বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আংশিক পিআর সিস্টেম (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি) চাই। বর্তমান ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে না। তাই ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধি নির্বাচনে আংশিক পিআর সিস্টেম নিম্নকক্ষে ও পূর্ণ পিআর সিস্টেম উচ্চকক্ষে চালু করা প্রয়োজন।’

আজ রোববার সকালে রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘১৫ বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যারা সবচেয়ে বেশি জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস অন্যতম। আমাদের প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দী ছিলেন। ফ্যাসিবাদী রেজিমের প্রধান শেখ হাসিনা আমাদের সংগঠন ও নেতৃত্বকে সরাসরি টার্গেট করেছিলেন।’

ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান জানিয়ে খেলাফতের এই নেতা বলেন, রাজপথে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক ঐক্যকে নস্যাৎ করা যাবে না। বর্তমানে যে রাজনৈতিক সমন্বয়ের ধারা চলছে, যেখানে কেউ কাউকে উৎখাত করছে না, দমন করছে না, এটা যেন বজায় থাকে। কেউ যদি আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে ফিরে গিয়ে দমন-উৎখাতের রাজনীতি করে, তাহলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবে এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ইসলাম ও দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে ৩০০ আসনেই রিকশা প্রতীকে নির্বাচন করবে। আবার বৃহত্তর জোট বা নির্বাচনী সমঝোতার মাধ্যমে ইসলাম ও দেশের স্বার্থ অধিকতর রক্ষা হলে সেদিকেও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবি, নির্বাচনী কাঠামোর যেসব বিষয় এখনো অমীমাংসিত, তা দ্রুত জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে। সংসদের দ্বিকক্ষীয় কাঠামোর বিষয়ে ঐকমত্য থাকলেও উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ কীভাবে গঠিত হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।’

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অভিভাবক পরিষদের সদস্য মাওলানা আকরাম আলী, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, মাওলানা আলী উসমান, মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মুফতি শরাফত হোসাইন, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী, মাওলানা শরিফ সাইদুর রহমান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ম ন ল হক

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে প্রজনন হার হঠাৎ বাড়ছে

বাংলাদেশ কি উল্টো পথে হাঁটছে? দেশের নারীদের মোট প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর) এখন ২ দশমিক ৪। বাংলাদেশ অনেক চেষ্টা করে প্রজনন হার কমিয়ে ২ দশমিক ১৭ করতে পেরেছিল। এখন আবার তা বাড়তে শুরু করেছে। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে এই উল্টো যাত্রা আগে কখনো দেখা যায়নি।

একজন নারী তাঁর প্রজনন বয়সে (১৫ থেকে ৪৯ বছর) যত সন্তানের জন্ম দেন, সেটাকে বলা হয় মোট প্রজনন। স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের নারীরা গড়ে ছয়টি বা তার বেশি সন্তানের জন্ম দিতেন। পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশ টিএফআর কমানোর চেষ্টা করেছে। অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের বড় অর্জনের একটি এই জন্মহার কমানো।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (মিকস) ২০২৫ প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ময়মনসিংহ বিভাগে প্রজনন হার সবচেয়ে বেশি, ২ দশমিক ৮। সবচেয়ে কম রাজশাহী বিভাগে, ২ দশমিক ২। সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের নারীদের মধ্যে এবং কম শিক্ষিত বা নিরক্ষর নারীদের মধ্যে টিএফআর বেশি।

টিএফআর বাড়ছে, এর অর্থ আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে না। এটা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের জনসংখ্যাবিষয়ক নীতি ও কর্মকৌশল সঠিক পথে নেই। এমনিতেই দেশে বেকারত্ব বেশি। টিএফআর বৃদ্ধি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারেজনসংখ্যাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে টিএফআর ছিল ৬ বা তার বেশি। মিকস ও অন্যান্য উৎসের তথ্য ব্যবহার করে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮২ সালে টিএফআর ছিল ৫ দশমিক শূন্য ৭। এরপর তা কমতে থাকে। ১৯৯৪ সালে টিএফআর কমে হয় ৩ দশমিক ৪। টিএফআর আরও কমতে থাকে, ২০০৪ সালে তা কমে হয় ৩। ২০১২ সালে ছিল ২ দশমিক ৩ এবং ২০২২ সালেও একই হার। ২০২৪ সালের দিকে তা ছিল ২ দশমিক ১৭ বা তার কাছাকাছি।

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে টিএফআর কখনো কমতে দেখা যায় না। হয় ক্রমাগত কমেছে, না হয় কয়েক বছর ধরে স্থির অবস্থায় ছিল। যেমন ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টিএফআর ৩ দশমিক ৩ ছিল। আবার ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টিএফআর ২ দশমিক ৩ ছিল। অর্থাৎ এক দশক ধরে টিএফআর স্থির ছিল। টিএফআর কেন কমছে না, তা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে।

টিএফআর কীভাবে কমেছিল

স্বাধীনতার পর জনসংখ্যাকে বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল অধিক জনসংখ্যা জাতীয় অর্থনীতির বাধা। সরকার জনসংখ্যা কমানোর নীতি গ্রহণ করে। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির ওপর জোর দেওয়া হয়। মানুষের হাতের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কর্মকৌশল দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা কর্মকাণ্ড চালু করা হয়। রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশন ও বেতার এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী ছাড়াও এনজিওরা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।

গত কয়েক দশকে সক্ষম দম্পতিদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বেড়েছে। মানুষ সহজে হাতের কাছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা দোকান থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কিনতে পারে। এর পাশাপাশি নারী শিক্ষার হার বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। এসব উপাদানও টিএফআর কমাতে সহায়তা করেছে।

১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টিএফআর ৩ দশমিক ৩ ছিল। আবার ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টিএফআর ২ দশমিক ৩ ছিল। অর্থাৎ এক দশক ধরে টিএফআর স্থির ছিল। টিএফআর কেন কমছে না, তা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশের উদ্দেশ্য ছিল টিএফআর ২ দশমিক ১–এ নিয়ে যাওয়া; তা হয়নি। টিএফআর বেড়ে যাওয়ার অর্থ জনসংখ্যার চাপ বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশ এমনিতেই জনবহুল দেশ। তারপরও জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি বেড়ে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি আছে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা ক্ষেত্রে।

জনসংখ্যাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিএফআর বাড়ছে, এর অর্থ আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে না। এটা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের জনসংখ্যাবিষয়ক নীতি ও কর্মকৌশল সঠিক পথে নেই। এমনিতেই দেশে বেকারত্ব বেশি। টিএফআর বৃদ্ধি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ