ইসরায়েলের সঙ্গে টানা ১২ দিনের যুদ্ধে ইরান জয় পেয়েছে—এমন দাবি করেছিলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তাঁর এ দাবির তীব্র সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হুমকি দিয়ে তিনি বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করলে তাঁর দেশ ইরানে আবার বোমাবর্ষণ করবে।

ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ওপর রাগ ঝেড়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, তিনি খামেনিকে ‘এক সহিংস ও অপমানজনক’ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। ট্রাম্প আরও লেখেন, আগের দিন এক বক্তব্যে ইরানের ‘বিজয়’ দাবি করার সময় খামেনি ‘নির্লজ্জ ও বোকামিপূর্ণ’ মিথ্যা বলেছেন।

গত সপ্তাহের শুরুতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর আগে ইরানের ফর্দো, নাতানজ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান।

নিজেদের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জবাবে কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালিয়ে তেহরান মূলত ওয়াশিংটনের গালে ‘সজোরে চড়’ মেরেছে—১২ দিনের সংঘাত বন্ধের পর দেওয়া প্রথম ভিডিও বার্তায় এমন কথাই বলেন খামেনি। জবাবে গতকাল শুক্রবার দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প জানান, ‘চূড়ান্ত কিছু করা’ থেকে ইসরায়েলকে সরে আসতে বলেছেন তিনি।

আরও পড়ুনভিডিও বার্তায় দৃঢ় অবস্থান ইরানের সর্বোচ্চ নেতার২৬ জুন ২০২৫

পোস্টে খামেনির উদ্দেশে ট্রাম্প লেখেন, ‘তাঁর দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। তাঁর তিনটি ক্ষতিকর পারমাণবিক স্থাপনাও ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি এটাও জানতাম যে তিনি কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন। আমি ইসরায়েল ও বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মার্কিন সামরিক বাহিনীকে দিয়ে তাঁর জীবন শেষ করে দিইনি।’

মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়েছে কি না, তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। এসব হামলার ফলাফল ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছে; তার সঙ্গে ফাঁস হওয়া মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিস্তর ফারাক দেখা গেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ইঙ্গিত করা হয়েছে, মার্কিন হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনইরান অস্ত্র তৈরির মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করলে আবার হামলা: ট্রাম্প৯ ঘণ্টা আগে

গতকাল হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তেহরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির আকাঙ্ক্ষা যদি দমানো না যায়, তাহলে তিনি নতুন করে হামলার কথা বিবেচনা করবেন কি না? মার্কিন প্রেসিডেন্ট দ্রুত জবাব দেন, ‘অবশ্যই। এটি প্রশ্নাতীত।’

ট্রাম্প আরও আশা প্রকাশ করেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) কিংবা অন্য কোনো স্বীকৃত সংস্থার পর্যবেক্ষকদের নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ দেবে তেহরান।

তবে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্কে স্থগিতের বিষয়ে ইরানের পার্লামেন্টে একটি বিল পাস হয়েছে। নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় ইরান এমন উদ্যোগ নিয়েছে। গতকাল ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ইঙ্গিত দিয়েছেন, পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনের যেকোনো অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে তেহরান।

আরও পড়ুনইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি এখন কোথায়২৬ জুন ২০২৫আরও পড়ুনআমরা খামেনিকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম: ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী২০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

কাঠগড়ায় কাঁদলেন এনবিআরের সেই মতিউর, আদালত বললেন, ‘দুদকের জালে এখন হাজার মতিউর’

গত বছরের কোরবানি ঈদের আগে ছেলের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর গ্রেপ্তার এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমানকে আজ আদালতে দেখা গেল ভিন্ন রূপে।

আসামির কাঠগড়ায় একটি বেঞ্চে তিনি বসে ছিলেন। মুখে তাঁর লম্বা দাড়ি। মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকা। মতিউর যে বেঞ্চে বসে ছিলেন, সেই বেঞ্চের এক প্রান্তে বসেছিলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ। সময় তখন বেলা ১২টা ১০ মিনিট।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন তখন এজলাসে। তিনি দৈনন্দিন মামলার শুনানি গ্রহণ করছিলেন। আদালত কক্ষে দেখা যায়, মতিউর ও লায়লা মৃদু স্বরে নিজেরা কথা বলতে থাকেন। এর ২৩ মিনিট পর মতিউর রহমানদের দুর্নীতির মামলার শুনানি শুরু হয়।

শুরুতে মতিউরের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার মক্কেল মতিউর এবং তাঁর স্ত্রী কয়েক মাস ধরে কারাগারে আছেন। তাঁরা ষড়যন্ত্রের শিকার। জামিন দিলে পলাতক হবেন না।’

আইনজীবীর বক্তব্যের পর মতিউর রহমান নিজেই আদালতে কথা বলার অনুমতি চান। এক পর্যায়ে মতিউর রহমানের আইনজীবীও মতিউরকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে মৌখিক আবেদন করেন।

আদালত অনুমতি দেওয়ার পর মতিউর আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করেন। মতিউর আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছি। সেই চিঠিতে আমি জানিয়েছি, কীভাবে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’

মতিউর রহমানের এই বক্তব্যের পর আদালত বলেন, ‘যখন এটি আদালতে জমা দেওয়া হবে, তখন আমি পড়ব।’

এ সময় মতিউর রহমান তাঁর হাতে থাকা একটি চিঠি আদালতে জমা দেন।

আদালতের কাছে চিঠিটি জমা দেওয়ার পর মতিউর আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, কাস্টমস কর্মকর্তা থাকাকালে একজন সামরিক কর্মকর্তার রোষানলে আমি পড়ি। সেই কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড নিয়ে নিয়ে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়েছে।’

হাজতখানা থেকে বের করে আদালতে নেওয়া হচ্ছে এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত চত্বরে

সম্পর্কিত নিবন্ধ