেক আগেই ইরানের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি পারমাণবিক শক্তি অর্জনের আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র তখনই সন্দেহ করেছিল, তিনি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছেন।
রেজা পাহলভির পতনের মাত্র পাঁচ বছর পর ইসলামি প্রজাতন্ত্র গোপনে পারমাণবিক জ্বালানি ও অস্ত্র তৈরির উপাদান প্রস্তুতের চেষ্টা শুরু করে।
এরপর শুরু হয় এক দীর্ঘ ‘লুকোচুরি’র খেলা—আলোচনা, চুক্তি ও পর্যবেক্ষণ। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়, যাতে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার স্থায়ী প্রতিশ্রুতি দেয় এবং বাড়তি নজরদারিতে রাজি হয়।
এই চুক্তি নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছিল (বিশেষ করে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে)। ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন এবং বলেন, তিনি আরও ভালো চুক্তি করবেন। কিন্তু সেই চুক্তি আর হয়নি।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে সেই ট্রাম্পই আবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। কার্যত ওই হামলার মাধ্যমে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত করেছিলেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তিনিই আবার যুদ্ধবিরতি বলবৎ করতে ভূমিকা নেন।
ইরান যদি পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সত্যিই প্রতারণার পথ অনুসরণ করে থাকে, তবে সেই পথের প্রথম এবং আসল পথপ্রদর্শক ছিল ইসরায়েল নিজেই।
২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের কাছে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে। এগুলো বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং সম্ভবত সমুদ্রপথেও বহনযোগ্য।ইসরায়েলের অস্ত্রভান্ডারফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস-এর গবেষকেরা মনে করেন, ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের কাছে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে। এগুলো বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং সম্ভবত সমুদ্রপথেও বহনযোগ্য।
ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি ভাবতে শুরু করেন, তাঁর দেশের নিরাপত্তার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র অপরিহার্য।
তখন থেকেই ইসরায়েল গোপনে পারমাণবিক প্রযুক্তি সংগ্রহ করতে থাকে। এ সময়ে তারা বহুবার যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশকে বিভ্রান্ত করেছিল।
১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল সংকটের পর ফ্রান্স ইসরায়েলকে পরমাণু কর্মসূচিতে সহায়তা করতে চায়। গোপনে তারা ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে ডিমোনা পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করতে সহায়তা করে।
ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তির আওতায় ডিমোনায় একটি ভূগর্ভস্থ রাসায়নিক প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্টও গড়ে তোলা হয়। অবশ্য এই পারমাণবিক স্থাপনার কথা কোনো নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়নি।
ফরাসিরা পরে প্রকল্পটি চালু রাখবে নাকি বন্ধ করে দেবে, সেটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়। ইসরায়েল তখন তাদের আশ্বস্ত করে, কোনো পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর ইচ্ছা তাদের নেই। ফ্রান্সও আর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের জন্য চাপ না দিয়ে নির্মাণকাজ শেষ করতে সাহায্য করে।
এদিকে নরওয়ে ভারী পানি (হেভি ওয়াটার) সরবরাহ করে, যা পারমাণবিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কারণ, ইসরায়েল তাদের জানিয়েছিল, তাদের পরমাণু কর্মসূচির উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ।
১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল সংকটের পর ফ্রান্স ইসরায়েলকে পরমাণু কর্মসূচিতে সহায়তা করতে চায়। গোপনে তারা ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে ডিমোনা পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করতে সহায়তা করে।ধোঁকাবাজি১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ডিমোনার গোপন পরমাণু স্থাপনাটি আবিষ্কার করেন। ইসরায়েল তখন মার্কিন দূতাবাসকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলেছিল, এটা শুধু একটি টেক্সটাইল কারখানা।
পরে যখন ইসরায়েলের মিথ্যা ধরা পড়ে যায়, তখন তারা আবার বলে, এটা ধাতুবিদ্যার গবেষণাগার। সেখানে অস্ত্র তৈরির রাসায়নিক প্ল্যান্ট নেই, যা দিয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা যায়।
১৯৬০ সালের ডিসেম্বরে বেন-গুরিয়ন ইসরায়েলের পার্লামেন্টে বলেন, এটা ২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি গবেষণা চুল্লি। এই পরমাণু কর্মসূচি একমাত্র শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হবে।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি পরমাণু অস্ত্রের সম্ভাব্য বিস্তার নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি ইসরায়েলের পরমাণু কর্মসূচি নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দেন।
১৯৬১ সালে এক মার্কিন পরিদর্শক দল জানায়, এখানে পরমাণু অস্ত্র তৈরির মতো কিছু নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এরপরও দাবি থাকে, পরিদর্শন চলতে থাকুক, যাতে আরব দেশগুলো বিশেষ করে মিসরকে আশস্ত করা যায় যে ইসরায়েলের কোনো গোপন পরমাণু বোমা বানানোর কর্মসূচি নেই।
১৯৬৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডি ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী লেভি ইশকোলকে কড়া বার্তা পাঠান, ‘ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য না পেলে আমাদের সম্পর্ক গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
উত্তরে ইশকোল বলেন, পরমাণু স্থাপনাটি শুধু শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৬৪ সালে একটি মার্কিন দল আবার ইসরায়েলের পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শন করে। তবে তারা প্লুটোনিয়াম পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের কোনো স্থাপনা খুঁজে পায়নি।
মার্কিন প্রতিনিধিদলটি বুঝতেই পারেনি, আসলে ভূগর্ভে ইসরায়েল গোপনে প্লুটোনিয়াম প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট বানিয়ে ফেলেছে আগেই। ইসরায়েল লিফটের চারপাশে এমনভাবে দেয়াল তৈরি করেছে, যাতে পরিদর্শকেরা বুঝতেই পারেননি, সেই লিফট দিয়ে পরমাণু স্থাপনায় যাওয়া যায়।
ভুয়া নিয়ন্ত্রণ কক্ষ১৯৯১ সালে সাংবাদিক সেমুর হার্শের বই ‘দ্য স্যামসন অপশন’ বইয়ে ইসরায়েলের পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। ডিমোনায় একটি ভুয়া নিয়ন্ত্রণকক্ষ তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে ভুয়া বোর্ড ও কম্পিউটারচালিত পরিমাপ যন্ত্র বসানো হয়েছিল, যাতে মনে হয়, সেখানে ২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন চুল্লি (যেমনটা ইসরায়েল দাবি করেছিল) পুরো শক্তিতে চলছে।
ইসরায়েলি কারিগরেরা এই ভুয়া কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে মহড়া চালিয়েছিলেন, যাতে মার্কিন পরিদর্শকেরা এলেও যেন তাঁদের চোখে ধুলা দেওয়া যায়।
এই ভুয়া ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল, মার্কিন পরিদর্শকদের বুঝিয়ে দেওয়া যে সেখানে কোনো রাসায়নিক প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট নেই। এমনকি সেখানে এমন কিছু তৈরি করাও সম্ভব নয়।
১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ডিমোনার গোপন পরমাণু স্থাপনাটি আবিষ্কার করেন। ইসরায়েল তখন মার্কিন দূতাবাসকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলেছিল, এটা শুধু একটি টেক্সটাইল কারখানা।নিক্সন-গোল্ডা মেয়ার গোপন চুক্তি১৯৬৮ সালে সিআইএ নিশ্চিত হয়, ইসরায়েলের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে। তখনই মাত্র পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি (এনপিটি) তৈরি হচ্ছিল। পরে এতে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর অনেকে স্বাক্ষর করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র বুঝে গেছে, অনেক দেরি হয়ে গেছে। ইসরায়েলকে তার পরমাণু কর্মসূচি থেকে এখন ফিরিয়ে আনা আর সম্ভব নয়।
১৯৬৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার একটি গোপন চুক্তি করেন।
এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল তার পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে না বা পরমাণু অস্ত্র আছে, এমনটা স্বীকার করবে না। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ডিমোনা পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শন করবে না এবং ইসরায়েলকে এনপিটিতে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের এক নোটে বলা হয়েছে, নিক্সন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ারকে বলেছিলেন, ইসরায়েল যেন মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্র প্রকাশ্যে আনার মতো কোনো কাণ্ড না করে।
১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উপগ্রহ (যার নাম ভেলা ৬৯১১) তৈরি করে। ১৯৬৩ সালের আংশিক পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তি (পিটিবিটি) মানা হচ্ছে কি না, তা নজরদারির জন্য তৈরি করা হয়েছিল এই স্যাটেলাইট।
ভেলা ৬৯১১ স্যাটেলাইটে দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলের কাছে একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক বিস্ফোরণের বিষয়টি ধরা পড়ে।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এবং অন্য কর্মকর্তারা সন্দেহ করেন, এটা ইসরায়েলেরই পারমাণবিক পরীক্ষা হতে পারে। যদি সত্যি তাই হয়ে থাকে, তবে সেটা নিক্সন-মেয়ার গোপন চুক্তির লঙ্ঘন হতো।
তবে কংগ্রেসের একজন সহকারী লিওনার্ড ওয়েইস ২০১১ সালে লেখেন, কার্টার ও পরে রোনাল্ড রিগ্যান প্রশাসন—দুই প্রশাসনই ইসরায়েলকে ইঙ্গিত করা গোয়েন্দা তথ্যগুলো উপেক্ষা করে বা গুরুত্ব কমিয়ে দেখিয়েছিল।
ওয়েইস বলেন, ‘ভেলা উপগ্রহে ধরা পড়া ঘটনাটি যে ইসরায়েল-দক্ষিণ আফ্রিকার যৌথ পারমাণবিক পরীক্ষা ছিল, তার পক্ষে প্রমাণ এতটাই ভারী ও স্পষ্ট যে অস্বীকার করা কঠিন।’
ওয়েইস আরও বলেন, শীর্ষ গোয়েন্দা ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মতামত এবং কার্টারের প্রকাশিত ডায়েরিতেও এই ইঙ্গিত রয়েছে।
তবে ইসরায়েল কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই পরীক্ষার কথা স্বীকার করেনি। অনেক বিশেষজ্ঞ এখনো সন্দেহ পোষণ করে থাকেন, আদৌ এমন কোনো পরীক্ষা বা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল কি না।
২০১১ সালে কংগ্রেস সহকারী লিওনার্ড ওয়েইস লেখেন, সব তথ্যই বলছে, এটি ছিল ইসরায়েলের পারমাণবিক পরীক্ষা। তবে ইসরায়েল আজও এটি স্বীকার করেনি।
১৯৬৮ সালে সিআইএ নিশ্চিত হয়, ইসরায়েলের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে। তখনই মাত্র পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি (এনপিটি) তৈরি হচ্ছিল। পরে এতে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর অনেকে স্বাক্ষর করেছে।শেষ কথাইসরায়েল তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও শক্তিশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকেও ধোঁকা দিয়েছে। কারণ, তারা বিশ্বাস করে পারমাণবিক বোমা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার বিমা।
কিন্তু ইসরায়েল প্রতারণা করলেও যুক্তরাষ্ট্র তাদের ক্ষেত্রে নমনীয়। কিন্তু ইরানের ক্ষেত্রে কোনো রকম দায়মুক্তি দিতে রাজি নয় তারা। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের ক্ষেত্রে যে নমনীয়তা দেখিয়ে আসছে, তার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে বহু দশক ধরে তাদের বিরুদ্ধে ‘দ্বিমুখী নীতির’ অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
আজ ইরান এমন একটি অঞ্চলে আছে, যেখানে তার চারপাশ ঘিরে আছে রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও ইসরায়েলের মতো পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।
একসময় যেভাবে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি পারমাণবিক বিমা চাইতেন, তেমনি আজকের ইরান সরকারও তা চায়।
এমনকি ভবিষ্যতে যদি ইরানে শাসক পরিবর্তন হয়, তবু কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না, তারা পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাইবে না। অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন দাবি করেছে, ইরানের সব পরমাণু স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল র প স ব ক র কর ত র পরম ণ ক র কর ন এই চ ক ত প রক র সহ য ত র জন য কর ছ ল হয় ছ ল বল ছ ল ইসর য ক ষমত এনপ ট
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ভেজাল বিদেশি প্রসাধনী বিক্রি, গ্রেপ্তার ১
বিদেশি প্রসাধনীর নামে পুরান ঢাকার লালবাগ ও চকবাজারে নকল এবং ভেজাল প্রসাধনী অনলাইনে পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে আসছিল একটি চক্র। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকার উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জের পুরাতন ভাড়ালিয়ায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ৯ ধরনের নকল ও ভেজাল প্রসাধনী জব্দ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সিআইডির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপন খবরের ভিত্তিতে সিআইডির একটি বিশেষ দল ভেজাল প্রসাধনী সামগ্রী কারখানায় পণ্য উৎপাদন ও মোড়কজাত করার সময় মো. হৃদয় হোসেন (২৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোট ৯ ধরনের ১ হাজার ৭০ প্যাকেট বিভিন্ন রকমের নকল ও ভেজাল প্রসাধনী এবং ২০০টি খালি মোড়ক জব্দ করা হয়। তাঁর বাড়ি কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজার এলাকার পুরাতন ভাড়ালিয়ায়। হৃদয়ের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি ভেজাল প্রসাধনী ও মোড়ক উদ্ধার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে।
সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয়ভাবে এসব বিদেশি প্রসাধনী উৎপাদিত হতো, এ বিষয়ে গ্রেপ্তার হৃদয়ের কাছে কোনো কাগজপত্র নেই। উৎপাদিত ভেজাল প্রসাধনী ঢাকার লালবাগ ও চকবাজারের বিভিন্ন অসাধু পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে সরবরাহ করত প্রতারক চক্রটি। এমনকি অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সেই ভেজাল পণ্য সস্তায় কিনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখধাঁধানো বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করতেন।
উদ্ধার ভেজাল পণ্যের মধ্যে রয়েছে ১৪০টি কেম কট থাই, ১৪০টি এল অ্যাভিনিউ হোয়াইটনিং বডি ক্রিম, ১৭০টি অর্গানিক হেয়ারফর অয়েল, ১৪০টি বডি হোয়াইটনিং ক্রিম, ১৪০টি কেম বো হোয়াইটনিং বডি ক্রিম, ১৪০টি অজুফি হোয়াইটনিং বডি ক্রিম, ৬০টি হোয়াইটনিং বডি লোশন, ৫০টি হোয়াইটনিং বডি লোশন, ৯০টি কোরিয়ান ফেয়ার লুক পারমান্যান্ট হোয়াইটনিং বডি লোশন। এ ছাড়া ২০০টি নিউ ফ্রেশ অ্যান্ড হোয়াইট, স্কিন বডি লোশনের মোড়ক।
সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় হোসেন জানান, এসব প্রসাধনী বাংলাদেশে উৎপাদন বা আমদানি হয় না। চক্রের অন্য সদস্যরা বিদেশের লাগেজ পার্টির মাধ্যমে স্যাম্পল এনে তা কপি করেন এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করেন। তাঁদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এসব প্রসাধনী তৈরি করে তিনি লালবাগ ও চকবাজারের অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করতেন। পরে তাঁরা বিদেশি প্রসাধনী বলে স্থানীয় পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করেন। এ ছাড়া অনেক গ্রাহক তাঁর কাছ থেকে পণ্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করেন।
প্রতারক চক্রের সহযোগীদের শনাক্ত করে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।