একটা ফুটবল ম্যাচ শেষ হতে লাগে ৯০ মিনিট। মাঝের বিরতি এবং প্রথমার্ধ ও দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা বাড়তি মিনিট মিলিয়ে দুই ঘণ্টার মতো সময়ও লাগে। তবে গতকাল রাতে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে চেলসি-বেনফিকার শেষ ষোলোর ম্যাচ শেষ হতে লেগেছে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা।

দীর্ঘ সময় নেওয়া এই ম্যাচে বেনফিকাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে চেলসি। ম্যাচে চেলসির হয়ে গোল করেছেন রিস জেমস, ক্রিস্তোফার এনকুকু, পেদ্রো নেতো ও কিয়ারনান ডেওসবারি-হল। বেনফিকার হয়ে একমাত্র গোলটি বিদায়ী ম্যাচ খেলতে নামা আনহেল দি মারিয়ার।

যুক্তরাষ্ট্রের শার্লটের ব্যাংক অব আমেরিকা স্টেডিয়ামে হওয়া ম্যাচটির দীর্ঘ সময় লাগার কারণ ঝড় ও বজ্রপাত। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে ঝড় ও বজ্রপাতের শঙ্কায় খেলা বন্ধ করেন দেন রেফারি স্লাভকো ভিনিচ। ওই সময় ৬৪ মিনিটে রিস জেমসের দেওয়া গোলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়েছিল চেলসি।

ম্যাচের ফল প্রায় নিশ্চিত, খেলাও বাকি মাত্র ৪ মিনিট—এমনটা ভেবে গ্যালারিতে থাকা ২৫,৯২৯ দর্শকের অনেকে মাঠ ছেড়ে যান। স্টেডিয়াম এলাকায় বজ্রপাত না হলেও আশপাশের অঞ্চলে আবহাওয়া প্রতিকূল ছিল বলে রেফারি খেলা শুরু করতে দেরি করেন। শেষ পর্যন্ত দুই দলের খেলোয়াড়েরা যখন আবার মাঠে ফেরেন, ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে প্রায় ২ ঘণ্টা।

দীর্ঘ বিরতির পর খেলা শুরু হলে এবার দেখা দেয় নতুন নাটকীয়তা। ৯২তম মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় বেনফিকার জিয়ানলুকা প্রেসতিয়ান্নিকে। এরপর যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে বেনফিকা পেনাল্টি পেয়ে গেলে তা কাজে লাগিয়ে গোল করে ফেলেন দি মারিয়া। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয় ১-১ সমতায়।

এরই মধ্যে কিক–অফ বাঁশির পর থেকে পেরিয়ে গেছে চার ঘণ্টার মতো। নকআউট পর্বের ম্যাচ হওয়ায় ফলের জন্য ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত আধা ঘণ্টায়। এই অংশের প্রথম মিনিটে দুই দলই ছিল গোলহীন। তবে বিরতির পরের ১৫ মিনিটে আট মিনিটের মধ্যে টানা তিন গোল করে চেলসি। ১০৮ মিনিটে এনকুকু, ১১৪ মিনিতে নেতো আর ১১৭ মিনিটে ডেওসবারি-হল।

বড় ব্যবধানে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেও ম্যাচে দীর্ঘ সময় বিরতি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন চেলসি কোচ এনজো মারেসকা। এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে বেনফিকা-চেলসি ম্যাচ নিয়ে সপ্তমবার আবহাওয়ার কারণে ম্যাচ স্থগিত হয়েছে। বিষয়টি তুলে ধরে মারেসকা ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে বলেন আয়োজক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র উপযোগী কি না, এমন প্রশ্নও তুলেছেন, ‘এই নিয়ে ৭, ৮ কি ৯ বার ম্যাচ স্থগিত হলো। সত্যি বলতে, এটা একটা তামাশা। ফুটবল নয়। (এত লম্বা সময়) ভেতরে থাকা যায় না। এটা আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা, যেটার কারণ আমি ঠিকঠাক বুঝতে পারছি না। নিরাপত্তার কারণে ম্যাচ স্থগিত হতে পারে। কিন্তু আপনাকে যখন সাত-আটবার স্থগিত করতে হয়, তখন বলতে হবে এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য এটি সঠিক জায়গা নয়।’

আগামী বছর ৪৮ দলের বিশ্বকাপে অন্যতম আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। ক্লাব বিশ্বকাপে যেভাবে আবহাওয়ার কারণে ম্যাচ স্থগিত করতে হচ্ছে, তাতে বিশ্বকাপ নিয়ে শঙ্কাও জানিয়ে রাখলেন চেলসি কোচ, ‘ম্যাচ স্থগিত করা স্বাভাবিক বিষয় নয়। একটা বিশ্বকাপে কতবার ম্যাচ স্থগিত হয়েছে? সম্ভবত একবারও নয়। ইউরোপে কতবার? একবারও নয়। আমরা এখানে দুই সপ্তাহের মধ্যে ছয়-সাতবার দেখলাম। ব্যক্তি হিসেবে বলব, এখানে কিছু সমস্যা আছে।’

ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসির প্রতিপক্ষ ব্রাজিলের পালমেইরাস, যারা গতকাল রাতেই স্বদেশি ক্লাব বোতাফোগোকে হারিয়েছে ১-০ ব্যবধানে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ল ব ব শ বক প

এছাড়াও পড়ুন:

আরবের অনেক দেশ ভারতের অন্তর্ভূক্ত ছিল, তারপর…

দ্য টাইমসের সংবাদদাতা ডেভিড হোল্ডেন এর লেখা থেকে জানা যায়, এক সময় আরবের অনেক দেশ ভারতের অন্তর্ভূক্ত ছিল। এইতো বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আরব উপদ্বীপের এক-তৃতীয়াংশই ব্রিটিশ ভারত সাম্রাজ্যের শাসনাধীন ছিল। অ্যাডেন থেকে কুয়েত পর্যন্ত ছিল একাধিক 'প্রোটেক্টরেট'। 

এগুলো দিল্লি থেকে শাসন করা হতো। জয়পুরের মতো আধা-স্বাধীন ভারতীয় রাজ্যগুলোর যে বর্ণানুক্রমিক তালিকা ছিল, তার মধ্যে প্রথমেই আসে আবু ধাবির নাম। লর্ড কার্জন যখন বড়লাট ছিলেন, সেই সময়ে তো তিনি উপদেশ দিয়েছিলেন, ‘‘কেলাত প্রদেশ (বর্তমানের বালোচিস্তান) বা লুস বেলার মতো ওমানকে ভারতীয় সাম্রাজ্যের একটি দেশীয় প্রদেশ হিসাবে গণ্য করা হোক।’’

অ্যাডেন তখন ছিল ভারতের পশ্চিম প্রান্তের শেষ বন্দর। বোম্বে প্রদেশের অধীন ছিল এই বন্দর শহর। ১৯৩১ সালে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী যখন ওই শহরে গিয়েছিলেন। 

আরো পড়ুন:

ইউরোপীয় গুপ্তচর যেভাবে মক্কায় ঢুকেছিলেন

পবিত্র হজের আনুষ্ঠা‌নিকতা শুরু, মিনায় হাজিরা

সেখানে অনেক তরুণ আরব নিজেদের ভারতীয় জাতীয়তাবাদী হিসাবে পরিচয় দিতেন।যুক্তরাজ্য বা ভারতের জনসাধারণের মধ্যে খুব কম মানুষই তখন জানতেন যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আরব অঞ্চলেও বিস্তার লাভ করেছিল।

ভারতীয় সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ মানচিত্র প্রকাশ করা হতো না। মূল মানচিত্র খুব গোপনে প্রকাশ করা হত। প্রথমের দিকে তুরস্ক আর পরে সৌদি আরব যাতে কোনো রকম ইন্ধন না পেয়ে যায়, সেজন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হতো। এ ছাড়া আরব এলাকাগুলোর ব্যাপারে কোনো নথিও জনসমক্ষে আনা হত না।

'র‍য়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি'র এক ভাষণে একজন বলেছিলেন, ‘‘একজন ইর্ষাকাতর শিখ যেমন তার প্রিয় পত্নীকে পর্দার আড়াল করে রাখেন, তেমনই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাজকর্ম এতটাই রহস্যে মোড়া ছিল যে কেউ যদি দুরভিসন্ধি নিয়ে এমন কিছু প্রচার করার চেষ্টা করত যে ওখানে ভয়াবহ কিছু একটা হচ্ছে, তার কথা বিশ্বাস করানো কঠিন হত।’’

ব্রিটিশ শাসকেরা মূলত তুর্কি এবং সৌদির চোখে ধুলা দেওয়ার জন্য এই গোপনীয়তা রক্ষা করতো। তবে ভারতের এই বিশাল সম্রাজ্য ভেঙে পড়ে ১৯৪৭ সালে। তার আগেই ১৯২০ নাগাদ রাজনীতি বদলাতে শুরু করে। ভারতের জাতীয়তাবাদীরা তাদের দেশটিকে সাম্রাজ্যবাদীদের গড়া কোনো দেশ নয়, বরং মহাভারতে যে ভৌগলিক অবস্থানের কথা বলা হয়েছে, তার ওপরে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটা সাংস্কৃতিক পরিসরের কল্পনা করতে শুরু করেছিলেন। লন্ডনও দেখল যে সীমানা নতুন করে আঁকার সুযোগ এসেছে। অ্যাডেনকে ১৯৩৭ সালের পয়লা এপ্রিল ভারতের থেকে পৃথক করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিভক্তি। এর পর বেশ কয়েকটি বিভক্তি।

ব্রিটিশ রাজ ভেঙ্গে ভারত আর পাকিস্তানের স্বাধীনতার মাত্রই কয়েক মাস আগে, পয়লা এপ্রিল ১৯৪৭ সালে দুবাই থেকে শুরু করে কুয়েত পর্যন্ত উপসাগরীয় রাজ্যগুলো অবশেষে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।

আরও সময় পরে, যখন ভারতীয় আর পাকিস্তানী কর্মকর্তারা কয়েকশো দেশীয় রাজ্যকে তাদের সদ্য গঠিত নিজ নিজ রাষ্ট্রে সংযুক্ত করার কাজ শুরু করছেন, তখন কিন্তু সেই তালিকায় উপসাগরীয় রাজ্যগুলো আর নেই। খুব কম মানুষই বিস্মিত হয়েছিলেন এবং ৭৫ বছর পরেও যে ভারত অথবা উপসাগরীয় অঞ্চলে ওই ঘটনার গুরুত্ব সম্পূর্ণভাবে অনুধাবন করা গেছে, তা নয়।

সূত্র: বিবিসি

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ