বুয়েট গ্র্যাজুয়েটস ক্লাবের সদস্যদের জন্য সম্প্রতি মাস্টারকার্ডের একটি কো-ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ড চালু করেছে ঢাকা ব্যাংক। এই কার্ডে আজীবন বার্ষিক ফি মওকুফ থাকবে। সেই সঙ্গে রয়েছে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বলাকা এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জে বিনা মূল্যে প্রবেশাধিকারের সুযোগ। এ ছাড়া ১২০টি দেশের ১ হাজা ৬০০টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের লাউঞ্জ ব্যবহার করা যাবে। এর ওপর পিক-অ্যান্ড-ড্রপ ও মিট-অ্যান্ড-গ্রিট সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন কার্ডধারীরা।

ঢাকা ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এই কার্ডধারীরা বুয়েট গ্র্যাজুয়েটস ক্লাব লিমিটেডের রেস্টুরেন্টে ১২ শতাংশ ক্যাশব্যাক এবং ফাইভ স্টার হোটেলে ‘১টি কিনলে ১টি ফ্রি’ পাবেন। শপিংপ্রেমীদের জন্য মাস্টারকার্ডের ৯ হাজারের বেশি মার্চেন্ট পার্টনার দোকানে আকর্ষণীয় অফার ও মূল্যছাড় রয়েছে।

কার্ডটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শেখ মোহাম্মদ মারুফ, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, বুয়েট গ্র্যাজুয়েটস ক্লাবের সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুবসহ তিন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও শেখ মোহাম্মদ মারুফ জানান, তাঁর ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের মানসম্মত ও উদ্ভাবনী আর্থিক সমাধান প্রদানের চেষ্টা করে। এই কো-ব্র্যান্ডেড কার্ড সেই প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন, যা বিশেষ শ্রেণির গ্রাহকদের জন্য প্রিমিয়াম সুবিধার সঙ্গে বাস্তবিক চাহিদার সমন্বয় ঘটাবে।

বুয়েট গ্র্যাজুয়েটস ক্লাবের সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব বলেন, ‘এই কার্ড চালু আমাদের সদস্যদের চাহিদা পূরণের প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি এমন একটি বিশেষায়িত আর্থিক সমাধান, যা তাঁদের মর্যাদা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘ঢাকা ব্যাংক ও বুয়েট গ্র্যাজুয়েটস ক্লাবের সঙ্গে এই নতুন ক্রেডিট কার্ডের অংশীদার হতে পেরে মাস্টারকার্ড গর্বিত। এই সহযোগিতা মাস্টারকার্ডের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে, যা বাংলাদেশে কার্ডহোল্ডারদের জন্য উদ্ভাবনী আর্থিক পণ্য ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের স্বপ্ন ও আগ্রহ পূরণে সহায়তা করে।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কার্ডহোল্ডারদের লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও আর্থিক অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেবে নতুন এই ওয়ার্ল্ড মাস্টারকার্ড ক্রেডিট কার্ড। এই কার্ডধারীরা ঢাকা ব্যাংকের কুইনটুপল ক্রেডিট শিল্ড প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এই প্রোগ্রাম কার্ডহোল্ডারদের আর্থিক সুরক্ষা ও নমনীয়তা নিশ্চিত করে, যেখানে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিমাসুবিধা এবং বড় ধরনের কেনাকাটার জন্য দুই বছর পর্যন্ত অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই ইএমআই সুবিধা মিলবে। এ ছাড়া মাস্টারকার্ড ব্র্যান্ডের কার্ডহোল্ডাররা কোনো ইস্যু ফি বা বার্ষিক ফি ছাড়াই তিনটি সাপ্লিমেন্টারি ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম স ট রক র ড র টস ক ল ব র এই ক র ড দ র জন য ম হ ম মদ আর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েল-তুরস্কের বিরোধে সিরিয়া কি ভাগ হয়ে যাবে

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটের দিকে নজর দিলে মনে হতে পারে, ইসরায়েলের কৌশলগত অবস্থান আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। একই কথা বলা যায় তুরস্কের ক্ষেত্রেও। প্রশ্ন হচ্ছে, এ পরিস্থিতি কি স্থিতিশীলতার ভিত্তি তৈরি করে দিচ্ছে, নাকি সামনে আরও বড় বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে?

গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরান—বেশ কয়েকটি জায়গায় সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেও ইসরায়েল এ মুহূর্তে এগিয়ে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অন্যদিকে ইরানের নেতৃত্বাধীন ‘প্রতিরোধ অক্ষকে’ বিশৃঙ্খল বলে মনে হচ্ছে। অন্যদিকে এখন সিরিয়া শাসন করছেন আল-কায়েদার সাবেক নেতা। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো তাঁর ভাবমূর্তি অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ‘পরিষ্কার’ করে নিয়েছে। আইএস ও হায়াত তাহরির আল-শামের মতো উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েক দশকের অবস্থান কয়েক দিনের মধ্যে আবর্জনার স্তূপে ছুড়ে ফেলা হয়, যেটা পশ্চিমাদের দ্বিচারিতাকে আরও পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে।

আরও পড়ুনতুরস্ক যে কারণে নিজেদের ইসরায়েলের চূড়ান্ত টার্গেট মনে করছে ০২ আগস্ট ২০২৫ইসরায়েলের পাশাপাশি তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ আঞ্চলিক ক্রীড়নক। ফলে অত্যন্ত অস্থির মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আনতে গেলে অনিবার্যভাবেই তুরস্ক ও ইসরায়েলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর দুটি দেশই মার্কিন চাপ উপেক্ষা করতে প্রস্তুত, যেটা অধিকাংশ মিত্রদেশের কল্পনারও বাইরে। তুরস্কে অবশ্য ওয়াশিংটনের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর সংশয় রয়েছে। আঙ্কারার বিশ্বাস, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা ইসরায়েলকেই অগ্রাধিকার দেবে।

তুরস্কে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সম্প্রতি দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের প্রধান নিরাপত্তা হুমকি কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পিকেকে) নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়েছেন। তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়া থেকে বাশার আল-আসাদকে সরাতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়েছে। তাঁর জায়গায় এসেছেন আহমেদ আল-শারা। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজেদের ভাবমূর্তি আরও মজবুত করেছে আঙ্কারা।

ইসরায়েলের পাশাপাশি তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ আঞ্চলিক ক্রীড়নক। ফলে অত্যন্ত অস্থির মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আনতে গেলে অনিবার্যভাবেই তুরস্ক ও ইসরায়েলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর দুটি দেশই মার্কিন চাপ উপেক্ষা করতে প্রস্তুত, যেটা অধিকাংশ মিত্রদেশের কল্পনারও বাইরে। তুরস্কে অবশ্য ওয়াশিংটনের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর সংশয় রয়েছে। আঙ্কারার বিশ্বাস, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা ইসরায়েলকেই অগ্রাধিকার দেবে।

আরও পড়ুনইসরায়েলের সিরিয়া আক্রমণ যেভাবে বুমেরাং হচ্ছে২৩ জুলাই ২০২৫

এ সমীকরণে সিরিয়া বড় একটা পরীক্ষার ময়দান হতে পারে। গত মাসে দক্ষিণ সিরিয়ায় দ্রুজ ও বেদুইন সম্প্রদায়ের সংঘর্ষের মধ্যে ইসরায়েল সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর অবস্থানে বিমান হামলা চালায়। যদিও ইসরায়েল বলেছে, এর লক্ষ্য দ্রুজদের রক্ষা করা। আসল উদ্দেশ্য মনে হচ্ছে দামেস্কের দক্ষিণাঞ্চলকে নিরস্ত্র করে নিজেদের ‘নিরপেক্ষ অঞ্চল’ বাড়ানো।

এর বাইরে আসাদের পতনের পরপরই ইসরায়েল কোনো উসকানি ছাড়াই একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেয়। পশ্চিমা দেশগুলো সে সময় স্বাভাবিকভাবেই নীরবতা বজায় রেখেছিল।

সৌদি আরব, কাতার, তুরস্কসহ কয়েকটি আঞ্চলিক দেশ সিরিয়ার ঐক্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান সতর্ক করেছেন, দ্রুজরা (যাদের আঙ্কারা ইসরায়েলের সহযোগী মনে করে) যদি সিরিয়াকে বিভক্ত বা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, তবে তুরস্ক হস্তক্ষেপ করতে পারে।

আরও পড়ুন২৫০০ বছরের পুরোনো দুশমনি: ইসরায়েল কি ‘মরদখাই’? ইরান কি ‘হামান’?১৭ জুন ২০২৫

এমন জল্পনাও রয়েছে যে ইসরায়েল ১৯৭৪ সালে সিরিয়ার সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করে নতুন নিরাপত্তা চুক্তি করতে চায়। এর মাধ্যমে ইসরায়েল গোলান মালভূমিতে অন্তর্বর্তীকালীন পাঁচ বছরের জন্য অবস্থান করতে চায়। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলে, ইসরায়েল সহজেই এসব ‘অস্থায়ী’ ব্যবস্থাকে স্থায়ী ব্যবস্থায় পরিণত করে। সেটা যেমন দামেস্কের জন্য উদ্বেগজনক, আবার আঙ্কারার জন্যও।

এদিকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সাম্প্রতিক দ্রুজ দমন অভিযান কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। গোষ্ঠীটি আশঙ্কা করছে, পরের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে তারা। যদিও এখন পর্যন্ত মার্কিন সুরক্ষা গোষ্ঠীটি তাদের পাশে রয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে তুরস্ক শারার পক্ষে দাঁড়াতে প্রস্তুত বলে মনে হয় না। আবার ইসরায়েলের সঙ্গে প্রভাবক্ষেত্র ভাগাভাগি নিয়ে আপস করতেও তারা রাজি হবে কি না, সেটাও অনিশ্চিত।

আরও পড়ুনসিরিয়া ও কুর্দিদের নিয়ে তুরস্ক আসলে কী করতে চায়২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

এ বাস্তবতায় আমরা একটা কাল্পনিক ভাগাভাগির কথা চিন্তা করতে পারি। দামেস্কের উপকণ্ঠ পর্যন্ত সিরিয়ার দক্ষিণাংশ ইসরায়েলের প্রভাবে চলে যেতে পারে। আর ইউফ্রেতিসের পূর্ব দিকে এসডিএফের প্রধান ঘাঁটি এলাকা ছাড়া বাকি অংশ তুরস্কের প্রভাবে চলে যাবে। এ অবস্থায় এসডিএফ মার্কিন সমর্থনের ওপর ভরসা রাখবে, যা তুর্কি হামলার বিরুদ্ধে একধরনের ঢাল হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে তা কীভাবে কার্যকর হবে, সেটাই প্রশ্ন।

এ অঞ্চলে শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির বড় পরীক্ষা আসতে পারে। ওয়াশিংটন সম্ভবত একটি সমন্বিত কৌশলের দিকে এগোচ্ছে।

ওয়াশিংটনের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে তুরস্কের সংশয় অবশ্যই আগের মতোই গভীর। আঙ্কারার বিশ্বাস, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা ইসরায়েলকেই অগ্রাধিকার দেবে। কিন্তু ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্র কি পারবে মধ্যপ্রাচ্যে তার দুই আঞ্চলিক মিত্রকে গভীরভাবে বিভক্ত সিরিয়ায় নিজ নিজ প্রভাববলয় তৈরির প্রতিযোগিতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে? কেননা যেকোনো সময়ই এ বিভাজন আরেকটি বড় সংঘাতের স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দিতে পারে।

মার্কো কার্নোলোস ইতালির সাবেক কূটনীতিক। তিনি সোমালিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও জাতিসংঘে দায়িত্ব পালন করেছেন

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

আরও পড়ুনইসরায়েল এখন শেষ সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো১২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ