তেহরানে কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের জানাজা মানুষের ঢল
Published: 29th, June 2025 GMT
ইরানে ইসরায়েলের হামলায় নিহত শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী ও কিছু বেসামরিকের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানী তেহরানে রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যানুষ্ঠানে নিহতদের শেষ বিদায় জানাতে মানুষের ঢল নামে। কালো পোশাক পরে তারা শোক মিছিল ও জানাজায় অংশ নেন।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, যাদের জানাজা হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন বিজ্ঞানী ও ১০ জন জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার আছেন। সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার জেনারেল হোসেইন সালামি এবং রেভল্যুশনারি গার্ডের বিমানবাহিনী প্রধান জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ রয়েছেন। ‘শক্তির শহীদদের মিছিল’ নামের এই শেষকৃত্য যুদ্ধে নিহত ৬০ জনের জন্য অনুষ্ঠিত হয়, তাদের মধ্যে চার নারী ও চার শিশু ছিলেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, তাদের কফিনগুলো গাড়িতে করে তেহরানের আজাদি স্কয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়। কফিনগুলো ছবি ও জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো ছিল। জানাজায় যোগ দিতে আসা কিছু মানুষ কফিনগুলো ছুঁয়ে তাদের আবেগ প্রকাশ করছিলেন ও গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালিত প্রেস টিভিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের একটি ছবিও দেখানো হয়েছে। পরে আজাদি স্কয়ারে নিহতদের জন্য দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
শোক মিছিলে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ মানুষ কালো পোশাক পরা ছিলেন; তাদের হাতে ছিল ফুল এবং প্রিয় নেতাদের ছবি, প্ল্যাকার্ড। এ সময় তারা ‘আমেরিকার মৃত্যু’ ও ‘ইসরায়েলের মৃত্যু’ স্লোগান দিচ্ছিলেন।
জানাজায় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অন্যতম উপদেষ্টা আলি শামখানি, খামেনির ছেলে মোজতাবাসহ অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ইসরায়েলি হামলায় শামখানি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। জানাজায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচিও উপস্থিত ছিলেন। নিহতদের শেষ বিদায় উপলক্ষে আরাগচি টেলিগ্রাম পোস্টে একটি বিবৃতি দিলেও সর্বোচ্চ নেতা খামেনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বিবৃতি দেননি। এর আগে বিভিন্ন হামলায় নিহত ইরানের জ্যেষ্ঠ কমান্ডারদের জানাজায় খামেনিই ইমামতি করেছিলেন।
১৩ জুন ইসরায়েলের প্রথম হামলায়ই শীর্ষ সামরিক কমান্ডার বাঘেরি, সালামি ও হাজিজাদেহ নিহত হন। বাঘেরিকে শনিবার তেহরানের নিকটবর্তী বেহেশত জাহরা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সালামি ও হাজিজাদেহকে রোববার দাফন করা হবে।
গত ১৩ জুন ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইরানের বিভিন্ন সামরিক অবকাঠামো, পারমাণবিক স্থাপনা ও আবাসিক এলাকায় এসব হামলা হয়। পাল্টা জবাব হিসেবে ইরানও হামলা চালায় ইসরায়েলে। দুই দেশের মধ্যে এ সংঘাত টানা ১২ দিন ধরে চলে। এক পর্যায়ে ইসরায়েলের পক্ষে এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রও। পরে ২৪ জুন দু’দেশ একটি যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হয়।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ইরানে ৬১০ জন নিহত এবং ৪ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন। নিহতদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী ও বেসামরিক নাগরিকরা রয়েছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এনবিআরে দ্বিতীয় দিনের মতো শাটডাউন শুরু
দ্বিতীয় দিনের মতো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) শাটডাউন কর্মসূচি চলছে। গতকাল শনিবার এনবিআরসহ দেশের সব শুল্ক-কর কার্যালয়ে দিনভর পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হয়। আজ রোববারও রাজধানীসহ সারা দেশে এই কর্মসূচি চলছে।
তবে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি গতকালের তুলনায় কম দেখা গেছে। প্রধান ফটকে প্রবেশেও শিথিলতা দেখা গেছে। পরিচয়পত্র দেখিয়ে কর্মকর্তারা ভবনে প্রবেশ করতে পারছেন।
এদিকে র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা গতকালের মতো আজ অবস্থান নিলেও তাঁদের সংখ্যা কম। গতকাল কেউ ভেতরে প্রবেশ না করলেও আজ প্রধান ফটকের ভেতরের বটতলায় কর্মকর্তাদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সকাল ১০টা পর্যন্ত কর্মকর্তাদের প্রবেশের সুযোগ দিতে বলা হয়েছে। তাঁদের অফিস সময় সকাল ৯টায়। এখনো কেউ কেউ আসছেন। পরিচয়পত্র দেখে প্রবেশ করতে দিচ্ছি।’
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কর্মকর্তারা আন্দোলনে যোগ দেবেন। গতকালও বিভিন্ন শুল্ক-কর কার্যালয় থেকে মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল বন্দর, ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কাজ হয়নি। ফলে এসব স্টেশন থেকে শুল্ক-কর আদায় কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
পরিচয়পত্র দেখিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ করছেন এনবিআরের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।