পরমাণু প্রকল্প নিয়ে ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য তৎপরতা শুরু করেছে ওয়াশিংটন। ইরানে একটি বেসামরিক পরমাণু প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য দেশটিকে ৩ হাজার (৩০ বিলিয়ন) কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি মার্কিন প্রশাসনের আলোচনায় রয়েছে। ভাবা হচ্ছে, তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং জব্দ থাকা দেশটির অর্থছাড়ের কথাও।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন তৎপরতার কথা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আসেনি। তবে এ নিয়ে জানাশোনা আছে এমন চারটি সূত্র সিএনএনকে এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র বলেছে, টানা ১২ দিন চলা ইরান–ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যেও তেহরানের সঙ্গে পর্দার আড়ালে আলোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা। যুদ্ধবিরতির পরও এ আলোচনা চলছে।

সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংকটের মধ্যেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার বিষয়ে ছাড় না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে তেহরান। এর বিপরীত অবস্থান ওয়াশিংটনের। ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে দেওয়া হবে না—এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে কোনো আপস করতে চায় না তারা। এই শর্ত মাথায় রেখে ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব সাজাচ্ছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

১৩ জুন ইরান–ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। এরই মধ্যে ২১ জুন রাতে ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর আগের দিন ২০ জুন হোয়াইট হাউসে এক গোপন আলোচনায় বসেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও উপসাগরীয় অঞ্চলে দেশটির মিত্ররা। ওই বৈঠকে আলোচনা হওয়া বিভিন্ন তথ্য সিএনএনকে জানিয়েছে দুটি সূত্র।

ওই তথ্যের মধ্যে রয়েছে ইরানের নতুন একটি পরমাণু প্রকল্প শুরুর জন্য ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা। এই প্রকল্পে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না তেহরান। প্রকল্পগুলো বেসামরিক কাজে ব্যবহার করতে হবে। তবে এই অর্থ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসবে না। ওয়াশিংটনের চাওয়া—মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার দেশগুলোই এই খরচ বহন করবে।

ইরানকে আরও কিছু ছাড় দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সিএনএনের নজরে আসা একটি খসড়া অনুযায়ী, বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে জব্দ থাকা ৬০০ কোটি ডলার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে ইরানকে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফর্দো পরমাণু স্থাপনা নতুন করে গড়ে তুলতে উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মিত্র দেশগুলোর সহায়তা দেওয়ার কথাও উঠেছে। সেখানেও আর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না ইরান।

যুক্তরাষ্ট্র তেহরানকে এমনও একটি প্রস্তাব দিয়েছে যে নিজেদের পরমাণু প্রকল্পগুলোর জন্য সমৃদ্ধ করা ইউরেনিয়াম আমদানি করবে ইরান। গত বুধবার সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে স্টিভ উইটকফ বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে যে আলোচনা হতে যাচ্ছে, সেটি হলো কীভাবে আমরা আপনাদের জন্য একটি বেসামরিক পরমাণু প্রকল্প গড়ে দিতে পারি। সেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা যাবে না।’

এই প্রস্তাবগুলো ইরানের সামনে পেশ করার একটি সুযোগও রয়েছে সামনে। বুধবার ট্রাম্প বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে’ যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান আলোচনায় বসবে। যদিও এমন আলোচনার বিষয়ে জানেন না ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাগেরি। এই আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আলোচনার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনো ঠিক করা হয়নি।

হামলার ফলে চুক্তি সহজ হবে, আশা যুক্তরাষ্ট্রের

ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইরানের। দেশটির বিভিন্ন পরমাণু স্থাপনায় হামলা হয়েছে। তিনটি স্থাপনা ‘পুরোপুরি ধ্বংস’ করে দেওয়ার দাবি করেছেন ট্রাম্প। এ ছাড়া দেশটির বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র, সামরিক কার্যালয়, গ্যাসক্ষেত্র, তেল শোধনাগার, বিমানবন্দর, হাসপাতাল ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের আশা, এই হামলার পর পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের শর্তগুলো মেনে নিতে আগের চেয়ে আগ্রহী হবে ইরান। পরমাণু অস্ত্র তৈরি প্রচেষ্টাও বন্ধ করে দেবে। তবে ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে তেহরান। সংঘাতের পর জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এর ফলে আরও গোপনে পরমাণু প্রকল্প চালিয়ে যেতে পারবে ইরান।

ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করতে ২০১৫ সালে দেশটির সঙ্গে একটি চুক্তি করছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করলে, এর বিনিময়ে তেহরানের ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প।

গত জানুয়ারিতে নতুন করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ইরানের সঙ্গে আবার পারমাণবিক চুক্তি করার বিষয়ে তৎপর হন ট্রাম্প। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাঁচ দফায় বৈঠকও হয়। এ সময় চুক্তি নিয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল ওয়াশিংটন। ষষ্ঠ দফার বৈঠকে এর জবাব দেওয়ার কথা ছিল তেহরানের। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর ওই আলোচনা স্থগিত করে ইরান।

একই ধরনের আলোচনা আবার শুরু হবে বলে আশাবাদী ট্রাম্প। বুধবার পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলনে তিনি বলেন, নতুন আলোচনা হলে ইরানের কাছে আগে যেসব বিষয়ে প্রতিশ্রুতি চাওয়া হয়েছিল, সেগুলোই আবার চাওয়া হবে। আর দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর ‘ইঙ্গিত’ পাওয়া যাচ্ছে মনে করেন ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ। তিনি বলেন, ‘ইরানিদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হচ্ছে। একাধিক মধ্যস্থতাকারী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমি মনে করি, তাঁরা (ইরান) প্রস্তুত আছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র প রস ত ব প রকল প র জন য দ শট র পরম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস হয়নি বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর সঠিক নয়: দাবি ট্রাম্পের

ইরানে পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মার্কিন বিমান হামলার কার্যকারিতা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছেন, ইরানের তিনটি পারমাণবিক সাইটেই নিখুঁতভাবে হামলা চালানো হয়েছে এবং সেগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।

এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, মার্কিন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো হামলা পরিচালনাকারী সেনাবাহিনীর প্রতি ‘অত্যন্ত অসম্মানজনক’।

এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি মার্কিন গণমাধ্যমকে অভিযুক্ত করে বলেন, তারা ইতিহাসের অন্যতম সফল সামরিক অভিযানের মর্যাদা খাটো করার চেষ্টা করছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন ফাঁস হয়ে যায়। যেখানে বলা হয়, মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। এ নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন, যেসব মিডিয়া এ দাবি করছে তারা মিথ্যা ছড়াচ্ছে এবং বাস্তবতা আড়াল করার চেষ্টা করছে।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, ইরানে মার্কিন হামলার ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ শামিল।

তিনি ফক্স নিউজকে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো এবং এটি অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। যারাই এর জন্য দায়ী, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

তিনি আরও জানান, তিনি সব ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন প্রতিবেদন পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র যেসব তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

ট্রাম্প নিজেও উইটকফের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ট্রুথ সোশালে ফক্স নিউজ সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেন।

সেখানে উইটকফকে উদ্ধৃত করে লেখা ছিল- ‘আমরা ফোরদোতে ১২টি বাংকার বাস্টার বোমা ফেলেছি। কোনো সন্দেহ নেই, তা ছাদ ভেদ করেছে। কোনো সন্দেহ নেই, এটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং যেসব প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি, তা একেবারেই হাস্যকর!’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলোচনায় ফেরাতে ইরানকে লোভনীয় প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের
  • ইরানের ওপর তেল নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ইঙ্গিত যুক্তরাষ্ট্রের
  • ইরানে পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস হয়নি বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর সঠিক নয়: দাবি ট্রাম্পের