ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কোথায়—এমন প্রশ্ন কয়েক দিন ধরেই উঠছিল। ইরান–ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিন ধরে চলা সংঘাতের সময় মাত্র দুবার বিবৃতি দিয়েছেন তিনি। তবে জনসমক্ষে আসেননি। তাঁর মৃত্যু নিয়েও শুরু হয়েছিল গুঞ্জন। এরই মধ্যে খামেনির একটি ভিডিও বার্তা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে। তাতে তাঁকে ইরানের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

খামেনির ভিডিও বার্তা সম্প্রচার করা হয়েছে ২৩ জুন ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি শুরুর দুই দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার। বার্তায় ইসরায়েলের পাশাপাশি দেশটির মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন খামেনি। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরান। এর মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটনের গালে ‘ সজোরে চপেটাঘাত’ করেছে তেহরান।

১৩ জুন ইরান–ইসরায়েল সংঘাত শুরু হয়। প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র শুধু ইসরায়েলকে সহযোগিতা করে যাচ্ছিল। পরে ২১ জুন ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সরাসরি সংঘাতে যুক্ত হয় ওয়াশিংটন। ওই হামলার এক দিন পর কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর প্রথম ভিডিও বার্তায় খামেনি বলেন, এই ‘যুদ্ধে’ যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করেছিল, কারণ দেশটি বুঝতে পেরেছিল, তাদের হস্তক্ষেপ ছাড়া ‘জায়নবাদী’ ইসরায়েল ধ্বংস হয়ে যাবে। ইসরায়েল ‘প্রায় ধসে পড়েছে।’ ইরানের হামলায় তারা ‘চূর্ণবিচূর্ণ’ হয়ে গেছে। ইরানের ওপর হামলার জন্য শত্রুদের চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন ৮৬ বছর বয়সী এই নেতা।  

ইরান কখনো ‘আত্মসমর্পণ’ করবে না বলেও উল্লেখ করেন খামেনি। যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান—তিনটি পরমাণু স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তারও একটি জবাব দেন তিনি। বলেন, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ছিল নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য। তাদের বোমা ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। তবে খুব বেশি কিছু অর্জন করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।

এখনো খামেনিকে হত্যার শঙ্কা

ভিডিওতে খামেনির পেছনে ছিল বাদামি পর্দা। এক পাশে ইরানের পতাকা। আরেক পাশে তাঁর পূর্বসূরি আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির ছবি। কোথায় ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে, তা জানা যায়নি। এর পরও খামেনির এই ভিডিও বার্তা ইরানিদের জন্য একটি স্বস্তির বিষয়। কারণ, তাঁর সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানা না গেলেও অন্তত এটুকু জানা গেছে—তিনি বেঁচে আছেন।

খামেনির অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিলেন ইরানের সরকারি কর্মকর্তারাও। যেমন খামেনির মহাফেজখানার দপ্তরের কর্মকর্তা মেহদি ফাজায়েলি। এক টেলিভিশন উপস্থাপক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘সর্বোচ্চ নেতাকে নিয়ে মানুষ খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি কেমন আছেন, আমাদের বলতে পারবেন?’ এর সরাসরি কোনো জবাব দিতে পারেননি ফাজায়েলি। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার দোয়া করা উচিত।’

ইরানের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খামেনি একটি বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন। ইলেকট্রনিক যোগাযোগব্যবস্থা থেকে বিরত রাখা হয়েছে তাঁকে। তিনি হত্যার শিকার হতে পারেন—এমন আশঙ্কা থেকে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইরানের পত্রিকা খানেমান–এর সম্পাদক মোহসেন খালিফেহ বলেন, এই অনুপস্থিতির কারণে আর সবার মতো খামেনির মৃত্যু নিয়ে ভয় পেয়েছিলেন তিনিও।

খামেনি ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সব রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে থাকেন। তিনি আড়ালে থাকার সময় মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা ও যুদ্ধবিরতির মতো গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তেহরানকে। এ সিদ্ধান্তগুলো কে নিয়েছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামজেদ সাফাভি বলেন, দূর থেকেই প্রধান প্রধান সিদ্ধান্ত খামেনি এখনো নিচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি।

সাফাভি বলেন, যুদ্ধবিরতি চলাকালেও ইসরায়েল খামেনিকে হত্যার চেষ্টা করতে পারে বলে মনে করেন ইরানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। এ জন্য সর্বোচ্চ নেতাকে ঘিরে চরম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। বাইরের জগতের সঙ্গে খামেনির যোগাযোগ কমানো হয়েছে। এমন সংকটের মধ্যে দেশ চালানোর জন্য প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানসহ অন্য নেতাদেরও ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।

ভিন্নমতাবলম্বীদের সমালোচনা

এরই মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে ভিন্নমতাদর্শের গোষ্ঠীগুলো। ইরানের কট্টরপন্থী রাজনীতিক সাঈদ জলিলির নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সমালোচনা করেছে। যুদ্ধবিরতি ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা শুরুর যে ইঙ্গিত সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তারও নিন্দা জানিয়েছেন তাঁরা।

এই গোষ্ঠীতে রয়েছেন কট্টরপন্থীরা, যাঁদের মধ্যে ইরানের পার্লামেন্ট সদস্য ও ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার রয়েছেন। আইআরজিসির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফুয়াদ ইজাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, পেজেশকিয়ানের আলোচনার বার্তা এখন মনে করিয়ে দিচ্ছে—ইরানের প্রেসিডেন্টের দেশ পরিচালনার প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক দক্ষতা নেই।
বিরোধী এই গোষ্ঠীর পাল্টা জবাব দিয়েছেন প্রেসিডেন্টের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা আলী আহমাদনিয়া। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমরা ১২ দিন ধরে দিনরাত ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করছি। এখন কি আপনাদের সঙ্গেও লড়তে হবে, যাঁরা কলম দিয়ে শত্রুর খেলায় ঘুঁটি সাজাচ্ছেন।’

জনসমক্ষে খামেনির না থাকা ইরানের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাজ্যের নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক পরিচালক সানাম ভাকিল। তিনি বলেন, এ সময়টাতে দেশটির নেতাদের ‘চূড়ান্ত সতর্ক’ ও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যাচ্ছে।’ নেতাদের এই সতর্কতা, ইরানিদের শঙ্কা, বিরোধীদের সমালোচনার মধ্যেই শেষ পর্যন্ত ভিডিও বার্তা দিয়ে খামেনি বললেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংঘাতে ইরান ‘জয়ী’ হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল র কর মকর ত র জন ত ক অবস থ ন র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে হামলা নিয়ে ইসরায়েলের ‘প্রোপাগান্ডা’

ইসরায়েল টানা ১১ দিন ধরে ইরানে বোমাবর্ষণ চালাল। কিন্তু এরপর কী হলো? প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে বললেন, ‘ইসরায়েলের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে।’ কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এ দাবি নিছকই প্রোপাগান্ডা।

এই স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধের শুরুতে নেতানিয়াহু দুটি প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন– ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা এবং শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো।

প্রথম প্রশ্ন– ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কি ধ্বংস হয়েছে? সম্ভবত না। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই ইরান ফোর্ডো পারমাণবিক স্থাপনা থেকে বিভাজনযোগ্য পদার্থ সরিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অথচ এটাই ছিল কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফলে একে ‘ধ্বংস’ বলা চলে না।

ইসরায়েল কী ধরনের ক্ষতি করতে পেরেছে, সেটাও স্পষ্ট নয়। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করিয়ে ইরানের স্থাপনায় ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ (এমওপি) নামের ‘বাঙ্কার ধ্বংসকারী’ বোমা ব্যবহার করালেও, এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র তেমন কিছু করেনি। আর ইরান আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের প্রবেশ করতে দেবে না বলেই প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ কঠিন।

দ্বিতীয় প্রশ্ন– ইসরায়েল কি ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে পেরেছে? বরং ঠিক উল্টোটা ঘটেছে।
ইসরায়েল বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যা করে জনঅসন্তোষ উসকে দিতে চেয়েছিল। তাদের ধারণা, শীর্ষ পর্যায়ের হত্যাকাণ্ড শাসনব্যবস্থার ভিত নড়বড়ে করে। কিন্তু অতীতে এই কৌশল খুব কমই সফল হয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম হতে পারে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি, সেটাও ছিল লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

ইরানের ক্ষেত্রে বরং এই হত্যাকাণ্ড সরকারবিরোধী বহু নাগরিককেও সরকারের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে। আইআরজিসি নেতাদের হত্যার পর এমন মানুষরাও, যারা এই সংগঠনকে ঘৃণা করেন, দেশের বিরুদ্ধে বিদেশি হামলা দেখে আইআরজিসির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। ইরানিরা পুরো বিষয়টিকে ‘শুধু সরকারের নয়, বরং গোটা জাতির ওপর হামলা’ হিসেবে দেখেছে।

শাসনব্যবস্থার প্রতীকী কিছু স্থাপনায় বোমা ফেলে ইসরায়েল পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, কুখ্যাত এভিন কারাগারে বোমা হামলা চালিয়ে ইসরায়েল বলেছিল, এটি নাকি রাজনৈতিক বন্দিদের পাশে দাঁড়ানোর এক প্রয়াস। বাস্তবে এতে বন্দিদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে এবং বহু বন্দিকে অজানা স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তেহরানে তথাকথিত ‘ইসরায়েল ডুমসডে ক্লক’ (যেটি ইসরায়েল ধ্বংসের কাউন্টডাউন ঘড়ি হিসেবে পরিচিত) গুঁড়িয়ে দেওয়া ছিল নিছকই হাস্যকর। একইভাবে, ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরআইবি’তে হামলার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ইসরায়েল বলেছিল, তারা ‘রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডা বন্ধ করতে’ চেয়েছে। কিন্তু এতে বরং ইরান ইসরায়েলি টিভি চ্যানেলগুলোকে পাল্টা হামলার হুমকি দেওয়ার যুক্তি পেয়ে গেছে।

তাহলে অন্তত আন্তর্জাতিক সমর্থন কি আদায় করতে পেরেছে ইসরায়েল? গাজা ইস্যুকে আড়াল করে তারা কি ‘ন্যায়ের লড়াইকারী’ হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে? এর সম্ভাবনা খুবই কম।
এটা সত্য যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক আইনের বহু বিধান লঙ্ঘিত হয়েছে। তবে বোমারু বিমানগুলো হামলার পরপরই ফিরে গেছে– যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে জড়ায়নি।

এরপরও ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি চুক্তি চান– যাতে ইসরায়েলও অংশ নিতে পারে। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি ইসরায়েলকে সহায়তা করেছেন মূলত নিজের এবং উপসাগরীয় মিত্রদের স্বার্থে।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেদরিখ মের্জসহ কিছু নেতা এই হামলার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন ঠিকই; কিন্তু ইসরায়েলের দাবির কঠোরতা– যেমন, ‘ইরান এক বিন্দুও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না’– সে ধরনের অবস্থান কেউ নেয়নি।

বিশ্ব আবার ফিরে গেছে পুরোনো অবস্থানে– ‘ইরানের পরমাণু অস্ত্র থাকা চলবে না’, আর এই অবস্থান ইরান আগেই মেনে নিয়েছিল।

মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে এখনও ইরানকে ‘বৈধ অংশীদার’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এটি ইসরায়েলের কৌশলগত ব্যর্থতা, আর ইরানের কূটনৈতিক সাফল্য।

আরেকটি দিক ভুললে চলবে না– ইসরায়েল নিজ ভূখণ্ডেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। আকাশে শুরুতে আধিপত্য স্থাপন করলেও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র একের পর এক ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আঘাত হানে। সবকিছুই স্থবির হয়ে পড়ে, অনেক মানুষ নিহত হন, বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চলে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছিল, মজুত পূরণের তেমন সুযোগ ছিল না। ইসরায়েলের অর্থনীতি কার্যত থমকে যায়। এটাও ইরানের আরেকটি বড় অর্জন।
ইরান এই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রাণহানি হয়েছে শত শত মানুষের, দেশজুড়ে বিস্তৃত বোমাবর্ষণের শিকার হয়েছে। কিন্তু তবু ইসলামি প্রজাতন্ত্র ভেঙে পড়েনি।

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র নির্ভুলভাবে আঘাত হেনেছে, আর বিশ্ব তাদের দেখেছে আক্রান্ত এক রাষ্ট্র হিসেবে, আগ্রাসী হিসেবে নয়। কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার আগে ইরান নিজেই আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে উত্তেজনা প্রশমিত করেছে।

অবস্থা এমন হয়েছিল যে, ট্রাম্প পর্যন্ত ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দেন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করতে। শেষ পর্যন্ত, ইরান এই যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসেছে খানিকটা আহত, কিন্তু অটুট, আত্মবিশ্বাসী এবং ভবিষ্যতের কৌশলগত সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলার অবস্থানে।

ওরি গোল্ডবার্গ: ইসরায়েলি লেখক, রাজনৈতিক বক্তা ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক

আলজাজিরা থেকে ভাষান্তর: শাহেরীন আরাফাত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হামলার পরই ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ইরানি জেনারেলদের স্ত্রী-সন্তানসহ হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন
  • জীবিত আছেন ইরানের কুদস ফোর্স কমান্ডার ইসমাইল কানি
  • ইরানে ইসরায়েল যেভাবে পুরোপুরি ব্যর্থ হলো
  • ইরানে হামলা নিয়ে ইসরায়েলের প্রোপাগান্ডা
  • ইরানে হামলা নিয়ে ইসরায়েলের ‘প্রোপাগান্ডা’