ধারের টাকার খোঁজ নিতে এসে খালি বাড়ি পেয়ে কুমিল্লার মুরাদনগরে ফজর আলী নামের এক ব্যক্তি ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী নারী (২৫) ও তাঁর স্বজনদের। ওই নারী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ফজরের টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলা আছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ফজর বাড়িতে গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। তিনি খুলতে না চাইলে ফজর টিনের ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করেন।

ভুক্তভোগী নারী প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি টের পেয়ে আশপাশ থেকে লোকজন এসে ফজর আলীকে পেটাতে থাকেন। এ সময় তাঁকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করা হয়। পুলিশ যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাঁরাই তাঁকে মারধর করেছেন। তাঁদের লোকজনই সেই ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছেন।

আরও পড়ুনমুরাদনগরে দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা১৮ ঘণ্টা আগে

সনাতন ধর্মাবলম্বী ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চার হাজার টাকা সুদের বিনিময়ে এক মাসের জন্য তাঁরা ফজর আলীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেন। কয়েক দিন আগে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার সময় ছিল; কিন্তু তাঁরা টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। ফজরের কাছে আরও কয়েক দিন সময় চান; কিন্তু তিনি তা না দিয়ে হুমকি দিতে থাকেন। বৃহস্পতিবার রাতে সেই টাকার সূত্র ধরে বাড়িতে এসে তাঁর বোনকে ধর্ষণ করেন ফজর।

ভুক্তভোগীর ভাই বলেন, ঘটনার সময় বাড়িতে তাঁদের মা–বাবা ছিলেন না। তাঁরা সাপ্তাহিক একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। তিনি (ভাই) নিজে পাশের উপজেলা তিতাসে ছিলেন। সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বাড়িতে তাঁর বোন, বোনের ছোট দুই ছেলেমেয়ে ছিল। তারা ঘুমিয়ে ছিল।

বোনের বিবস্ত্র অবস্থার ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে ওই নারীর ভাইয়ের ভাষ্য, ভাই শাহ পরানের সঙ্গে ফজর আলীর বিরোধ আছে। সেই বিরোধের জের ধরে শাহ পরানই ঘটনার সময় তাঁদের বাড়িতে লোকজন পাঠান। তাঁরাই তাঁর বোনকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করে সেই ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) এ কে এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই অনেকেই বিষয়টি পরকীয়া বলে প্রচার করছেন। তবে আমাদের প্রাথমিক তদন্তে এমন কোনো তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রকৃত অর্থেই ওই নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বুঝেছি, তিনি সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছেন কি না, সেটিও আমরা তদন্ত করে দেখছি।’

ওই নারীর একজন প্রতিবেশীর ভাষ্য, বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। তিনি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে লোকজন ডেকে আনেন। লোকজন গিয়ে দেখেন, দরজা ভাঙা। পরে তাঁরা ওই নারীকে উদ্ধার করেন। এ সময় কিছু লোক ওই নারীকে মারধর এবং ওই অবস্থায় ভিডিও করেন। পরে যখন সবাই বুঝতে পারেন ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, তখন সবাই ফজর আলীকে পেটাতে থাকেন।

দুই মামলা ও গ্রেপ্তার ৫

ফজর আলীকে আসামি করে গত শুক্রবার মুরাদনগর থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ওই নারী। এ ছাড়া আজ রোববার তিনি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করেন। ওই মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আরও পড়ুনমুরাদনগরে দরজা ভেঙে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ৫১০ ঘণ্টা আগে

ওসি জানান, ফজর আলীকে (৩৮) আজ ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় সময় বেধড়ক পিটিয়ে তাঁর হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন কুমিল্লা জেলা পুলিশ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র অবস্থায় নির্যাতন করে ৫১ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই চারজন হলেন মোহাম্মদ আলী ওরফে সুমন, রমজান আলী, মো.

আরিফ ও মো. অনিক। তাঁদের আজ বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ আলী নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ওয়ার্ড কমিটির সাবেক নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বলেন, ফজর আলীকে পেটানোর পর তাঁর পরিবারের লোকজন ও স্বজনেরা তাঁকে কুমিল্লা শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। মামলা হওয়ার খবর শোনার পর তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ তাঁকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আবদুর রব প্রথম আলোকে বলেন, ফজর আলী এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। তিনি এলাকায় জুয়ার আসর বসিয়ে অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করেছেন। ১৫ বছর ধরে ফজর নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিতেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি নিজেকে বিএনপির লোক বলে পরিচয় দিতে শুরু করেন। তবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোনো কমিটিতে তাঁর পদ নেই।

আতঙ্কের ছাপ চোখেমুখে

মুরাদনগর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিতাস নদীর পারে ওই নারীর বাবার বাড়ি। তাঁর বাবা নদীতে মাছ ধরে পরিবারের ভরণপোষণ করেন। ঘটনার পর থেকে পুরো পরিবার উদ্বেগ আর আতঙ্কে আছে। নির্যাতিত নারীর চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। তবে এটাও বলেন, তাঁর প্রবাসী স্বামী কোনো ঝামেলা চান না। তিনি মামলা তুলে নিতে বলছেন। অন্য কেউ তাঁকে মামলা তুলে নিতে বলছেন না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর প রথম আল ক ম র দনগর ওই ন র র অবস থ য় ন র পর র আল ক পর ব র ম রধর ল কজন ঘটন র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

মুরাদনগরে ধর্ষণ: হঠাৎ কেন মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ভুক্তভোগীর

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার এক গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী। গত শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুরে ওই নারী বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় মামলা করেন।

রবিবার (২৯ জুন) সকাল ১১টায় সাংবাদিকদের ওই নারী মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এতে তিনি বলেন, “আমি নিজেই মামলা করেছি। কেউ চাপ দেয়নি। এখন আমি মামলা তুলে নিচ্ছি। কারণ আমার স্বামী আমাকে গ্রহণ করছেন না। আমার সঙ্গে কথা বলছেন না। ফোনও ধরছেন না।” ওই নারীর স্বামী দুবাই প্রবাসী।

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি বিচার চাই না। আমি শান্তি চাই না। গ্রেপ্তার সবাই মুক্তি পাক।’’

আরো পড়ুন:

ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্তকে গণপিটুনি, হাসপাতালে মৃত্যু

উখিয়ায় বাসের ধাক্কায় মাদ্রাসাছাত্রী নিহত

ওই নারীকে নির্যাতন করার একটি ভিডিও শনিবার (২৮ জুন) রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নারী প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে মুরাদনগর উপজেলার বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে বাবার বাড়ির পাশে পূজা হচ্ছিল। পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি বাড়িতে একা ছিলেন। আনুমানিক ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামে এক ব্যক্তি তার বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন।

ওই নারীর পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। আমি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে আসি। লোকজন গিয়ে দেখেন দরজা ভাঙা। পরে আমরা ওই নারীকে উদ্ধার করি। এ সময় কিছু লোক তাকে মারধর ও ভিডিও করেন। পরে তারা বুঝতে পারেন ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তখন লোকজন ফজর আলীকে মারধর করেন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’’ ওই হাসপাতাল থেকে ফজর আলী পালিয়ে যান। 

এ মামলায় মূল অভিযুক্ত ফজর আলীসহ পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (২৯ জুন) ভোর ৫টার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদের মুরাদনগর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি চারজন হলেন, সুমন, রমজান, আরিফ ও অনিক। তারা নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার সকলের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলায়।

দুই দিনের ব্যবধানে হঠাৎ করে ভুক্তভোগী নারীর মামলা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাদের প্রতিবেশী কয়েকজন জানান, ভুক্তভোগী নারী ও মূল অভিযুক্তের মধ্যে আগে থেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তবে অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে ওই নারী বলেন, “ফজর আলীর সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না। ওর সঙ্গে শুধু টাকা-পয়সা নিয়ে কথা হতো। প্রয়োজনে ও আমাকে টাকা দিত, আমি ফিরিয়ে দিতাম।”

হঠাৎ করে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো চাপ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, তাকে কেউ ‘চাপ’ দেয়নি বা ‘অর্থের’ প্রলোভন দেখায়নি। 

মামলা দায়েরের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘জিদ থেকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আমি মামলা করেছিলাম।’’
 

ঢাকা/রুবেল/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল
  • মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ-নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি বাম গণতান্ত্রিক জোটের
  • কুমিল্লায় নারীকে ধর্ষণ-নিগ্রহের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় বাসদ
  • মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ-নিগ্রহের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের
  • মুরাদনগরে নারীকে নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে ছড়ানো ভিডিও সরানোর দাবি জানিয়েছে ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’
  • নিপীড়নের ভিডিও ছড়ানো আরেক দফা নির্যাতনের শামিল
  • চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড়ে বিক্ষোভ সমাবেশে দোষীদের বিচার দাবি
  • ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভিডিও দ্রুত অপসারণের নির্দেশ
  • মুরাদনগরে ধর্ষণ: হঠাৎ কেন মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ভুক্তভোগীর