পায়ের নিচে পিচ নয়, থিকথিকে কাদা। চারপাশে দুর্গন্ধ। সামনে গর্ত। হাঁটতে গেলে জুতা আটকে যায়। প্রতিবার চাকার ঘূর্ণিতে কাঁপে রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কোথাও বড় গর্ত, কোথাও জলজট। যানবাহন মাঝপথে থেমে যায়। অন্তঃসত্ত্বা নারী থেকে রোগীবাহী গাড়ি– কেউই স্বস্তিতে নেই। স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে সব বয়সী মানুষকে পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় ভোগান্তি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর-গোকর্ণ-পূর্বভাগ-মাধবপুর সড়কের এই চিত্র প্রতিদিনের। 
৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের তিন কিলোমিটার নির্মাণেই সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। অথচ কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও আগে। স্থানীয় লোকজনের চোখে, সড়কটি ফুটিয়ে তুলেছে বছরের পর বছর ধরে চলা অব্যবস্থাপনার চিত্র।
নাসিরনগর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নাসিরনগর-মাধবপুর আঞ্চলিক সড়কের ৯ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর। এর খরচ ধরা হয় ১৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান এন্টারপ্রাইজ পায় কাজটি। আগের সড়কটি ছিল ১২ ফুট। কার্যাদেশে সেটি ২২ ফুটে উন্নীত করার কথা। এর মধ্যে ১৬ ফুট ৫ ইঞ্চি হবে পিচঢালাই, পাশে তিন ফুট করে সোল্ডার। এক বছর ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। যে সময়সীমা শেষ হয়েছে ২০২৫ সালের ২৮ মে। ইতোমধ্যে প্রায় ৭ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা এখন কাজের সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
এই সড়ক নির্মাণ কাজের ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ আশপাশের লোকজন। তারা জানায়, সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি কাদায় ঢেকে যায়। হেঁটে চলাও এখন বিপজ্জনক। এই রাস্তাটি শুধু ভোগান্তির নয়, তাতে ঘটছে প্রতিনিয়িত দুর্ঘটনাও। সাম্প্রতিক সময়ে শিশু-নারী, বৃদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। 
সরেজমিন বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার দেখা যায়, নাসিরনগর থেকে ফুলপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশে কাজ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা অসম্পূর্ণ। কোথাও চওড়া ১৬ ফুট, কোথাও ১৮ ফুট। অথচ কাজ হওয়ার কথা ২২ ফুট। 
গোকর্ণ ইউনিয়নের নূরপুর থেকে পূর্বভাগের ভুবন পর্যন্ত অংশে পিচ উঠে গেছে। গর্ত হয়েছে অনেক জায়গায়। কোথাও পানি জমে আছে, কোথাও কাদায় আটকে যানবাহন। ভুবন এলাকায় বুধবার একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার উল্টে পড়ে ছিল। পাশে হাঁটু পর্যন্ত কাদা। সেখান দিয়ে জুতা খুলে হাঁটছিলেন ষাটোর্ধ্ব হায়দার আলী। তিনি বলেন, ‘কোমরের চিকিৎসা করে বাড়িতে ফিরেছিলাম দুই দিন আগে। পরের দিন এই রাস্তা দিয়ে বাজারে যেতে গিয়ে এমন ঝাঁকুনি খেলাম, আবার ঢাকায় যাচ্ছি চিকিৎসা নিতে।’
বৃহস্পতিবার জেঠাগ্রামের পাশে রাস্তায় বসে ছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক জুয়েল মিয়া। তাঁর অটোরিকশাটির সামনে চাকা ভেঙে গেছে। চোখে পানি নিয়ে তিনি বললেন, ‘এমন রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানো মানে মৃত্যুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা। আমার গাড়িতেই দুইজন নারী সন্তান প্রসব করেছেন। আজ সেই গাড়িটাই উল্টে গেল। চালানো বন্ধ করলে খাওয়ার কী হবে?’
ভুবন বাজারের কাছাকাছি পাওয়া যায় ইমরান হোসেনকে। হাঁটতে হাঁটতে তিনি বলেন, ‘ছেলেকে স্কুলে পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। রাস্তা এত খারাপ, কোনো গাড়িই আসতেছে না।’
কাছাকাছি এলাকার দুর্জয় ও আশিক পড়ছে সপ্তম শ্রেণিতে। তারা যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে, তখন থেকেই সড়কের এই অবস্থা দেখে আসছে। তারা জানায়, আগে আরেকটু ভালো ছিল, এখন খুবই ভয়াবহ অবস্থা। 
গোকর্ণ ইউনিয়নের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের আগে সবাই প্রতিশ্রুতি দেয়, পরে আর খোঁজ রাখে না। দু’জন এমপি বদলাল, কিন্তু রাস্তাটার অবস্থা বদলায়নি।
পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত আলামিন শান্ত বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে আমাদের দিনে ১০ বার করে যাতায়াত করতে হয়। সপ্তাহে এক-দুইবার দুর্ঘটনায় পড়ি। এই রাস্তার জন্য মাঝেমধ্যে মনে হয়, চাকরি ছেড়ে চলে যাই।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের দাবি, সড়কের দুই পাশের গাছ কাটতে বন বিভাগ সময় নিয়েছে দেড় বছর। এ ছাড়া সড়ক প্রশস্ত করতে গিয়ে অনেকে জায়গা ছাড়তে রাজি হয়নি। এজন্যই দীর্ঘ সময় লেগেছে। উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মো.

মুসলেহ উদ্দিনের ভাষ্য, ‘আমরা গাছ কাটতে সময় নিয়েছি তিন মাস। আমাদের কারণে সড়ক সংস্কার কাজের ধীরগতি হচ্ছে– এ অভিযোগ সত্য নয়।’
নিয়মমতোই কাজ হচ্ছে বলে দাবি করেন হাসান এন্টারপ্রাইজের খায়রুল হাসান। তিনি বলেন, কিছু স্থানে লোকজন জায়গা দিতে রাজি হচ্ছেন না বলে সমস্যা হচ্ছে। সড়কের যেটুকু কাজ করেছেন, এর দুই পাশে মাটির সোল্ডারের কাজ পরে করা হবে। 
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম মৃধা বলেন, নাসিরনগর-মাধবপুর সড়কের ৯ কিলোমিটার অংশে সংস্কার হচ্ছে। ২২ ফুট চওড়া করার বদলে কম করার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন। একই রকম আশ্বাস দেন ইউএনও শাহিনা নাসরিনও। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন স রনগর এই র স ত সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন ইতি, বরমচাল চা-বাগানে তিনিই প্রথম

চা-শ্রমিক পরিবারের মেয়ে ইতি গৌড় (১৯) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর আগে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগেও সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা ইতির।

ইতিদের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা-বাগানের ডিপো লাইনে। ওই বাগান থেকে এর আগে কেউ কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাননি। তিন বোনের মধ্যে ইতি সবচেয়ে ছোট।

গত মঙ্গলবার বিকেলে ইতিদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বাগানের রাস্তার পাশে ছোট একটি টিলার ওপর তাঁদের ঘর। সেখানে ইতি, তাঁর বাবা শংকর গৌড় ও মাসি ষষ্ঠী গৌড় থাকেন।

ইতির মা সুমিত্রা গৌড় ছিলেন চা-শ্রমিক। প্রায় দুই বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। বাবা শংকর গৌড় বাপেক্সের স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করতেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হলে ২০১৮ সালে চাকরি ছাড়তে হয় তাঁকে। বর্তমানে তিনিও অসুস্থ।

প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন বরমচাল মিশন স্কুল থেকে। এরপর ভর্তি হন বরমচাল উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে। ২০২২ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ৬৭ এবং ২০২৪ সালে ইউছুফ-গণি কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৩ পান।

ইতি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন আগে থেকেই ছিল। এইচএসসির পর প্রস্তুতি শুরু করি। ঢাকা, শাহজালাল, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিই। জগন্নাথে ভালো হয়নি, জাহাঙ্গীরনগরে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকায় হতাশ হয়ে পড়ি। পরে শাহজালালে বিবিএতে চান্স পাই। দেরি না করে ভর্তি হয়ে যাই। এর কয়েক দিন পর ঢাবির ফল আসে, ফিন্যান্স বিভাগে টিকি। তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। পরিচিতজনেরা ঢাবিতে ভর্তি হতে বলেন, তাই শাহজালাল থেকে ভর্তি বাতিল করে ঢাবিতে যাচ্ছি।’

ইতি গৌড়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জয়পুরহাটে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে ডেকে নিয়ে হত্যা
  • ছাত্রত্ব ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট জাবি ছাত্রদল আহ্বায়কের
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন ইতি, বরমচাল চা-বাগানে তিনিই প্রথম
  • জাহাঙ্গীরনগরের হল থেকে পরিত্যক্ত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার